মৌলভীবাজারে উপর দিয়ে বইচে শৈত্যপ্রবাহ : দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

January 16, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারে মাঘের শুরুতে আবারও জেঁকে বসছে শীত। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো জেলাজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিন রাত সমান তালে বইচে কনকনে হিমেল হাওয়ার সাথে শৈত্যপ্রবাহ। ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেড় হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন তারা গরম কাপড় পরিধান করে বের হচ্ছেন। পাশাপাশি ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে রয়েছে পূরো মৌলভীবাজারের আকাশ। প্রায় গেল এক সপ্তাহ থেকে সূর্যের দেখা মিলেনি। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূর্যের একঝলক মুখ দেখাযায়। টানা কয়েকদিনের শীতের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
শীতে সবচেয়ে বেশী হাওর পাড়ের মানুষ, চা বাগানের শ্রমিক, ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই খড়খুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্ত বিবলু চন্দ্র জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা কেটে গেলে তাপমাত্রা আরও নামতে পারে।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, সোমবার ১৫ জানুয়ারি সকাল ৯টায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি থেকে ১৬ ডিগ্রির ভেতরে ওঠানামা করে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক বিনেন্দ্র ভৌমিক জানান, শুধু শিশুদের জন্য সিট রয়েছে ৩৯টি। গত সপ্তাহে শীতজনিত রোগে হাসপাতালে শিশু ভর্তি ৭০-৭৫ জন ছিল। যা প্রায় দ্বিগুন ভর্তি ছিল। বর্তমানে শিশু ভর্তি কমে আসছে।
এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গুলোতে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। পৃথক ভাবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। ফুটপাতে গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভীর প্রতিদিন ভাড়ছে।
তীব্র শীতে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ দিনমজুর মানুষ। সড়কে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় ভ্যান ও রিকশা চালকদের আয় কমে গেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, বোরো আবাদী জমিতে সেচ ও পাওয়ার টিলার দিয়ে কাজ করতে গিয়ে ছিলাম। এতো ঠাণ্ডা পানি ও বাতাস। যে কাজ করাই কঠিন হয়ে গেছে।
একই এলাকার বচ্চু মিয়া জানান, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ধানের চারা রোপনের কাজ করেন। কয়েক দিনের অতিরিক্ত শীত ও হিমেল বাতাশের কারণে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। বেশী সময় পানি ও কাঁদার মধ্যে কাজ করা যায়না।
উপজেলার নিতেশ^র এলাকার শিমুল আহমদ জানান, প্রচন্ড কুয়াশা ও খুব ঠান্ডা পড়ছে। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে আসবাপত্র ও বিছানা পর্যন্ত যেনো সব বরফ হয়ে গেছে। সকালে ঘরে থেকে বের হয়ে বোরো আবাদে গেলে হাত-পা ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসে।
মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা এলাকায় আরবেশ আলী সহ কয়েকজন দিন মজুরের সাথে কথা হয়, তারা বলেল কাজের সন্ধানে প্রতিদিন এখানে আসেন। অনেক দিন কাজ পাওয়া যায়না। কাজ পেলেও অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য কৃষি জমিকে কাজ করা যায়না। জীবিকার তাগিদে তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার হেক্টর জমি। ঘন কোয়াশার কারণে বিজতলা ক্ষতির সম্বাবনা রয়েছে। তারা কৃষকদের চারা গাছগুলো পাতলা পলিথিন দিয়ে প্রতি রাতে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও কোয়াশা কমে গেলে পলিথিন সরিয়ে একটি কাটি দিয়ে চারা গাছের আগা থেকে কোয়াশার পানি ফেলে দেয়ারও পরামর্শ দেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com