দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিক্ষোভ
![](https://i0.wp.com/www.patakuri.com/wp-content/uploads/2023/09/Protest-of-the-National-Democratic-Front-in-Moulvibazar-against-the-unrestrained-rise-in-commodity-prices.jpg?fit=800%2C450&ssl=1)
স্টাফ রিপোর্টারর॥ চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জেলা এনডিএফ’র সভাপতি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক কর্মী সভায় বক্তারা আরও বলেন সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা আইএমএফ’র শর্ত পুরণে গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানি থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে।
এমনিতেই গাড়িভাড়া, বাড়িভাড়া, ঔষুধপত্র, চিকিৎসা ব্যয়ের ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনসাধারণের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
জনগণের জীবন-জীবিকার সকল প্রয়োজনীয় বিষয় রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ব্যবসায়ীদের অবাধ লুটপাট ও লাগামহীন বাণিজ্যক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। সরকার জনজীবনের সমস্যাকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের যে গালভরা বুলি আওড়াচ্ছে তা মূলত সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে সড়ক, রেল, নৌপথসহ অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ আর সর্বোচ্চ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই নয়।
সাম্রাজ্যবাদী ঋণনির্ভর এই সকল তথাকথিত উন্নয়ের সুদাসল পরিশোধে বাজেটের মূল অর্থ ব্যয় হয়। সাম্রাজ্যবাদী ঋণনির্ভর এই সকল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে আগামী ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে ‘লালবাতি’ জ্বলার বিপদের কথা বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সরকারের উন্নয়নের ফানুস চুপসে গিয়ে গত দেড় বছরে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে প্রায় অর্ধেক হয়ে নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে।
মাথাপ্রতি ঋণ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে। কর্মীসভার পূর্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের চৌমুহনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুণরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়।
দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কর্র্মীসভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি নুরুল মোহাইমীন, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, চা-শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহবায় হরিনারায়ন হাজরা, রাইস মিল শ্রমিক সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, জেলা এনডিএফ’ সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস ও সদস্য সোহেল আহমেদ সুবেল।
সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় ও জনজীবনের সংকটের জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালালদের দায়ী করে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন বাংলাদেশ একটি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক দেশ।
এদেশের শাসন ক্ষমতায় এযাবত যারা অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা সকলেই কোন না কোন সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকার। তাই রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া আগামীতেও যারা ক্ষমতাসীন হবে তারা সাম্রাজ্যবাদের আর্শীবাদ নিয়ে ক্ষমতাশীন হবে।
নির্বাচন গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত নয়, বরং গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি। বিশ্বরাজনীতির পট পরিবর্তনের এই সময়ে নয়াউপনিবেশিক দেশগুলোতে যেমন দালালদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূ পরিবর্তনের দিকটি সামনে আসছে তেমনি আমাদের দেশেও এমনটা হওয়ার সম্ভবনা থাকছে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় ভিসা নীতি কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে।
অন্যদিকে চীন রাশিয়া তাদের এই তৎপরতাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে স্থুল হস্তক্ষেপ এবং নব্যউপনিবেশবাদ আখ্যায়িত করে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করার কৌশলে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এসব দেশগুলো থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের সাথে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তির সাথে ব্যাপক আলোচনা করে তৎপরতা চালাচ্ছে।
তাই এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়, এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল নয়, সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্রতর করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণ ও জাতীয় জীবনের জরুরী দাবি-দাওয়া নিয়ে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
মন্তব্য করুন