মনু নদীতে ‘জলাধার’ না থাকায় তৈরি হচ্ছে সেচ-সংকট
March 31, 2024,
![](https://i0.wp.com/www.patakuri.com/wp-content/uploads/2024/03/news_image_05e3e3209dbc0329ce300262a20569051711882489.jpg?fit=800%2C445&ssl=1)
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলার কাউয়াদীঘি হাওর ঘিরে তৈরি হওয়া মনু নদ সেচ প্রকল্প হাওরপারের কৃষকদের মধ্যে আশা-ভরসার উৎস হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেচনালায় পানি সরবরাহ ব্যাহত হলে সেচ-সংকটে উদ্বেগ তৈরি করে কৃষকদের। পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ‘জলাধার’ না থাকায় বিকল্প সেচের উপায় থাকে না। কৃষকেরা বলছেন, সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহের উৎস মনু নদের মাতারকাপনে স্থাপিত মনু ব্যারাজ। উজান থেকে পানিপ্রবাহ কমে গেলে ব্যারাজে পানির স্তর নেমে যায়। তখন সেচনালায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে তাঁরা সেচ-সংকটে পড়েন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, মনু নদের উৎস ত্রিপুরায় সেচের জন্য পানি ধরে রাখলে এদিকে পানিপ্রবাহ কমে যায়। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আসা পানি সংরক্ষণের জন্য ক্যানেলের সঙ্গে যুক্ত স্থানে জলাধার তৈরি করতে পারলে পানি ধরে রাখা যেত। পানি সংরক্ষণের জলাধার তৈরির জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দুই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমির আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনু নদের উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলার দক্ষিণে পাহাড়ি অঞ্চলে। ত্রিপুরার উনকোটি জেলার মনুঘাট থেকে মনু নদ নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কৈলা শহরের কাছে আন্তর্দেশীয় সীমানা অতিক্রম করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরপর কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে ৭৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সদর উপজেলার মনুমুখে কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। উজানে ভারী বর্ষণ হলেই খরস্রোতা নদটি ফুলেফেঁপে ওঠে। আগের মতো ঘন ঘন বাঁধ ভেঙে বন্যা না হলেও শঙ্কা থেকেই যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিলো।
পাউবো সূত্র জানায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ দিতে ১৯৮৩ সালে সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর নিয়ে মনু নদ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পে সেচের আওতায় ১২ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমি আছে। সেচ-সুবিধা দিতে তৈরি করা হয় ১০৫ কিলোমিটার সেচনালা। বর্ষায় প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্প হাউসের মাধ্যমে পানিনিষ্কাশনের ফলে আকস্মিক বন্যা থেকে বোরো ফসল রক্ষা পাচ্ছে। তবে প্রতিবছরই বোরো মৌসুমে সেচের পানি নিয়ে হাওরপারের কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। এবারও মনু নদ সেচ প্রকল্পে সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপনের পশ্চিমের মাঠে সেচ-সংকট দেখা দেয়। পরে পাউবোর উদ্যোগে অন্য সেচনালায় সরবরাহ কমিয়ে বড়কাপন মাঠে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকেরা উদ্বেগমুক্ত হন।
পাউবো ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তের শরীফপুর থেকে ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে সদর উপজেলার মাতারকাপনে মনু নদ সেচ প্রকল্পের ব্যারাজ নির্মাণ করা হয়। নদের পানির পুরাটাই আসে ত্রিপুরা থেকে। অন্যদিকে ত্রিপুরায় নদের ওপর ব্যারাজ দিয়েছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছর ১৫ দিন থেকে এক মাস এপারে পানির সংকট দেখা দেয়। মনু ব্যারাজে ৩৮ ফুট উচ্চতায় পানি থাকলে সেচ-সংকট হয় না। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণ ও ভারতে পানি আটকে রাখলে পানিপ্রবাহ কমে যায়। তখন পানির উচ্চতা ৩৪ থেকে ৩৫ ফুটে নেমে যায়। তখন সেচখালে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
পাউবো বলছে, প্রকল্প এলাকায় সেচনালার সঙ্গে সংযুক্ত জায়গায় ছোট-বড় জলাধার তৈরি, সেচনালা খনন ও ১৫-২০ কিলোমিটার নতুন সেচনালা তৈরির একটি প্রকল্প প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ‘জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় স্থানীয় পর্যায়ে মনু সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন