নজরুল ইসলাম ফের ভাটেরার চেয়ারম্যান নির্বাচিত

November 29, 2021,

মাহফুজ শাকিল॥ তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ভাটেরাবাসীকে চমক দেখালেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা বঞ্চিত সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম। তিনি এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী প্রবাসী জুবায়ের সিদ্দিকী সেলিমকে ৭০৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রোববার ২৮ নভেম্বর রাতে উপজেলা পরিষদের হলরুমে বেসরকারীভাবে নজরুল ইসলামকে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানির্ং অফিসার মোঃ আহসান ইকবাল।
সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে ৩৪৮৮ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী প্রবাসী জুবায়ের সিদ্দিকী সেলিম পান ২৭৭৯ ভোট। এছাড়া আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রবাসী কামাল ইবনে শহীদ চৌধুরী চশমা প্রতীক নিয়ে পান ২১৪০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ খান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পান ২৮৬ ভোট।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভাটেরায় মোট ভোটার সংখ্যা হলো ১১ হাজার ৪৬৭। মোট ৮ হাজার ৯১৫ ভোট কাস্ট হয়েছে। বৈধ ভোট হয়েছে ৮ হাজার ৬৯৩ ভোট। বাতিল ভোটার সংখ্যা হলো ২২২। ভোটের হার শতকরা ৭৭.৭৪%। কেন্দ্র অনুযায়ী ভাটেরা সিংহনাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৬২৪ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪৮৮ ভোট, নৌকার প্রার্থী জুবায়ের সিদ্দিকী সেলিম পান ৩৪৭ ভোট, কামাল ইবনে শহীদ চৌধুরী পান ৩২৪ ভোট, আব্দুল লতিফ খান পান ৩০ ভোট। হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৬২৯ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪৩৪ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩০৯ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ৫০৮ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ১৮ ভোট। ইসলামনগর সৈয়দ সাজিদ-পিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২০২ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪৪৪ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩০৪ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ২৪৬ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ২ ভোট। নওয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১১০৬ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪০৪ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ২৭২ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ১৫০ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ৩৮ ভোট। ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৩৭৬ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪৭৭ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩৭৯ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ১২১ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ৬ ভোট। রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯১১ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ২৩৪ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ২১৯ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ২২০ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ৮ ভোট। তুলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২৯৯ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৩৬৩ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩৩৯ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ১৭৩ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ৮৮ ভোট। ভাটেরা এবতেদায়ি কেন্দ্রে ১২৭২ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৪০০ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩০৫ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ২১৪ ভোট, আব্দুল লতিফ পান ৬৩ ভোট। ভাটেরা রাবার বাগান কেন্দ্রে ১০৪৮ ভোটের মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ২৬৪ ভোট, জুবায়ের সিদ্দিকী পান ৩০৫ ভোট, কামাল চৌধুরী পান ১৮৪ ভোট ও আব্দুল লতিফ পান ৩৩ ভোট।
এর আগে গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আহসান ইকবালের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম। ওইদিন তাঁর কর্মী সমর্থক ও এলাকার প্রায় সহস্রাধিক লোক বিশাল মোটরসাইকেল ও গাড়িবহর শোভাযাত্রা নিয়ে ভাটেরা থেকে কুলাউড়ায় আসেন। এসময় নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান নজরুলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। তফসীল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ভোটের ময়দানে নামেন নজরুল ইসলাম। ইউনিয়নের সবক’টি পাড়া-মহল্লায় নজরুল ইসলামের প্রতীক ও তাঁর ছবি সংবলিত পোস্টার টাঙ্গানো হয়। প্রতিদিন মাইকিংয়ের মাধ্যমে সরব ছিল ভোটের মাঠ। সন্ধ্যা হলেই ইউনিয়নের সবক’টি হাট-বাজার, দোকান, রেস্তোরায় পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে চলতো নির্বাচনী আলাপ। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের জরিপে ভোটের দিক ও পছন্দের দিক দিয়ে এগিয়ে ছিলেন নজরুল ইসলাম। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে নজরুল ইসলামের সমর্থনে কয়েক সহস্রাধিক লোকজন নিয়ে বিশাল মিছিল করা হয়। সেই মিছিলটি ছিল ভাটেরার ইতিহাসে স্মরণীয় মিছিল। সেই মিছিলের পর ভাটেরায় নজরুলের সমর্থনে এক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে সেই গণজোয়ারকে আগলে রেখে ভোটের দিন ইউনিয়নের ভোটারদের মূল্যবান রায়ে পুনরায় চেয়ারম্যান হয়ে চমক দেখালেন নজরুল ইসলাম। এর আগে বিগত ২০১৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম জেলা যুবলীগের বর্তমান সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করে ভাটেরাবাসী যে সম্মান দিয়েছেন সেজন্য আমি, আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ভাটেরাবাসীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞতা থাকবো। বিশেষ করে ভাটেরার সকল প্রবাসী, তাদের পরিবার, নতুন ভোটার ও মা-বোনদের দেয়া নীরব ভোটের অবদান আমি কোনদিনই ভুলবো না।
এ বিজয় আমার নয়, এই বিজয় সমগ্র ভাটেরাবাসীর। তিনি আরো বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি নৌকার বিজয় উনাকে উপহার দিয়েছিলাম। কিন্তু এবারের নির্বাচনে আমি বর্তমান চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও আমাকে নৌকা প্রতীক থেকে বঞ্চিত করে একজন প্রবাসীকে নৌকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়নের সম্মানিত ভোটাররা নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের রায়ে ভাটেরা ইউনিয়নের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ধারা ধরে রাখতে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আমি ইউনিয়নবাসীর সহযোগিতায় প্রবাসী অধ্যুষিত এই ভাটেরা ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়নে রুপান্তরিত করতে আমার সেরাটা নিংড়ে দিয়ে আমৃত্যু কাজ করে যাবো। এতে ভাটেরাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com