বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ কোর্স ও স্মরণিকা প্রকাশনা অনুষ্ঠান

January 1, 2017,

মোহাম্মদ আবু তাহের॥ আমার জীবনের বিশেষ আনন্দময় দিনগুলোর একটি হলো ৮ ডিসেম্বর ২০১৬। এ দিন বিআইবিএম এর সেমিনার হলে আপনজন নামক একটি স্মরণিকা’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। এ ধরণের প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা খুবই গতানুগতিক হলেও বিকাল ৪ টায় ঢাকার মিরপুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দৃষ্টিনন্দন স্থানে বিআইবিএম এর সেমিনার হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এর লিগ্যাল এসপেক্ট অব জেনারেল ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যাংকের ৪৪ জন ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক প্রকাশিত স্মরণিকা ‘আপনজন’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন ছিল। আমার সভাপতিত্বে বিআইবিএম এর এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহ্ মোঃ আহসান হাবিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএম এর অনুষদ সদস্য মোঃ নাজির হোসেন সহ আরও তিন জন অনুষদ সদস্য। ৪ অক্টোবর ২০১৫ থেকে পাঁচ দিনের অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও কিছু সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা উপস্থিত হন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিআইবিএম কর্তৃপক্ষ আরও দুইটি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান আমাদের অনুষ্ঠানের সাথে একীভূত করায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি ভিন্নমাত্রা পেয়ে সমৃদ্ধ হয় এবং অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এটি ছিল আমাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছু আগেই বিআইবিএম-এ গিয়েছিলাম, সঙ্গে ছিলেন এনসিসি ব্যাংকের মোঃ আনোয়ার হোসেন, প্রাইম ব্যাংকের শারমিন হক ও পূবালী ব্যাংকের চিত্ত রঞ্জন দেব। আমরা বিআইবিএম এর দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার হাতছানিতে মেধাবী ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদচারণে মুখর ও বর্ণিল হয়ে উঠে বিআইবিএম প্রাঙ্গন যা যে কোন ব্যাংক কর্মকর্তাকেই আকৃষ্ট করবে। আমরা বিআইবিএম এর প্রশস্ত প্রাঙ্গনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াই। বিআইবিএম এর সবুজ ঘেরা ক্যাম্পাসে মোহনীয় আবেশে ছবি তোলার মাধ্যমে কিছু সময় কাটালাম, কিছুক্ষণের আড্ডা, একে অন্যের খোঁজ-খবর নেয়া ইত্যাদি মিলিয়ে এক হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এক্সিম ব্যাংকের ফেরদৌসও পরে এসে মিলিত হন। ফেরদৌস সহ স্মরণিকা প্রকাশনার সাথে জড়িত প্রায় সকলই তাদের বাসায় আথিতেয়তা গ্রহণ করার জন্য আমাকে অনুরোধ জানান। আপনজন নামক স্মরণিকা প্রকাশ ও এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানের সার্থকতা এখানেই খুঁজে পেলাম।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানকে ব্যতিক্রমধর্মী আখ্যায়িত করছি এই কারনে যেহেতু এর আগে বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণার্থী কর্তৃক কোন স্মরণিকা বা ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. আহসান হাবিব এর বক্তব্য আমাদের সকলকে উদ্দীপ্ত করেছে। বিশেষ অতিথি অনুষদ সদস্য মোঃ নাজির হোসেন এর বক্তব্যও প্রশিক্ষণার্থী সকল কর্মকর্তাদের প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছে। Financial crime and compliance issues in Bank  Ges  Working Capital Financing case based Analysis বিষয়ক কোর্সের কো-অর্ডিনেটর ও বিআইবিএম অনুষদ সদস্য শেখ নাজিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ রুহুল আমীনও বক্তব্য রাখেন। শেখ নাজিবুর রহমান স্মরণিকা প্রকাশনার মতো সৃজনশীল উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ ও ব্যাংকের পরিপালনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে এ জাতীয় প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বরোপ করেন। আসলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ জাতীয় প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। এ ধরণের প্রশিক্ষণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশেও ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে দুর্নীতির কারনে আর্থিক খাত ঝুঁকির সম্মুখীন। এ ধরনের প্রশিক্ষণ ব্যাংক সমূহকে আর্থিক ঝুঁকি থেকেও বাঁচাতে সহায়তা করতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনে করি। ব্যাংকিং সেক্টর অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ সেক্টর। এখানে অনিয়ম, অসাধুতা, দুর্নীতি, অনৈতিকতা যে কোন মূল্যে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সমাজ ও রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা করতে ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এন্ড কমপ্লায়েন্স ইসুজ ইন ব্যাংক বিষয়ক কোর্স কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, লাগামহীন দুর্নীতির কারনে ব্যাংকিং খাতে মন্দঋণের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপী ঋণ ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপী ঋণ রয়েছে ৫৪ হাজার ১৭৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন দুর্নীতি ও বড়লোকদের যোগসাজশে দেয়া ঋণ বেশীরভাগই এখন ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপীর তালিকায়। এ ধারা বন্ধ করতে হলে দুর্নীতি ও অদক্ষতা দূর করতে হবে। ব্যাংকিং খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য এ ধরণের প্রশিক্ষণ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য জরুরী। দেশে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিআইবিএম এর এ জাতীয় প্রশিক্ষণ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি। বিআইবিএম-এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি করতে পারায় আমরা অনুপ্রানিত এবং সম্মানিত বোধ করছি। এটি আমাদের অন্যরকম ভাললাগার মতো বিষয়। এই অনুষ্ঠান আমাদের ভালবাসায় আবদ্ধ হওয়ার একটা শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। বি আই বি এম এর প্রশিক্ষণার্থী ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ‘আপনজন’ নামক স্মরণিকা এর প্রকশনা একটি সৃজনশীল উদ্যোগ বলে মনে করি। মানুষ যত সৃজনশীল কাজে জড়িত হবে সমাজ ততই এগিয়ে যাবে। আপনজন নামক স্মরণিকা ৪৪ জন প্রশিক্ষণার্থীদের যোগাযোগের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি বিআইবিএম এর সর্বস্তরের প্রশিক্ষণার্থীদের একে অন্যের যোগসুত্র স্থাপনে এ স্মরণিকা অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথ একে অন্যের মিলনকে সাহিত্য বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি মানুষে মানুষে মূল্যবান সম্বন্ধকে যথার্থ সভ্যতা বলে মনে করতেন। বর্তমান শহুরে মানুষের মনোজগত ইটপাথরের মতোই রুক্ষ ও প্রাণহীন। আমরা একই বাড়িতে থাকি কিন্তু আমরা একঘর অন্য এক ঘরের খবর রাখি না। ফলে সমাজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর ও অস্থির। এ ধরণের সৃজনশীল কর্মকান্ড সত্য ও সুন্দরের অন্বেষায় আমাদেরকে শেখাবে নিরন্তর পথচলা। বিআইবিএম সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারুণ্যের দিপ্তী ও উদ্যম। প্রশিক্ষণ পরিচালক ড. আহসান হাবিব ও অনুষদ সদস্য মোঃ নাজির হোসেন এর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সময় যে আন্তরিকতা তাদের মধ্যে দেখেছি স্মরণিকা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসে পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশী। সাহিত্য মানুষকে কুপমন্ডুকতা থেকে মুক্ত করে ঔদার্যে উন্নীত করে। আমরা এই স্মরণিকা প্রকাশনার মাধ্যমে ভালবাসা ও সম্প্রীতি বিআইবিএম এর সকল প্রশিক্ষণার্থী ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।
যে কোন সৃজনশীল কাজ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এই স্মরণিকা প্রকাশ করা ও সৃজনশীল একটি কাজ। উদ্যোগটি দেখতে অনেক ক্ষুদ্র মনে হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। এ প্রসঙ্গে মাদার তেরেসার একটি উক্তি হলো we can not always do the great thing we can do small thing with great love. সাহিত্য ও সাং¯ৃ‹তিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। আর এই মূল্যবোধ ধারণ করেই আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রযুক্তির বিকাশের কারনে সাহিত্য ম্যাগাজিন, স্মরণিকা, কবিতা, সংবাদপত্র ইত্যাদি আক্রান্ত হতেই পারে। কিন্তু এ সমস্ত সৃজনশীল কর্মকান্ডের মূল্য কখনো কমবেনা। আদর্শ সংস্কৃতি চর্চা জ্ঞানকেও সমৃদ্ধ করে। মানুষের চিন্তা-চেতনা চর্চার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও বুদ্ধিকে বিকশিত করতে সাহায্য করে আদর্শ সংস্কৃতি চর্চা। কর্মক্ষেত্রে ভাল করবার জন্য লাগে সৃষ্টিশীলতা, কর্মক্ষমতা, সমস্যা সমাধান বা মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা, সবার সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করার ও শিখার দক্ষতা। নিজেকে রিচার্জ করার ক্ষমতা মানুষকে অর্জন করতে হয়। বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এর মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তারা এ সমস্ত গুনাবলী অর্জন করতে পারে। জ্ঞান অর্জন করতে, দক্ষতা অর্জন করতে স্বাপ্নীক মানুষ হতে বিআইবিএম ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনুপ্রানিত করে। তরুণ কর্মকর্তাদের অনেক বড় হতে হলে সফল ও সার্থক হতে হলে বড় স্বপ্নও দেখতে হবে। গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লেরী পেইজ বলেছেন ঘুমের ঘোরেও যদি একটা দারুন স্বপ্ন দেখো সেটিও আকড়ে ধরো। পেশাগত সফলতার জন্য চারটি গুন বিশেষভাবে দরকার প্রথম হলো উদ্যম বা নতুন কিছু করা, দ্বিতীয় পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা, তৃতীয় পেশার প্রতি ভালবাসা আন্তরিকতা এবং দায়িত্ব পালনে বিশ্বস্ততা, চতুর্থ হলো জনসংযোগ বা ব্যাপক পরিচিতি। মানুষ হিসাবে জন্ম গ্রহন করলেই যেমন সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায়না, মানব সম্পদ হওয়া যায়না, ঠিক চাকুরীতে যোগদান করলেই সফল পেশাজীবি হওয়া যায় না। পেশাদারিত্বে সফল হতে হলে অনেক গুনাবলি অর্জন করতে হয়। বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। দিন দিন প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছে। কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেই হবে না সেই সঙ্গে তরুণ কর্মকর্তাদের তুখোড় হতে হবে, অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে আর্কষণীয় ভাবে। চৌকস মানুষ হিসেবে সঠিক ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধ যেন যে কোন পেশাজীবীর কথাবার্তা ও চালচলনে ফুটে উঠে শতভাগ সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে সু সম্পর্ক না থাকলে প্রতিষ্ঠান কখনো উন্নতি করতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য, সমাজের জন্য, যেমন দরকার সফল মানুষ ঠিক তেমনি দরকার সার্থক মানুষ। সফল মানুষ ও সার্থক মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য, ফুলের রং হলো সফলতা এবং সৌরভ হলো সার্থকতা। বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেখলাম সফল ও সার্থক মানুষ হওয়ার জন্য বিআইবিএম এর প্রশিক্ষন এক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রধান অতিথি ও অনুষদ সদস্যবৃন্দের সদয় বিবেচনার জন্য কিছু যৌত্তিক প্রস্তাবনা তুলে ধরছি, বিআইবিএম এর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট রিভিউ ২০১৪ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে দেশের ৮৫ শতাংশ ব্যাংকের নীতিমালা আছে। ৭৫ শতাংশ ব্যাংকের বছর জুড়ে প্রশিক্ষণের নিয়মিত ক্যালেন্ডার রয়েছে। প্রতিষ্ঠান গুলোর ৫২ শতাংশই প্রশিক্ষণ পরবর্তী কোনো মূল্যায়ন করে না। ৫০ শতাংশ ব্যাংক কর্মীদের মূল্যায়ন প্রশিক্ষনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে বিবেচনায় নেয় না। প্রচলিত বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ব্যাংক কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়। কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। কর্মকর্তা মূল্যায়নে প্রশিক্ষণ যাতে যথাযথ গুরুত্ব পায় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন। নিঃসন্দেহে বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ হলো জ্ঞান। জ্ঞান সূর্য্যের আলোর চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।” এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে আড়ষ্ট বুদ্ধিকে মুক্তি দিতে জ্ঞানের চর্চা বাড়াতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যুগোপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে বিআইবিএম এর ভূমিকা অসাধারণ বলে মনে করি। ডেইলি ষ্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন পৃথিবীতে এখন ধনী নির্ণয় করা হয় মেধার ভিত্তিতে, তিনি বলেছেন যারা দক্ষ তারা থাকবে একপাশে আর অদক্ষরা থাকবে আরেকপাশে। দক্ষতা অর্জন করলে পৃথিবী আপনাকে খুঁজে বের করবে। বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণে যে সমস্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হন তাদেরও একটা প্রাতিষ্ঠানিক স¦ীকৃতি প্রয়োজন বলে মনে করি। কর্মকর্তাদের অ্যাওয়ার্ড অর্জনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য একটি পদ্ধতি বের করার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ পরিচালক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি আর্কষন করছি। স্মরণিকা প্রকাশনায় সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন এর কঠোর পরিশ্রম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সহ সম্পাদক শারমিন হক তার সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করলে এ কাজটি আর ও কঠিন হতো আমাদের জন্য। অর্থ সম্পাদক জনাব মোঃ আলমগীর মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমাদেরকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং অন্য অনেকেই উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ রইলাম। পাশাপাশি এধরনের ব্যতিক্রমধর্মী একটা সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহন করে একটা অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছি। কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা আছেন যাদের সাথে শুধুমাত্র একটু কথা বলার জন্য কতবার যে ফোন করতে হয়েছে তার সঠিক হিসাবটাও বলতে পারবোনা। তারপর ও আমরা থেমে যাই নি, সমান উদ্যমে বারবার যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করেছি এবং সফল ও হয়েিেছ। এ প্রসঙ্গে উইনস্টন চার্চিল এর একটি উক্তি এখানে প্রণিধান যোগ্য বলে মনে করি, উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন সাফল্যের যোগ্যতা হচ্ছে একটি ব্যর্থতা থেকে আরেকটি ব্যর্থতাকে ধরা দেওয়া কিন্তু একই রকম উদ্যম নিয়ে। প্রশিক্ষণ পরিচালক প্রফেসর ড. আহসান হাবিবকে এক অসাধারণ অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমি মনে করি। সময়ে অসময়ে ফোন করেছি যথাসময়ে রিসিভ না করলেও তিনি call back করেছেন। ম্যাগাজিন প্রকাশনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি হলেন একজন অগ্রসর চিন্তার মানুষ। তার চিন্তা ও কর্মের বহুমুখিতা অনুসরনীয়। তিনি রুচি ও ব্যক্তিত্বের এক অনন্য উদাহরণ বলে আমার কাছে মনে হয়। তিনি একজন কলামষ্টি তার জাতীয় প্রত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ আমি মনোযোগ সহকারে পড়ি। তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে প্রশিক্ষণ পরিচালক হিসেবে অনুসরন যোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে গ্রহন করতে পারেন। তিনি তরুণ প্রজন্মের অহংকার। অনুষদ সদস্য প্রাজ্ঞ প্রশিক্ষক নাজির হোসেনকে বিভিন্ন সময়ে ফোন করে পরামর্শ নিয়েছি কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি।
প্রশিক্ষণার্থীগণ প্রশিক্ষণ কোর্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের মধ্যে যারা বক্তব্য রেখেছেন সকলেই বিআইবিএম এর অসাধারণ কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করেছেন। আসলে দেশের যে কোন উন্নয়নে মূল শক্তি হলো জনগণ, ঠিক তেমনি বিআইবিএম এর উন্নতির মূল শক্তি হলো সর্বস্তরের ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ। বিআইবিএম এর প্রশিক্ষণ পরিচালক এর অসাধারণ দক্ষতা ও জ্ঞানের ফলে বিআইবিএম উপকৃত হচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশিক্ষণার্থী কর্তৃক প্রকাশিত ‘আপনজন’ নামক স্মরণিকাকে সৃজনশীল উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি প্রকাশনাকে অসাধারণ তাৎপর্যময় করেছেন। তিনি বিআইবিএম এর ওয়েবসাইটে ‘আপনজন’ নামক স্মরণিকা প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই স্বীকৃতি ‘আপনজন’ স্মরণিকাটি এর প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলকে উৎসাহ যোগাবে। পাশাপাশি বিআইবিএম এর অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীদের সৃজনশীল কর্মকান্ডে জড়িত হতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। বিআইবিএম এর ডাইরেক্টর জেনারেল প্রফেসর ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে স্মরণিকাটি প্রদান করলাম। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাদের স্মরণিকাটি গ্রহণ করলেন। অল্প সময়ের মধ্যে কিছু কথাবার্তাও বললেন। তিনি বললেন আমি যদি কোনো ব্যাপারে আপনাদের কোনো প্রয়োজনে লাগি তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের এক কৃতি সন্তান। তিনি যে একজন বড় মাপের মানুষ তাঁর অমায়িক ব্যবহার ও বিনয়ই এর প্রমাণ বহন করে। আমরা তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর সাথে আমাদের ফটোসেশনটিও প্রাণবন্ত হয়েছে। সামান্য সময়ের পরিচয় এবং কথাবার্তা বলে আমার কাছে মনে হলো তিনি একজন ভিশনারী ও ডায়নামিক মানুষ। তাঁর মতো একজন মানুষের নেতৃত্বে বিআইবিএম পরিচালিত হলে বিআইবিএম এগিয়ে যাবেই। নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের সবার জন্যই অনুপ্রেরণা হতে পারেন। তাঁর নেতৃত্বগুণে বিআইবিএম-এ একটি চমৎকার গতিশীল ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। এর সুফল ভোগ করছে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর।
মোহাম্মদ আবু তাহের ,সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি স্মরনিকা প্রকাশনা কমিটি ও সভাপতি ব্যাংক অফিসার্স এসোসিয়েশন ,মৌলভীবাজার জেলা কমিটি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com