বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ

August 4, 2016,

এহসান বিন মুজাহির: সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চীন, ভারত ও নেপাল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশে ৩৩ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে রোগাক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২২ জন, মারা গেছেন ৪৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলার ৫৬টি উপজেলার ২০৪টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ২২ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) তথ্যমতে, দেশের ১৯টি জেলার ৫৯টি উপজেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ও ১৫ হাজার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ৩৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ৯৩টি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫০টি। ১৫৮ আশ্রয় কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বন্যায় ১৭ জেলার ৯৪ হাজার ৫৩৬ হেক্টর আবাদি জমি পানির নিচে ডুবে গেছে। (৩ আগস্ট, মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তর)

বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাল, ডাল, আটা, সবজি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।  দেখা দিয়েছে সাপসহ বিষাক্ত প্রাণীর উপদ্রব। বিশুদ্ধ পানির সংকট বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদেও প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। বানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে সবার ঘরে ঘরে সামর্থেও আলোকে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া আমাদের মানবিক দায়িত্ব।  সরকার এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ চাল ও টাকা বিতরণ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। ফলে অনেকের কপালে এখন পর্যন্ত কিছুই জোটেনি। এই বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের ঈমানী দায়িত্ব।

অসহায়-বানবাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোও অনেক সওয়াবের কাজ। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহবানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে’। (সূরা দাহর :৮)

আল্লাহ আরও এরশাদ করেন-‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। (সূরা জারিয়াত :১৯)

হাদিসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির  খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও’। (সহিহ বুখারি)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দিকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো’। (বুখারি)।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন-হে বনি আদম, যদি উদ্বৃত্ত অর্থ দান করো, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে’।  (আবু দাউদ)

হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন-‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন’। (সহিহ মুসলিম)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, কেয়ামতের দিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে কেয়ামতের দিন পানি পান করানো হবে’। (আবু দাউদ)

হজরত রাসুল (সা) এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়া করে’। (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’। (মুসতাদরাক)

হজরত রাসূল (সা.) আরও বলেন-যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন’। (সহিহ মুসলিম)

পরিশেষে বলা যায়-অসহায়দের সেবা, সাহায্য-সহযোগিতা করা অনেক সওয়াবের কাজ। আল্লাহপাক আমাদের সামর্থ্যরে ভিত্তিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com