মৌলভীবাজারের বড়হাটে চলছে অপারেশন ‘ম্যাক্সিমাস’ শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত, পুলিশ আহত : শনিবার সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হবে

March 31, 2017,

এস এম উমেদ আলী॥ মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানা দখলে নিতে সোয়াত টিম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মুহুমুহু গুলি ও বোমার শব্দে কম্পিত হয়ে উঠছে আশপাসের এলাকা। আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। সুয়াত তাদের এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। অভিযান চলাকালিন সময় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন।
শুত্রুবার ৩১মার্চ বিকেল ৫টায় পৌনে পুলিশের সাজায়া যান ব্যবহার করে ৩ তলা বাড়ির লোহার গেইট ভাঙ্গা হয়। এ সময় ঘরের ভেতর শক্তি শালি বোমা বিষ্ফোরনের শব্দ শুনা যায়। সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহা সড়ক। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় জানান এ অস্তানায় অনেক বিস্ফোরক ও একাধিক লোকজন রয়েছে। আজকের জন্য অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার থেকে আবার অভিযান শুরু হবে।
শুক্রবার ৩১ মার্চ সকাল পৌনে ৮ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকাল পৌনে ১০ টার দিকে অভিযান শুরু করে সোয়াট। সকালে বড়হাটে পৌঁছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে খবর রয়েছে এ জঙ্গি আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, একজন বোমা বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত জঙ্গি রয়েছে। সে কারণেই অপারেশন শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তিনি বলেন, সিলেটের আতিয়া মহলের ঘটনার সূত্র ধরেই চিহ্নিত করা হয়েছে মৌলভীবাজারের বড়হাটের আস্তানা। কিছুক্ষণ আগে থেকেই সোয়াট পরিচালিত অভিযান শুরু হয়েছে। অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ম্যাক্সিমাস’। ওই আস্তানায় অনেকগুলো কক্ষ রয়েছে। জনবলও রয়েছে একাধিক। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে মনিরুল ইসলাম।


দুপুর ১টার দিকে জঙ্গি আস্তানায় প্রবেশের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী বাড়ির পাশের গাছ কাটতে থাকে। এমন সময় সোয়াতের অভিযান মেক্সিমাস চলাকালিন সময় বাড়ি থেকে জঙ্গিদের ছুড়া বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় পুলিশ সদস্য কয়ছর (৩০) আহত হন। আহত কয়ছর মৌলভীবাজার ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর বাড়ির ভিতরে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়। বোমার আঘাতে বাড়ির একটি দেয়াল ভেঙ্গে পরে বলে জানা যায়। বিকেল সাড়ে পৌনে ৫টার দিকে আবারও প্রচন্ড গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরিত হয়। জঙ্গি আস্তানার উপরে ধোয়া উরতে দেখা যায়। অভিযানে সুয়াত টিম প্রচন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে। বর্তমানে সোয়াতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে তবে কোন গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে রাত থেকে কয়েক ধাপে প্রচন্ড গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ও পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ড দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃংখলা বাহিনি চেক পোষ্ট বসিয়ে তল্লাসি চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামে আরও একটি বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ।
গত রাতে সদর উপজেলার নাসির পুরের জঙ্গি আস্তানা বাড়ি থেকে ৪ শিশু ২ নারী ও ১ যুবকের খন্ড-বিখন্ড লাশ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতারের মর্গে রাখা হয়। এদের এখোনো কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে শহরের বড়হাটে তিন দিন ধরে ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্থনার চারপাশে ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) জুয়েল আহমেদকে নিয়ে চক্কর দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আজ শুক্রবার অভিযান চলাকালে জুয়েলকে নিয়ে বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেন সোয়াটসহ পুলিশের কর্মকর্তারা।
এর আগে গত দুদিনেও বাড়িটি রেকি করতে পুলিশকে জুয়েলের সহযোগিতা নিতে দেখা গেছে। গত বুধবার জুয়েল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পৌরসভার বড়হাট এলাকায় তাঁর মালিকের আরেকটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পাওয়ার পর পুলিশ এ বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। ওই সময় পুলিশ তাঁকে দিয়ে ভাড়াটিয়াদের দরজায় কড়া নাড়ায়।
জুয়েল ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা কি জঙ্গি?’ এ কথা শুনেই ভাড়াটিয়ারা দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়ে গ্রেনেড ছুড়ে মারে।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com