প্রয়োজনে মাঠে আমার লাশ পড়বে তবুও আজিমুশ্বান ইজতেমা হবে : মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক

November 16, 2022,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী বলেছেন, দেশের অন্যতম প্রাচীন অরাজনৈতিক ইসলাহী সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী আজিমুশ্বান ইজতেমা আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর সিলেট শহরতলীর পারাইরচকের ট্রাক টার্মিনাল চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, ইজতেমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই অবস্থান করবো, আমাকে সরাতে চাইলে লাশ সরাতে পারবেন, আমাকে না। কোনো অপশক্তিই আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের ২দিনব্যাপী ইজতেমাকে ঠেকাতে পারবে না। প্রয়োজনে মাঠে আমার লাশ পড়বে তবুও আজিমুশ্বান ইজতেমা হবে বলে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর রাতে ইজতেমা মাঠে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলিম, আলেম উলাম, মুরিদান এবং আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ইজতেমা মাঠ থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী জানান-আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের আজিমুশ্বান ইজতেমার মাঠ প্রথমে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠ ছিল। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে নিয়ে প্রথমে স্থান পরিবর্তন করার কথা বলা হয়।

আমরা প্রশাসনের নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়ে সিলেট শহরতলীর পারাইরচকের ট্রাক টার্মিনাল চত্বরে নতুন স্থান নির্ধারণ করি। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইজতেমা মাঠে প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গতকাল শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। রাত পোহালেই সিলেটের মাঠে ঐতিহাসিক আজিমুশ্বান ইজতেমার কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ইজতেমা শুরুর দুইদিন আগেই মাঠে মুসলমানদের ব্যাপক উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠেছে।

আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজতেমা না করার জন্য নানাভাবে চাপ আসছে। এসব বাধাঁ-বিপত্তি ডিঙিয়ে সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের ইজতেমাকে কোনোভাবে দমিয়ে রাখা যাবে না। প্রশাসন বা বাতিল কোনো শক্তির রক্তচক্ষুকে দ্বীনের মুবাল্লিগরা ভয় করে না। সব ভয়কে পেছনে ঠেলে দুইদিনেরর ইজতেমাকে চারদিনের ঘোষণা করেছেন আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম শেখবাড়ি জামিয়ার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম মুফতি মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।

১৭ নভেম্বর শুরু হওয়ার কথা থাকলে ইজতেমাটি ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। শুক্রবার ১৯ নভেম্বর শেষ দিনে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। শেখবাড়ি জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী বলেন, সিলেটের ইজতেমার শরীক হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে যে পরিমাণ গাড়িবহর নিয়ে মানুষ রওয়ানা হয়েছেন, ইজতেমার দুইদিন আগেই ইজতেমা শুরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি যে পরিমাণ মানুষ উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো ইতোমধ্যে তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি উপস্থিতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে শেষমুহুর্তে সিলেটের ডিসি সাহেব ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হয়ে কোনো ধরণের বাঁধা দেওয়া হবেনা বলে তিনি আশ্বাস করেছেন।

সংগঠন সুত্রে জানা যায়, আজিমুশ্বান ইজতেমায় বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের গর্ভনর আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন, সরকার কর্তৃক স্বীকৃত শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারমান আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ি, চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক শায়খুল হাদিস মাওলানা ইয়াহইয়াসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তবিদগণ, পীর-বুজুর্গ, ওয়ায়েজ, ইসলামি স্কলারগণ বয়ান রাখবেন।

এছাড়াও ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে আওলাদে রাসুল সা. হজরত মাওলানা মাহমুদ আল মাদানী ও হযরত মাওলানা আরশাদ রশিদীও উপস্থিত থাকবেন। এবারের ইজতেমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে বৃহস্পতিবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ, জিকির ও দোয়া। এটি পরিচালনা করবেন বরুনার পীর মুফতি মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।

মাসিক হেফাজতে ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক হামমাদ রাগিব জানান- সিলেট শহরতলীর পারাইরচকের ট্রাক টার্মিনালে আজিমুশ্বান ইজতেমায় লক্ষাধিক মুসল্লিদেরর অবস্থানের জন্য বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে অনুষ্ঠানস্থল সাজানো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আগত মুসল্লিদের থাকা-খাওয়া ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ প্রায় শতভাগ প্রস্তুতি গতকালই সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমায় লক্ষাধিক মুসল্লি জমায়েত হওয়ার আশা করা যাচ্ছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন ইজতেমা উপলক্ষ্যে মাসিক হেফাজতে ইসলাম এর নভেম্বর সংখ্যাকে ‘আজিমুশ্বান ইজতেমা সংখ্যা করা হয়েছে। নবীন-প্রবীণ-প্রথিতযশা ৩০ জন আলেম, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্টদের অংশগ্রহণে ১৬৮ পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবর। শায়খে বর্ণভী ও আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামসহ সিরাত, ইতিহাস, গবেষণা প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, একাধিক উপন্যাস এবং শায়খে বর্ণভী রহ.-এর জীবন ও সময়কেন্দ্রিক অনেকগুলো সুপাঠ্য রচনা রয়েছে। এখন ইজতেমার স্টলসহ বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে বর্ধিত সংখ্যাটি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান- ইজতেমার বিশাল আয়োজনে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলের মূল প্যান্ডেল, ডেকোরেশন, সাউন্ড সিস্টেম, বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে। তাবলিগ জামাতের জেলা মারকাজ খোজারখলা জামে মসজিদের মুরব্বি হাজী কামাল বলেন, তাবলীগ জামাতের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে এই ইজতেমা বাস্তবায়নে। জেলা মারকাজের যাবতীয় আসবাবপত্র আজিমুশ্বান ইজতেমায় ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হবে।

আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ ফতেহপুরী জানান- ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানের ছয় দফা কর্মসূচি হচ্ছে- ইসলামের দাওয়াত, সংগঠন, সুশিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, সৃষ্টিজগতের সেবা, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা। এসব বিষয়কে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।’ এই আজিমুশ্বান ইজতেমাকে সার্বিকভাবে সফল করতে সিলেটসহ দেশবাসির প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন বরুণার পীর, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমীর ওলি ইবনে ওলি শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।

প্রসঙ্গত, উপমহাদেশের বরেণ্য মনিষী, কুতুবে দাওরান, মুজাদ্দিদে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রহ.) ১৯৪৪ সালে অরাজনৈতিক এবং ইসলাহি সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। তাঁর মুত্যুর পর এ সংগঠনের আমীর নির্বাচিত হন শায়খে বর্ণভীর সাহেবজাদা ফেদায়ে ইসলাম আল্লামা খলীলুর রহমান হামিদী। তাঁর ইন্তেকালের পর আমীর নির্বাচিত হন বর্তমান আমীর মুহাম্মদ রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com