মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে প্রবাসীকে হয়রানী, অবশেষে পিবিআই’র তদন্তে প্রমাণ হল প্রকাশিত সংবাদই সত্য

February 26, 2024,

আব্দুর রব॥ বড়লেখায় অবশেষে পিবিআই কর্মকর্তার তদন্তে প্রমাণ মিলল দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ি আব্দুর রহিম ওরফে রহিম উদ্দিন ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে পূর্ব-শত্রুতার জেরেই কু-চক্রী মহলের ইন্ধনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন উপজেলার হাল্লা গ্রামের মৃত সজিব আলীর ছেলে কামাল উদ্দিন। কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা দায়েরে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ঘটনাস্থলে না থেকেও হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি করায় এলাকায় তোলপাড়’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাও তাদের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাননি।
বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে মামলার (জিআর-১৯/২৩) প্রধান আসামি দুবাই প্রবাসী আব্দুর রহিম ওরফে রহিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না মর্মে তাকে মামলা হতে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন। পরে বাদির না-রাজি পিটিশনে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার পিবিআই’র এসআই মো. সাইফুর রহমান সফিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি গত ১৫ জানুয়ারি বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা গ্রামের কামাল উদ্দিনের দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে প্রবাসী রহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে জয়নাল উদ্দিন, আতাউর রহমান, রহমান মিয়া, শাহীন আহমদ ও আব্দুন নুর হাল্লা গ্রামের জামাল উদ্দিনকে তার বাড়ির সামনের রাস্তায় হত্যার উদ্দেশ্যে দা, লোহার রড, ডেগার ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এতে জামাল উদ্দিন রক্তাক্ত জখম হন। এঘটনায় আহত জামাল উদ্দিনের ভাই কামাল উদ্দিন পরদিন দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ি রহিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই মো. সাইফুর রহমান সফি উল্লেখ করেন, মামলাটির তিন নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা তিনি। তদন্তকালে জানতে পারেন মামলার এজাহার নামীয় আসামিদের সাথে বাদির পূর্ব হতে মনোমালিন্য থাকার কারণে তিনি (বাদি) মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে বিবাদিদের কেহই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, বিবাদিরা কেহই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাছাড়া অত্র মামলায় অজ্ঞাতনামা কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ত থাকারও প্রমাণ মিলেনি।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, মামলাটি সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এজাহার নামীয় বিবাদি জয়নাল উদ্দিন, আতাউর রহমান, রহমান মিয়া, শাহীন আহমদ ও আব্দুর নুর এর বিরুদ্ধে বাদির আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয় নাই। তার তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে এজাহার নামীয় বিবাদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় পূর্বের তদন্তকারি কর্মকর্তার দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের ধারাবরিহকতা হিসেবে উপরোল্লিখিত এজাহারনামীয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে বিচারের নিমিত্তে বড়লেখা থানার সম্পুরক অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল এবং এজাহারনামিয় এক নম্বর বিবাদি আব্দুর রহিমকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মৌলভীবাজার পিবিআই এর এসআই মো. সাইফুর রহমান সফি বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআর-১৯/২০২৩ নং মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে তদন্তে উক্ত মামলা হতে অব্যাহতির প্রার্থনাভুক্ত দুবাই প্রবাসী রহিম উদ্দিনের স্ত্রী সুলতানা বেগম অভিযোগ করেন, পূর্ব-বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ একের পর এক আমি, আমার স্বামী ও স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সম্প্রতি তাদের পক্ষের জনৈক বাবুল মিয়া আমিসহ আমার পক্ষের পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ক্রয়কৃত ভোগদখলিয় জমির ওপর ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ ধারার বিধান মোতাবেক স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বড়লেখা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com