টানা চারদিন পর মৌলভীবাজারের জঙ্গি আস্তানা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে : ৩ জঙ্গি নিহত

April 1, 2017,

এস এম উমেদ আলী॥ টানা চারদিন অভিযানের পর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট। অভিযানের আগে এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। আস্তানায় এক নারীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহত জঙ্গিদের একজন সিলেটের আতিয়া মহলের পাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
অভিযানে মুহুমুহু গুলি ও বোমার শব্দে কম্পিত হয়ে উঠছে আশপাসের এলাকা। আতঙ্কে এ কয়েক দিন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। সোয়াট ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ নামে অভিযান চালালেও তাদের সাথে পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দৃঢ়তার সহিত কাজ করে।


শনিবার ১ এপ্রিল দূপরে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ সমাপ্ত করে প্রেসব্রিফিং করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান ২৫ মার্চ থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির ‘জঙ্গি আস্তানা’ ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান পরিচালনা করছিল সেনাবাহিনী। অভিযান চলাকালে সন্ধ্যা ও রাতে ‘আতিয়া মহলের’ অদূরে পরপর দুই দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ছয়জন নিহত হন। তারা হলেন পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ কায়সার, জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জান্নাতুল ফাহিম, স্থানীয় যুবক ওয়াহিদুল ইসলাম অপু (২৪), শহীদুল (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা একজন।
মনিরুল বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, বড়হাটে তিনজন জঙ্গি আছে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, এর মধ্যে একজন সিলেটে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। সেই ব্যক্তির নেতৃত্বে, তিনিই ঘটিয়েছেন। সঙ্গে অন্য কেউ থাকতে পারে। সঙ্গে যে পুরুষ নিহত হয়েছেন, তিনিও হতে পারেন অন্য কেউও হতে পারেন।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমরা এই হত্যাকা-ের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জীবিত ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাদের ন্যাচারালি বিচার হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম আরো জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় অপারেশন স্থগিত করার পর রাতে সোয়াটের সদস্যরা জঙ্গি আস্তানার কাছে গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে এক নারী ‘জঙ্গি’ ওই ভবনের ছাদে উঠে দুটি গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়, অন্যটি এখনো ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। জঙ্গি দমনে এর আগে লেঃ কর্ণেল আজাদ সহ ৯ জন পুলিশের সদস্যকে হারিয়েছেন।


‘প্রথম দিন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন মহিলা কিন্তু বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে দুটো গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর একটি বিস্ফোরিত হয়েছিল, আরেকটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় ধানক্ষেতে পড়ে আছে।
‘ধানক্ষেতে যেখানে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়, সেখানে কাদা-পানি কিন্তু অনেকটা জায়গা নিয়ে অর্থাৎ ধ্বংসক্ষমতাটুকু বোঝা যাচ্ছে। এ কারণেই আমারা খুব সন্তর্পণে কাজ করেছি।’ তবে অভিযান শেষ হলেও চতুর্থ দিনের মতো জঙ্গি আস্তানার আশপাশে বলবৎ রয়েছে ১৪৪ ধারা।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ফতেপুরের নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ। এর পর থেকেই এলাকার মানুষ আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে ছিল।


নাসির পুরের জঙ্গি আস্তানা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সোয়াট নিয়ন্ত্রনে নিলেও বড়হাটের আস্তানায় শনিবার দুপুর ১২ টায় সোয়াট অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রনে নেয়। জঙ্গি আস্তানা বাড়ি দুটির মালিক লন্ডন প্রবাসি সাইফুল ইসলাম। বড়হাটে নিহত তিন ‘জঙ্গির’ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ তিনটি নিয়ে আসা হয়।
চিকিৎসক জানান, এখানে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হবে। তাদের ডিএনএ পরীক্ষার আলামতও সংগ্রহ করা হবে।

এর আগে ফতেপুরের নাসিরপুরে নিহত ৪ শিশু, ২ নারী ও এক যুবকের পরিচয় না পাওয়ায় লাশগুলো শনাক্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখলেও কেউ এখনো তা সনাক্ত করেনি। ফলে সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

টানা ৮২ ঘন্টা অভিযানের করে মৌলভীবাজারের দুটি জঙ্গি আস্তানা আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে

http://www.patakuri.net/%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A7%AE%E0%A7%A8-%E0%A6%98%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0/

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com