(ভিডিওসহ) বেইলী রোডের ট্রাজেডিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম কুলাউড়ায় মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত
কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হওয়া সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। মরহুমের প্রথম জানাজা ১ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় তাঁর জন্মমাটি কুলাউড়া নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে ও দ্বিতীয় জানাজা মরহুমের গ্রামের এলাকার শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার শেষে নিহত আতাউর রহমান শামীমকে শেষ বারের মতো বিদায় দিয়ে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এরআগে ঢাকা থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্সযোগে নিহত আতাউর রহমান শামীমের মরদেহ কুলাউড়া এনসি স্কুল মাঠে পৌঁছালে তাকে শেষ বারের মতো দেখতে ভিড় জমান তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবি, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় সহস্রাধিক লোকজন। এরপর মরহুমের দ্বিতীয় জানাযার জন্য মরদেহ নেয়া হয় শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায়। সেখানে তাঁর এলাকার শত শত মানুষ তাকে শেষ বারের মতো দেখতে ভিড় জমান। পরে সেখানে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মরহুমের জানাযার নামাজে অংশ নেন সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোকাব্বির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার- ২ আবু জাফর রাজু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, কুলাউড়া পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাও: ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ, ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো: মমদুদ হোসেনসহ আওয়ামীলীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্থরের শ্রেণী পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য নিহত আতাউর রহমান শামীম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। করেছেন এলএলবি। অনেক বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সাংবাদিকতা করেছেন। সেখানে তার একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও রয়েছে। রাজনীতি আর আইন পেশায় জড়িত ছিলেন মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের এমন দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে কুলাউড়া উপজেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শামীমের স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেন। আগামী রোববার তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার কথা ছিল।
নিহত শামীমের সাথে থাকা তাঁর নিকট আত্বীয় নূরুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার ২৯ ফেব্রুয়ারী রাতে দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে তারা দু’জন একসঙ্গে করে হোটেল ক্যাপিটেল থেকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কফি খেতে যান।
এসময় ওই রেস্টুরেন্টে অবস্থান নেয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় রেস্টুরেন্টের নিচের দিকে কালো ধোঁয়াসহ কয়েকটি আওয়াজ শুনতে পান। তখন আতাউর রহমান শামীম উঁকি মেরে ধোঁয়া দেখতে পান। এরপর তারা প্রথমে নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে কিছু না দেখায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন। এসময় লোকজনের ভীড়ে আতাউর রহমান শামীমকে আর দেখতে পাননি নূরুল আলম। হেলিপ্যাডের মাধ্যমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও অ্যাডভোকেট শামীম শ্বাস রোধে মারা যান।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, নওয়াব আলী আব্বাস খান, সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন,
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোকাব্বির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার ২ আবু জাফর রাজু, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সহ-সভাপতি একেএম শফি আহমদ সলমান, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, পৌর মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন