নান্দনিক দৃষ্টিনন্দন মৌলভীবাজারের বেরি লেইক হতে পারে ঢাকার হাতির ঝিল

March 12, 2017,

হোসাইন আহমদ॥ পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল, ফেইসবুক এবং অনেকের মুখে মুখে ঢাকার হাতির ঝিলের নান্দনিক স্থাপত্যের কথা অনেকেই শুনেছেন ও নিজে বাস্তবে দেখেছেন। মায়াবী রূপসী দেবীর মতো তার শরীর থেকে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে সৌন্দর্যের আলোচ্ছটা। সে তখন হয়ে যায় মায়াবতী নারী কিংবা ডানাকাড়া পরী অথবা চঞ্চলা মায়াবী বন হরিণী। সেই হাতির ঝিল সম্পর্কে আরও কত কথা শুনেছি যা বলে শেষ করার মতো নয়।
চায়ের রাজধানী খ্যাত, পর্যটন নগরী দৃষ্টিনন্দন মৌলভীবাজার পৌর শহরের মধ্যখানে রয়েছে ঢাকার হাতির ঝিলের মতো একটি লেইক। যা স্থানীয়দের কাছে বেরি লেইক নামে পরিচিত। সু-পরিকল্পনা এবং কার্যকরি প্রদক্ষেপের মাধ্যমে ওই লেইকটি হতে পারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় হাতির ঝিল। দৃষ্টিনন্দন ওই বেরিলেইক মৌলভীবাজার জেলাকে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আরোও আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে উপস্থাপন করবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
২৭৯৯ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তন বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে রয়েছে উপভোগ করার মতো নানা স্থাপনা। যে গুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে তুলছে। জেলায় উল্লেখ্য যোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বড়লেখার মাধবকুন্ড, আতর-আগর শিল্প জুড়ীর কমলা ও চায়ের বাগান, কুলাউড়ার হাকালুকি হাওর, নবাব বাড়ি, গাজীপুর চা বাগান, রাজনগরের কমলারাণীর দিঘি, রাবার বাগান, কাউয়াদিঘী হাওর কমলগঞ্জের মাধবপুর লেইক, হামহাম জলপ্রভাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং শ্রীমঙ্গলে একাত্তরের বধ্যভূমি, চিড়িয়াখান, বাইক্কাবিল ও গ্র্যান্ড সুলতান ফাইভ ষ্টার হোটেলসহ আরও নানা স্থাপনা।
যে গুলোর সুন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিনিয়ত দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটকদের আগম ঘটে। মৌলভীবাজার পৌর শহরের সুন্দর্যকে আরোও আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বেরি লেইককে ঢাকার হাতির ঝিলের মতো পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তুলতে হবে।
সাড়ে ১০ কিঃ মিঃ জায়গা নিয়ে ওই লেইকের অবস্থান। লেইকের পশ্চিমে কুসুমবাগ রোড, পূর্বে লেইক রোড, উত্তরে পশ্চিমবাজার এবং দক্ষিণে শাহ মোস্তফা রোড অতিবাহিত হয়েছে এবং এর মধ্য খানে অবহেলিত ওই লেইকটির অবস্থান। যা একদিন মৌলভীবাজারের জন্য হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখান থেকে প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব ভাবত আয় হতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ওই লেইকটি মৌলভীবাজার পৌরসভার মালিকানাধীন। বর্তমানে মাছ চাষাবাদরে জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে বাৎসরিক ইজারা প্রদান করা হয়। অদ্যবধি সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে।


শহরের চতুর্দিক দিয়ে লেইকে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার হাতির ঝিলের মতো যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে একদিকে যেমন শহরের শ্রী বৃদ্ধি পাবে অন্য দিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হবে পর্যটন নগরী মৌলভীবাজার।
লেইকের দক্ষিণ পাশের শাহ্ মোস্তফা রোড থেকে লেইকের মধ্য দিয়ে একটি ঝুলন্ত ব্রীজ যদি উত্তর পাশের পুরাতন হাসপাতাল রোডে নেয়া যায় তাহলে এর সুন্দর্য এবং পর্যটকদের সমাগম আরও বেড়ে যাবে। চতুর্দিকে বিভিন্ন রঙের লাইটিং এর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। লেইকে যদি নৌকা চড়ার ব্যবস্থা এবং ভাসমান রেষ্টুরেন্ট করা যায় তাহলে বিশেষ করে শিশু ও মহিলারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে স্থানীয় ভ্রমণ পিপাসুদের অভিমত।
এ বিষয়ে বিটিভির মৌলভীবাজার প্রতিনিধি হাসানাত কামাল বলেন, বাংলাদেশের খুব কম শহরে এরকম জলধার লেইক রয়েছে। এখানে আমরা ভাসমান রেষ্টুরেন্ট ও ডুবন্ত রিসোর্ট করতে পারি। ইম্পিরিয়েল কলেজের কো-অর্ডিনেটর মোঃ সিতাব আলী বলেন, মৌলভীবাজারের সুন্দর্য বৃদ্ধি করতে বেরি লেইকের বিকল্প নেই। এডভোকেট তাহমিনা আক্তার জাহান বলেন, এটা আমাদের গর্ব ও অহংকার। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র মোঃ ফাহিম বলেন, জেলা শহরের মধ্যখানে বিশাল জায়গা নিয়ে এত বড় লেইক আর কোথায়ও দেখিনি। এটাকে ঢাকার হাতির ঝিলের মতো কাজে লাগালে শহরের শ্রী আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। ফাহিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা বেগম বলেন, ওই লেইকটির উন্নয়ন করলে পর্যটক এবং শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করবে। সমাজকর্মী সাদিকুর রহমান বলেন, লেইকটিকে এখন বিভিন্নজন নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহার করছে। এভাবে এটা ব্যবহার করা হলে একদিন এর সুন্দর্য বিলিন হয়ে যাবে। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির আহমদ অপু বলেন, এটাকে পরিকল্পিত ভাবে সাজালে শহরের সুন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট ছোট শিশুরা আনন্দ বিনোদনে সময় কাটাতে পারবে। জেলা স্বজন সমাবেশের সভাপতি হুমায়ূন কবীর বলেন, আমার মনে হয় জেলা সদরের মধ্যে এত বড় লেইক আর কোথাও আছে। এটার উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, বেরি লেইক আমাদের গর্ব ও অহংকার। এটা শহরের পানি নিষ্কাশন, আগুণ নিয়ন্ত্রণ এবং শহরের প্রতিকূল সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী মহল অবৈধ ভাবে ওই লেইক দখল করে ইমারত নির্মাণ করছে। ওই লেইকের উন্নয়নের জন্য ইতি মধ্যে ঢাকা জল বায়ূ ট্রাষ্টে ২৩ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট জমা দেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে পর্যটন নগরী আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com