মনু নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ৫ কোটি টাকার কাজ বন্ধ

March 16, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারে ‘মনু নদী প্রকল্পে’র শহর রক্ষা বাঁধের একাংশের ৫ কোটি টাকার কাজ বন্ধ রয়েছে। বাঁধের নকশা বরাবরে অন্যের মালিকানা থাকায় ওই জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে আগাম বন্যার পূর্বে বাঁধের কাজ সমাপ্ত না হলে মনুর তান্ডবে জেলা শহরকে তছনছ করে দিতে পারে এমনটা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান’র নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, ৯শ ৯৬ কোটি টাকার কাজের একাংশের কাজ শুরু করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) মন প্রকল্পের ওই কাজটি শুরু করে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল। কাজটি শেষ হবার কথা ছিল চলতি বছরের ৩ জুন। ওই প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু নদী রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হলেও মৌলভীবাজার শহরের শাহবন্দর থেকে নতুন ব্রীজ এলাকার সাড়ে ৬ কিলোমিটার জায়গায় এসে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কাজের শুরুতে ওই এলাকায় ১ কি. মি. জায়গায় মাটি খুঁড়ে রাখলেও ভেস্তে যাচ্ছে প্রাথমিক ব্যয়।
খোদ মৌলভীবাজার পাউবো কার্যালয় জানিয়েছে, ওই কাজের সাড়ে ৬ কি.মি. এর অধিকাংশ অংশের মালিকানা সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও ব্যক্তি মালিকদের। এরই মধ্যে সড়কের দেড় কি.মি. জায়গা পাউবার’র সাথে সড়ক বিভাগের মিশে গেছে। তারা আরো জানায়, শুধু ওই জায়গায় বাঁধের কাজ বাদ দিয়ে বিকল্প ফ্লাড ওয়াল করলে সরকারের খরচ হবে ১শ কোটি টাকা। কিন্তু এতো টাকা তো সরকার খরচ করবে না। এখন কাজ করতে হলে প্রয়োজন জমি অধিগ্রহণ।
এদিকে, মৌলভীবাজার শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, ভূমি অধিগ্রহণ করা একটি লম্বা প্রসেস। অধিগ্রহণ না করা সড়কে পাউবো কোন যুক্তিতে শহর রক্ষা বাঁধের কাজ করার চিন্তা করে? তারা আরো জানান, এখন যদি তারা ভূমি অধিগ্রহণের কথা ভাবেন, তবে অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও ওই সাড়ে ৬ কি.মি. অধিগ্রহণ করা সম্ভব হবে না। আর কাজ না হলে আগাম বন্যায় জলে ডুবে মরতে হবে আমাদের।
সচেতন মহল আরো জানান, গেল বছর জুড়ে ওই বাঁধের প্রায় ৬ কি.মি. এলাকা থেকে দিন-দুপুরে কোটি কোটি টাকার বৃক্ষ কেটে নেয় প্রভাবশালীরা। জেলা প্রশাসন, সড়ক বিভাগ, ব্যক্তি মালিক ও পাউবোর মালিকানায় থাকা এসব জায়গার বৃক্ষ কেটে নেবার পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানালেও আজো কোন সিদ্ধান্তে পৌছায়নি।
কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যান আপ্পান আলী এক প্রশ্নের জবাবে জানান, আমার জানা মতে মনু নদীর পাড়ের ব্যক্তি মালিকরা নিজেদের জমি অধিগ্রহণ করতে চায়নি। স্থানীয় তহসীল অফিস থেকে ঠিকাদারদের আপত্তি দিয়ে কাজটি বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, কাজ বন্ধ করায় ঠিকাদারের বহু লোকসান হচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমবি কামরুজ্জামান কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী লিঃ এর সত্বাধিকারী খাইরুজ্জামান শ্যামল জানান, ওই বাঁধ নির্মাণ করতে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিচ্ছেন না। নদীর চর থেকে মাটি আনতে এখন বাঁধা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। এই কারণে আমরা নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, মনু নদীর পাড় বিভিন্ন মালিকানায় থাকা জমিতে বাঁধ নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান’র নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এসে সরেজমিনে ভিজিট করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com