বড়লেখা পল্লীবিদ্যুত আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতির অভিযোগ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

May 26, 2024,

আব্দুর রব॥ বড়লেখা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্র থেকে দুর্নীতির অভিযোগে বদলি সেই ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদারকে গত ২৮ এপ্রিল পুনরায় আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়। যোগদানের মাস না পেরুতেই ফের তার বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানী ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধের অভিযোগ তদন্তে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। খবর পেয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি উৎকোচ নেননি মর্মে লিখিত নেওয়ার জন্য ভোক্তভোগিদের নিকট থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন।
জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে পল্লীবিদ্যুতের আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন লাইন টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীর সিকদার। গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তাকে দাসেরবাজার অভিযোগ কেন্দ্রে শাস্তিমুলক বদলি করে। কিছু দিনের মধ্যে দাসেরবাজারে একজন বাণিজ্যিক ভবন মালিককে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা দেওয়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান নিরীহ এক রাজমিস্ত্রী সহকারি। ঘুষ নিয়ে চান্দগ্রাম এলাকায় একজন গ্রাহককে পল্লীবিদ্যুতের অনুমোদনহীন খুঁটিতে বিধিবর্হিভুতভাবে লাইন টেনে সংযোগ দেন। দাসেরবাজার অভিযোগ তাছাড়া জাহাঙ্গীর সিকদারের অভিযোগ কেন্দ্রের আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে অসদাচরণ, অবৈধভাবে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন, লোড বৃদ্ধি, নষ্ট ট্রান্সফরমার মেরামতে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কর্তৃপক্ষ চলিত বছরের শুরুর দিকে তাকে কুলাউড়ায় বদলি করেন।
প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত আজিমগঞ্জ অভিযোগের কেন্দ্রের ইনচার্জ রেজাউল করিম খানের বিরুদ্ধে স্টেশনে না থাকা, ফোনে তাকে না পাওয়া, লাইন মেরামতে উদাসীনতসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠলে ২৪ এপ্রিল দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ (কাঠালতলী) কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে পল্লীবিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার গ্রাহক হয়রানীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে রেজাউল করিম খানকে আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করেন। এরপর সেখানে জাহাঙ্গীর সিকদারকে পদায়ন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রে যোগদান করেই তিনি গ্রাহকদের মিটার সংযোগ দিতে সার্ভিস ড্রপের (লাইন) কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ফাঁদ পাতেন। অভিযোগ কেন্দ্রে সার্ভিস ড্রপ (লাইন) না রেখে পছন্দের দোকানে রাখেন। এরপর গ্রাহকদের লাইনের সংকট দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। এছাড়া সম্প্রতি উপজেলার হরিপুর গ্রামে ১০ কেভির নষ্ট ট্রান্সফরমার পাল্টাতে গ্রাহকদের (১২ জন) দীর্ঘ হয়রানি শেষে কৌশলে ৮ হাজার টাকা আদায় করে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করেন। অন্যদিকে সুজানগর ইউপির ব্রাক্ষ্মণের চক থেকে ১০ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে অফিস ও পরিবহণ খরচের নামে ৫ হাজার টাকা ও বাঘমারা এলাকায় ৫ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১০ কেভির ট্রান্সফরমার দিতে ৩ হাজার ২শ’ টাকা আদায় করেন ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদার।
দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির কাঠালতলী এলাকার ভোক্তভোগী গ্রাহক নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার ভাইয়ের মিটার অনুমোদনের পর অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর সিকদারের কাছে ৪-৫ দিন যান। লাইন (সার্ভিস ড্রপ) সংকট দেখিয়ে প্রায় ১ মাস ঘুরিয়ে ২১ মে একটি দোকান থেকে ১ হাজার টাকায় ১০৫ ফুট তার (সার্ভিস ড্রপ) ক্রয় করে অভিযোগ কেন্দ্রের লাইনম্যানদের জানান। তারপরও তারা অনেক ঘুরিয়ে অবশেষে মিটার সংযোগ দিয়েছে।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর সিকদার জানান, গ্রাহকের সাথে তিনি কোনো আর্থিক লেনদেন করেন না। তার দাবি তিনি গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত কোনো অভিযোগই সত্য নয়।
বড়লেখা পল্লীবিদ্যুতের এজিএম (কম) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, ওভার লোড কিংবা প্রাকৃতিক কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হলে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় সম্পুর্ণ অবৈধ। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত পরিবহণে শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রান্সফরমার নিয়ে আসতে বলা হতে পারে। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আজিমগঞ্জ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের আনিত অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com