মৌলভীবাজারে চা জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসবে রঙ খেলা ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্য (ভিডিওসহ)

March 12, 2023,

স্টাফ রিপোর্টার॥ রঙের খেলা, প্রানের মেলা, যে দিকে তাকানো যায় সেদিকেই বাহারি রঙের ছড়াছড়ি। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সীরা মেতে ওঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। একে অপরের দিকে রঙে ছুড়ে রঙিন করে দিচ্ছেন, সেই সাথে রয়েছে নৃত্য ও গান। মৌলভীবাজারের চা বাগান গুলোতে চলছে চা জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব (দোল উৎসব)। উৎসব উপভোগ করতে আসেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা।

গত তিন বছর ধরে ফাগুয়া উৎসব বৃহৎভাবে উদযাপন করা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগান মাঠে। শনিবার বিকেলে ঘন্টা বাজিয়ে ফাগুয়া উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অনুষ্ঠানে গেষ্ট অব অনার ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার, সিলেট এর নীরাজ কুমার জায়সওয়াল।

চা শ্রমিক সন্তান প্রকাশ ভর ও পিংকি বর্মা এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ লিটন, ফাগুয়া উৎসবের আহবায়ক ও রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজী, সদস্য সচিব এবং কালিঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালাসহ অনেকে।

বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে নানান জাতিগোষ্ঠির বাস। চা শ্রমিকদের যেমন নিজেদের পৃথক ভাষা, তেমন পৃথক সংস্কৃতিও রয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেন একেকটি দেশ। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে তারা মেতে ওঠে রঙের উৎসবে।

হিন্দুধর্মীয় চা-শ্রমিকের অংশগ্রহনে ১১ মার্চ বিকেল থেকে শুরু হওয়া ফাগুয়া উৎসবটি সাতদিন ব্যাপী চলবে। এটি তাদের কাছে রঙের উৎসব ফাগুয়া নামে পরিচিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় চা জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব সংস্কৃতি। চা বাগানের বাসিন্দা এবং দুর দুরান্ত থেকে আসা দর্শক প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে আর চৈত্র মাসের প্রথম দিকে পূর্ণিমা তিথিতে চলে এ উৎসব। রঙ খেলার পাশাপাশি তাদের নিজেস্ব ঐতিহ্যবাহী নাচ আর গান উৎসবে বাড়তি যোগ হয়েছে।

উৎসবে ছিল চা শ্রমিকদের ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ৩০টি পরিবেশনা। পত্রসওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠি নৃত্য, হাড়ি নৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসাথে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজও।

ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক, বিজয় বুনার্জী বলেন, প্রায় পৌনে ২‘শ বছর আগে যারা এসেছিল সেসব চা শ্রমিকদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য এ আয়োজন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় চা জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব সংস্কৃতি। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে আর চৈত্র মাসের প্রথম দিকে পূর্ণিমা তিথিতে চলে এ উৎসব। রঙ খেলার পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ আর গান উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, এ অঞ্চলের আলোচিত উৎসব হচ্ছে ফাগুয়া উৎসব। এ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন সর্বস্থরের মানুষ। এ উৎসবকে আনন্দ মূখর করতে আরও সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবী জানান এই জনপ্রতিনিধি।

ভারতীয় সহকারী কমিশনার নীরাজ কুমার জায়সওয়াল বলেন, চা বাগানে পৌঁছাতেই কানে বাজলো পাহাড়িয়া মাদলের সুর। চা বাগানের অন্য পাড়ায় গেলেও গিয়েও চোখে পড়লো একই দৃশ্য। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী সবাই নাচছে গাইছে আনন্দ করছে। অনেক আয়োজন দেখেছি তবে এমন আয়োজন প্রথম দেখলাম। চা বাগানের মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি এতো সুন্দর না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, চা জনগোষ্টির কৃষ্টি সংস্কৃতি যেন কোনভাবে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য এক সাথে বড় পরিসরে উৎসব উদযাপনে সহযোগীতায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। ফাগুয়া উৎসব সহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির সংস্কৃতি রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহন করছে বললেন প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।

গত তিন বছর ধরে ফাগুয়া উৎসব বৃহৎভাবে উদযাপন করা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগান মাঠে। করোনার কারনে ২০২১-২২ সালে উৎসবটি সংক্ষেপে উদযাপন করা হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার বড় আকারে ফাগুয়া উৎসব পালন করছে চা বাগানে বসবাসরত নানান চা জনগোষ্টি।

ইউটিউবে ‍দেখুন পাতাকুঁড়ির ভিডিও গ্যালারি

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com