জেলা প্রশাসকের সরকারি ওয়েব সাইটে আজও সৈয়দ মহসীন আলী এমপি

February 13, 2017,

হোসাইন আহমদ॥ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের নিমিত্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার এ খাতকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বব্যাপী প্রয়োগ ও ব্যবহারে কারিগরি সহায়তা নিশ্চিতকরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা সমূহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো, অবকাঠামো নিরাপত্তা বিধান, রক্ষণাবেক্ষণ, বাস্তবায়ন, সম্প্রসারণ মান নিয়ন্ত্রণ ও কম্পিউটার পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১ জুলাই, ২০১৩ তারিখে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর’ গঠন করে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এম.পি ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় ইতি মধ্যে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর’ এর মাধ্যমে সরকারের প্রদয় সেবা সমূহ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছানোর জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন।
এতসব কিছুর পরেও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে রয়েছে শতাধিক ভুল। নেই কোন আপডেইট তথ্য। এমনকি সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী’র মৃত্যুর ৫শত ৪৩ দিন পর এখনও তিনি এমপি হিসেবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় রয়েছেন এবং ওয়েব সাইট ওপেন করলেই সাবেক ডিসি মোঃ কামরুল ইসলামের ছবি চলে আসে চোখের সামনে অথচ বর্তমান ডিসি মোঃ তোফায়েল ইসলাম। এনিয়ে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত জনগনের মধ্যে ধূর্মঝাল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রশ্ন জেলার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এরকম হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটের অবস্থা কেমন হবে?
প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যূষিত এ অঞ্চলের অধিকাংশ লোক দেশের বাহিরে অবস্থান করেন। বাড়ির বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং প্রশাসনের সহযোগীতার জন্য জেলা প্রশাসকের সাইটে ডুকলে পাননি কোন আপডেইট তথ্য বলে অভিযোগ তাদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরাও একই অভিযোগ করেন।
জনগনের দৌড়গোড়ায় সেবা পৌছিয়ে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাকঢুল পিঠিয়ে বছরে বড় অংকের টাকা খরচ করলেও ওয়েস সাইটের এমন অবস্থা থেকে হতবাগ জেলাবাসী। তাদের প্রশ্ন তথ্য প্রযুক্তিতে বাৎসরিক ব্যায়ের এত টাকা যায় কোথায়?
জেলা তথ্য ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের লিংকের সেবা প্রদানের ৫নং কলামে লেখা আছে হালনাগাদ ওয়েসাইটের মাধ্যমে জনাসাধারনকে সরকারি তথ্য প্রাপ্তিতে সেবা প্রদান। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট চলছে সম্পূর্ণ উল্টো ¯্রােতে।
জেলা প্রশাসকের সরকারি ওয়েব সাইট অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করার পর গত ২৩ নভেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় তার সহধর্মিনি সৈয়দা সায়রা মহসিনকে মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত করা হলেও আজ পর্যন্ত তার নাম জনপ্রতিনিধিদের তালিকায় উঠেনি। সেখানে মৃত্যু সৈয়দ মহসিন আলীর নাম রয়েছে। জেলায় ৬ জন মেয়রের স্থলে শুধু মৌলভীবাজার ও বড়লেখার মেয়রের নাম ব্যতীত বাকী ৪জনের নাম তালিকায় নেই। উপজেলা চেয়ারম্যানের নামের তালিকায় শুধু বড়লেখার রফিকুল ইসলাম ও কমলগঞ্জের রফিকুর রহমান ব্যতীত আর কারও নাম নেই। উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ২ জনের নাম থাকলেও তাদের নির্বাচনী এলাকার নাম নেই এবং বাকী ৫ জনের নামের কোন হদিস নেই। বড়লেখা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস টান্টু ব্যতীত জেলার আর কোন ভাইস-চেয়ারম্যানের নাম নেই। জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব বৃন্দের নামেও রয়েছে চরম ভুল। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণের নাম তালিকায় প্রকাশ করা হয়নি বরং অনেক সাবেক চেয়ারম্যানদরে নাম সেখানে রয়েছে। স্থানীয় অনেক পত্রিকার ডিকলারেশন প্রশাসন বাতিল করার পরেও তালিকায় সেই নাম গুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সৈয়দ মোঃ মুহিবুল ইসলাম থাকলেও সেখানে রয়েছে ৩ বছর আগের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এর নাম। মহিলা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আজিজুর রহমান হলেও সেখানে রয়েছে সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ শাহাজাহান এর নাম। মোলভীবাজারে ৩৯টি তফশীলি ব্যাংকের শাখা থাকলেও ওয়েব সাইটে মাত্র ১০টি ব্যাংকের নাম দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সাইটে অভিযোগ কর্ণারের লিংক থাকলেও অভিযোগ দেয়ার মতো নেই কোন নির্ধারিত জায়গা। এর রহস্য নিয়ে প্রশ্ন দেশ-বিদেশে অবস্থানরত জনগনের।
এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন অফিসের ঠিকানা, তথ্য প্রদানকারী কর্তকর্তার তালিকা এবং সংম্লিষ্ট বিভাগের কাজের কোন বিবরণী নেই।
এ বিষয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত একাধিক লোকের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার তথ্য প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করলেও কিছু দায়িত্বহীন কর্মকর্তার কারণে সরকার সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় সেবা পৌছিয়ে দিতে পারছে না। দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন তথ্য জানতে জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে ডুকলে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে বেখায়দায় পড়ছেন এজেলা সম্পর্কে জানতে আসা ব্রাওজাররা। তারা বলেন, অসধ উপায় অবলম্বন করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে এ কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ তোফয়েলা ইসলাম বলেন, দ্রুত এগুলো সংশোধন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com