মাধবপুর সড়ক ট্রাজেডি : ‘অন্তিম শয়নে তারা’

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ মালয়েশিয়া প্রবাসী রাজু মিয়া দীর্ঘ ৮ বছর পর দেশে ফিরছেন। তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আনতে শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন ভাই-বোন-ভাগ্নিসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন। হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে উৎফুল্ল মনে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। কিন্তু পথিমধ্যে থমকে যায় সকল স্বপ্ন।
৮ বছরের আনন্দ সড়কের মধ্যেই শেষ। হাসিমুখ মলিন হয়ে নিমিষেই ঘটে যায় এক ট্রাজেডি। আনন্দের যাত্রায় নিমিষেই নেমে আসে বিষাদ। ট্রাক, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সেখানে প্রাণ হারান শিশুসহ ৫জন ব্যক্তি। হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক দূর্ঘটনার পর সিলেটজুড়ে বিষাদ নেমেছে। উপজেলা শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে। স্বজনদের আর্তনাদে নিঃস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা।
এদিকে শনিবার ৭ জানুয়ারি বাদ আসর অশ্রুসিক্ত নয়নে জানাজা শেষে কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে নিহতদের বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়। অন্তিম শয়নে শেষ বিদায় জানাতে জানাজায় দুর-দুরান্ত থেকে হাজারো মানুষ উপস্থিত হন। এসময় শোকে স্তব্ধ দেখা যায় স্বজনদের। জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মাদানগর গ্রামের প্রবাসী রাজুর ছোট ভাই সিহাবের (১৩) জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
একই উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গাড়ি চালক সাদিরের (৩২) লাশও তার এলাকায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। বাকি তিনটি লাশ কমলগঞ্জের ভেড়ারচর গ্রামে দাফন করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম (৩২), তার স্ত্রী সাদিয়া (২১) ও তাদের শিশুসন্তান হাবিবা (২)। তারা প্রবাসী রাজুর ভগ্নীপতি, বোন ও ভাগ্নি। এর আগে শনিবার ৭ জানুয়ারি গভীর রাত আনুমানিক ২টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার শাহাপুর নামক স্থানে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মাদানগর গ্রামের ক্বারী নুরুল হকের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী রাজু মিয়াকে আনতে পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে মাইক্রোবাসে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার শাহাপুর নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক সরাসরি মাইক্রোবাসকে দুমড়ে মুছড়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে গাড়ী চালকসহ ৩ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে ২ জনসহ ৫ জন প্রাণ হারান।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন