ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুরে অসম্পূর্ণ স্প্রিড ব্রেকার, বাড়ছে প্রতিদিন দূর্ঘটনা

January 22, 2024,

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার স্থাপনের দু’মাস পেড়িয়ে গেলেও অসম্পূর্ণ স্প্রিড বেকারের কারণে বেড়ে চলেছে দূর্ঘটনা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ স্প্রিড ব্রেকারটি অসম্পূর্ণ রাখায় এবং রঙ না দেয়ায় এ দুর্ঘটনা বাড়ছে। এরই মধ্যে ওই স্প্রিড ব্রেকার পারাপারের সময় চালক দেখতে না পেয়ে রডবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো- ট ৪৩-৫৪) স্ট্রিয়ারিং বিকল হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুটির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় খাদে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের সামনের অংশ। ভেঙ্গে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা পল্লী বিদ্যুতের একটি খুটিও। পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত খুটিটি অপসারণ করে নতুন খুটি স্থাপন করা হলে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।

চলতি মাসের ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের এই ঘটনায় কোন হতাহত না হলেও ট্রাকটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ৬ দিন পর ১৭ জানুয়ারি বুধবার রাত দেড়টার দিকে পাথর বোঝাই ট্রাক এর সাথে প্রাইভেট কারের ধাক্কা লেগে প্রাইভেট কারটির সামনের অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বড় দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় ওই কারের চার যাত্রী।

ওই দুটি ঘটনারই মূল কারণ স্প্রিড ব্রেকারে রঙ না দেয়ায় চলতি পথে চালক দেখতে পান না স্প্রিড ব্রেকার। এছাড়া রাতে থাকে প্রচন্ড কুয়াশা। এসব ঘটনা ছাড়াও সামনে আরও বড় দূর্ঘটনার শঙ্কা স্থানীয়দের মাঝে। এছাড়াও স্প্রিড ব্রেকার পারাপারের সময় যানবাহনগুলো ধাক্কা খেয়ে বিকট শব্দ হয়। এতে গাড়ীর নাট-বল্টু খোলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। রাতের বেলা বিকট শব্দের কারণে আশপাশের বাসা-বাড়ির লোকজনের মাঝেও তৈরি হয় আতঙ্ক। বিশেষ করে পাশে জগন্নাথপুর সরকারি বিদ্যালয় থাকায় ওই স্কুলের ক্লাস চলাকালিন সময়ে উচ্চ শব্দের কারণে বিঘ্ন ঘটে ক্লাসে।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবীর প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ স্প্রিড বেকারটি স্থাপন করেছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো দুর্ঘটনা রোধসহ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এখন এটি দু’মাস ধরে অসম্পূর্ণ থাকায় দূর্ঘটনার রোধের বিপরিতে বেড়ে চলেছে দূর্ঘটনা।

ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) মোঃ আমরু মিয়া আল এমরান বলেন, স্প্রিড ব্রেকার দেয়ায় আমরা খুশি যাতে আমাদের বাচ্চারা দূর্ঘটনা থেকে বাঁচে। কিন্তু এটা অসম্পূর্ণ থাকায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেক সময় স্প্রিড ব্রেকার পারাপারের সময় প্রচন্ড শব্দে বাচ্চারা ভয়ে ঘুম থেকে উঠে। তিনি বলেন, আমি নিজেও তাদের অফিসে যেয়ে বিষয়টি জানিয়ে এসেছি, তাঁরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তিনদিন পার হলেও সমাধান হয়নি। এটা নিশ্চই তাদের অবহেলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূল সড়কের পাশে বিদ্যালয় হওয়ায় সড়কে দূর্ঘটনা একটা বড় সমস্যা। দ্রুতগামী গাড়ী চলাচলের কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীসহ দূর্ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রনে সেখানে দ্রুত স্প্রিড ব্রেকার স্থাপনেরও অনুরোধ জানানো হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই আবেদনের দু’দিন পরই সড়ক বিভাগ সেখানে স্প্রিড ব্রেকার স্থাপন করে দেয়। কিন্তু দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রঙ করে মার্কিং করা হয়নি।

জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি বলেন,আবেদনের পর দ্রুতই স্প্রিড ব্রেকার স্থাপন করে দেয় সড়ক বিভাগ। তবে রঙ না দেয়ায় এখানে আবারও দূর্ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি ফোনে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেননি। দু’মাস যাবত প্রদক্ষেপ না নেয়াটা দু:খজনক।

এ দিকে দুর্ঘটনাসহ বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ একাধিক কর্মকর্তাকে বারবার জানালেও নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার হামিদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে, রোদ না থাকায় সেখানে রঙ দেয়া যাচ্ছেনা। শীঘ্রই সেখানে রঙ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com