জুড়ীর কাস্টমস অফিস : লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির আখড়া যেখানে আটক গরুর দাম নিলামে কমে যায় কয়েকগুন

April 8, 2017,

আবদুর রব॥ জুড়ী কাস্টমস অফিসের রেভিনিউ কর্মকর্তারা কৌশলে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। বিজিবি’র আটক চোরাই গরু এখানে জমা দেয়ার পর নিলামে তা কমে যায় কয়েকগুন।
মার্চ মাসে বিজিবি প্রায় ১৫ লাখ টাকার চোরাই গরু আটক করে জমা দিলেও এ অফিসের আসাধু কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে মাত্র ৪ লাখ টাকায় গরুগুলো নিলাম করেছে।
৩ এপ্রিল বিজিবি প্রায় ২ লাখ টাকার ৬টি চোরাই গরু আটক করে জমা দিলে দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তারা গরুগুলো মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় নিলাম করেছেন। রাজস্ব ফাঁকির গোমর ফাঁসের আতংকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এ অফিসের রাজস্ব আয়ের কোন তথ্যই সাংবাদিকদের নিকট প্রকাশ করতে চায় না। রেভিনিউ কর্মকর্তারা অনেকটা ফ্রি স্টাইলে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করলেও রাজস্ব ফাঁকির এ মহোৎসব যেন দেখার কেউ নেই। এ প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মার্চ মাসে ৫২ ব্যাটেলিয়নের আওতাধীন বড়লেখার বোবারথল, বিওসি কেছরিগুল ও লাতু ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় ৮টি অভিযান চালিয়ে ৪০টি ভারতীয় চোরাই গরু উদ্ধার করে। বিজিবি গরুগুলোর বাজারমূল্য ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নির্ধারন করে জুড়ী কাষ্টমসে জমা দেয়। কিন্তু এ চোরাই গরু নিলামের সময় রেভিনিউ কর্মকর্তারা নিলামকারীদের সাথে সমঝোতা করে সিংহভাগ মূল্য নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে নামমাত্র টাকার চালান কেটে সরকারের কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সুত্র জানায়
৪ মার্চ রাতে সীমান্ত এলাকা থেকে ১১টি অবৈধ ভারতীয় গরু উদ্ধার করে বড়লেখা বিজিবি। বিজিবি জানায় গরুগুলোর সিজার মূল্য ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উৎকোচ নিয়ে জুড়ী কাস্টমস পরদিন গরুগুলো নিলামে মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এতে সরকারের কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ মার্চ বড়লেখার বিওসি ক্যাম্পের বিজিবি সীমান্ত থেকে ১টি চোরাই গরু আটক করে জুড়ী কাস্টমসে জমা দেয়। সিজার মূল্য ৭০,০০০ টাকা হলেও গত ৬ মার্চ কাষ্টমস কর্মকর্তারা ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে মাত্র ১৯ হাজার টাকায় এ গরু নিলাম দেখিয়ে চালান কেটে সরকারের অন্তত অর্ধলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।
১৪, ১৫ ও ১৬ মার্চ বড়লেখা বিজিবি পৃথক ৪ অভিযানে ১৫ চোরাই গরু উদ্ধার করে জুড়ী কাস্টমসে জমা দেয়। বিজিবি গরুগুলোর বাজারমূল্য ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্ত জুড়ী কাষ্টমস অফিসের রেভিনিউ কর্মকর্তা আবিদুর রহমান ও সহকারী রেভিনিউ কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন জনৈক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে বিরাট অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ১৬ মার্চ নিলামে গরুগুলো মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
৩ এপ্রিল বোবারথল বিজিবি ৬ চোরাই গরু আটক করে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে জুড়ী কাস্টমসে জমা দেয়। অর্ধলক্ষ টাকার ঘুষ লেন-দেনের মাধ্যমে এদিন কাস্টমস কর্মকর্তারা গরুগুলো মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় নিলাম দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র নিশ্চিত করেছে।
বিজিবি ৫২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল নেয়ামুল কবির জানান, মার্চ মাসে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার চোরাই গরু আটক করে জুড়ি কাস্টমসে জমা দেয়া হয়েছে। এ মাসের ৩ এপ্রিল আরো ২ লাখ টাকার ৬ চোরাই গরু জমা দেয়া হয়।
জুড়ী কাস্টমস অফিসের রাজস্ব আয় ও চোরাই গরু নিলামের তথ্য জানতে চাইলে রেভিনিউ কর্মকর্তা আবিদুর রহমান ও সহকারী রেভিনিউ কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে সিলেট বিভাগীয় রাজস্ব কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরটি জানতে চাইলে তাদের কাছে নেই বলে তারা ফোননম্বরও দেননি।
এব্যাপারে সিলেট কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আহমেদ রেজা চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, সাংবাদিকরা সরকারের রাজস্ব আয়ের তথ্য চাইলে তা সানন্দেই দেয়ার কথা। বর্তমানে তিনি অসুস্থতা জনিত ছুটিতে রয়েছেন। ছুটি শেষে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com