মন্দিরের কাজে অনিয়ম : দরপত্র অনুযায়ী রড ব্যবহার না করায় বন্ধ হলো কাজ

তমাল ফেরদৌস॥ মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন কালী মন্দিরের কাজ দরপত্র মোতাবেক রড ব্যবহার না করায় বন্ধ হলো। মন্দির কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
এসময় দরপত্র মোতাবেক দশ মিলিমিটার রড ব্যবহার করে মন্দির কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে পুনরায় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান।
জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের সেন্ট্রাল রোডের পুরাতন কালীবাড়ী ভেঙে নতুন মন্দির নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। মন্দিরের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বাবা গাছপীর এন্টারপ্রাইজ’ এবং দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী।
অভিযোগে জানা যায়, ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী কাজের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার ও মন্দিরের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাদের একাংশ ঢালাই করে ফেলেন। এসময় কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করতে বলেন। এরপর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারী শনিবার সরজমিন পরিদর্শন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্ত।
কার্যকরি কমিটি ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার সূত্র জানায়, সিডিউলে আছে ১.৫.৩ অনুপাতে সিমেন্ট, বালু ও খোয়া দেওয়া। কিন্তু সেখান ১:৪:৮ দিয়ে ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। অন্যদিকে ছাদে দশ মিলিমিটার রডের পরিবর্তে আট মিলিমিটার রড ব্যবহার করা হয়।
মন্দিরের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিন্টু দেব জানান, ঠিকাদার কাউকে না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাদের একাংশ ঢালাই করে ফেলেন। এখানে নিয়ম ছিলো আমাকে ও কার্যকরি কমিটিকে জানানো। এটা না করে তিনি যে কাজ করেছেন সেটা অন্যায় এবং অপরাধ।
বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্তকে জানানো তিনি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান।
এলাকার বশির মিয়া,মিনু মিয়া, সুব্রত বৈদ্য, রাজ সরকার জানান, একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কাজ এটি। এই কাজ সরকারি বরাদ্দের। ইঞ্জিনিয়ার ও কার্যকরী কমিটির চলমান কাজে ঠিকমতো তদারকি না করায় এই অবস্থা বলেও অভিযোগ করেন তারা।
মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় কালীবাড়ীর কার্যকরী কমিটির সভাপতি মনবীর রায় মঞ্জু এবং সাধারন সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু জানান, ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে ছাদ ঢালাই শুরু করেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন আংশিক নির্মানাধীন ঢালাই ভেঙ্গে দরপত্র মোতাবেক কাজ করা হবে।
‘বাবা গাছপীর কন্সট্রাকশন’ নামে প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী এ বিষয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মন্তব্য করুন