মৌলভীবাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের দূর্দিন বাজারে মাছ নেই,ক্রেতাও কম

ইমাদ উদ দীন॥ হাওরে মাছের মড়কে প্রভাব পড়েছে জেলার স্থানীয় বাজার গুলোতে। এখন বাজারে তেমন মাছও নেই। আর ক্রেতাও কম। গেল ক’দিন থেকে আগের মত জমজমাট নয় মাছের বাজার। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাকডাক আর হৈ হুল্লুড় চোখে পড়ছে কম। এখন অনেকটা দূর্দিন যাচ্ছে জেলার স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের। জেলার হাওর তীরবর্তী মাছের বাজার গুলোতে মিলছেনা দেশীয় প্রজাতির মাছ। বাজারে যে গুলো উঠছে তা ফিশারী কিংবা বাহিরের (চালানি) মাছ। এমন মাছে আগ্রহ কম ক্রেতাদের। তাছাড়া ওই মাছ গুলোর দামও চওড়া। দরও আগের চাইতে এখন কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি। হাওরে মাছের মড়কের পর স্থানীয় মাছের বাজার অনেকটাই ক্রেতা শূন্য। নানা রোগ জীবাণু আর অজানা শঙ্কায় মাছের বদলে সবজি, ডাল আর মোরগের মাংসের দিকে ঝুঁকছেন তারা। জেলার মৎস্য চাহিদা যোগানের অন্যতম উৎস হাকালুকি,কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর ছাড়াও অনান্য হাওরগুলোতে এবছর একে পর এক র্দূযোগে নাকাল।
বোরো ধানের পর মাছে ও অনান্য জলজ প্রাণির মড়ক। তাছাড়া হাওর তীরবর্তী এলাকার ব্যাপক সবজি ক্ষেতও বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ এমন দূর্যোগে দিশেহারা স্থানীয় কৃষি ও জেলে পরিবার। বোরো ধান,মাছ,হাঁস আর সবজি ক্ষেত হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা নির্বাক। জেলা মৎস্য কার্যালয় সুত্রে জানা যায় জেলায় ৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে হাকালুকি হাওরে (মৌলভীবাজার অংশে) উৎপাদন হয় ২৫ মেট্রিকটন। এবছর হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে জেলার হাওর গুলোর থোড়ওয়ালা ও আধপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় পানিতে নিমজ্জিত বোরো ধান পচে এ্যামুনিয়া গ্যাসের কারনে পানি দূষিত হয়। এতে হাকালুকি হাওরে মারা যায় দেশীয় প্রজাতির ২৫ মেট্রিকটন ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ। তাদের তথ্য মতে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়াতে ৮,জুড়িতে ৭ ও বড়লেখা উপজেলা অংশে ১০ মেট্রিকটন মাছ মারা যায়। হাকালুকি হাওর পাড়ের মৎস্যজীবীরা জানান এর আগে এমন মাছের মড়ক কখনো দেখেননি তারা। হাকালুকির মত মাছের মড়ক না হলেও নানা কারনে জেলার অনান্য হাওরেও দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে কম। হাকালুকি হাওর পাড়ের জেলেরা জানান গেল ২-৩ দিন থেকে তারা হাওরের বিল এলাকায় জাল ফেলে মাছ পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় জাল ফেলে অপেক্ষার পরও মাছ ধরা পড়ছেনা জালে। অনেকটা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন তারা। মাঝে মধ্যে দু একজনের জালে ধরা পড়ছে অল্প মাছ। হাওর তীরের ঘাটের বাজার সব সময় হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় দেখা গেলেও এখন নেই তেমন ক্রেতা বিক্রেতা। কারন হিসেবে স্থানীয় সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী বাছির মিয়া, দুদু মিয়া,সামরুল মিয়া,সুজাত মিয়া, ফয়ছল মিয়া, নাসিম মিয়া,আয়াছ আলীসহ অনেকেই জানান হাওরের মাছের মড়কের পর জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে একে বারেই কম। হাওরের মাছ ছাড়া এবাজারে অন্য কোন মাছ উঠেনা। যে বাজারে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হত এখন এ বাজারে নেই চোখে পড়ার মত ক্রেতা বিক্রেতা। বলতে গেল ক’দিন থেকে আমরা অনেকটা অলস সময় পার করছি। হাওরে মাছ কমে গেছে,এজন্য জাল ফেলে অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। আমরা মাছ না পাওয়াতে স্থানীয় মাছ বাজারের অবস্থাও বেহাল দশায়। তারা বলেন হাওরে এত অল্প মাছ ধরা পড়লে মহাজনকে দিব কি। আর নিজে খাব কি। বেশি মাছ ধরে বিক্রি করতে না পারলে কি করে সংসার চলবে। এ ভাবে চলতে থাকলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। একই অবস্থা হাওর তীরের আছুরি ঘাট এলাকায়। প্রতিদিন যে খানে হাকালুকি হাওরের নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা এখন ওখানে আছেন দু একজন মাছ ব্যবসায়ী। সকাল থেকে রাত ছোট ছোট নৌকা ভরে মাছ ওখানে আসলেও এখন নেই তেমন ক্রেতা বিক্রেতা কারো আনা গোনা। স্থানীয়রা জানালেন এই দুই বাজার ছাড়া হাকালুকি হাওরের মাছ বিক্রি হয় ইসলামগঞ্জবাজার,গৌড়করণ বাজার,নবাবগঞ্জ বাজার,মনসুরগঞ্জ বাজার,ভূয়াইবাজার,হাকালুকি বাজার (কানগো বাজার),বরমচাল,ভাটেরা ও ব্রাহ্মণবাজারসহ কুলাউড়া,জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গুলোতে। কিন্তু গেল ক’দিন থেকে ওই বাজার গুলোতে আগের মত মাছ উঠছে কম।
ওই বাজার গুলোতে হাকালুকি হাওরের মাছ আগের মত (পাইকারী ও খুচরা) বিক্রি না হওয়াতে প্রভাব পড়েছে জেলা শহরসহ অন্য উপজেলার স্থানীয় বাজার গুলোতেও। ব্রাহ্মণবাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাবিদ আলী ও আয়াত আলী বলেন আগের মত হাকালুকি হাওরের মাছ আসছে কম। তাছাড়া হাওরের মাছ খেলে সমস্যা হবে স্থানীয় মানুষের মধ্যে এমন ভয় কাজ করছে। তাই অনেকেই মাছ খাচ্ছে না। মৌলভীবাজার শহরের টিসি মার্কেট ও পশ্চিম বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ,রিপন মিয়া, সুলতান আহমদ, আব্দুল জলিল,বিল্লাল উদ্দিনসহ অনেকেই জানান এখন তাদের কাছে হাওরের মাছ আসছে কম। যে গুলো আসছে সে গুলোর ক্রেতাও কম। তারা বলেন সম্প্রতি হাওরে ব্যাপক হারে মাছ মরে পচে যাওয়ার পর মানুষ এসব দেখে এখন নিজে থেকেই মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওই এলাকায় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে হাওরের এসকল মরা মাছ না খেতে মাইকিং করা হলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে হাওরের মাছ নিয়ে ভয় ঢুকে যায়। নানা জনের নানা কথায় এখন লোকজন মাছ বাজার মুখী হচ্ছে কম। এমন চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটাতে হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ.ক.ম শফিক উজ-জামান ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন হাওরের অবস্থা এখন ভালো হয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছ গুলো বিষাক্ত নয়। এই মাছ গুলো খেলে সমস্যা হওয়ার কথা না। খুব শিগগিরই মাছের এই সংকট কাটবে। আমরা জুনের মধ্যেই হাকালুকিতে ১৮ লক্ষ পোনা মাছ অবমুক্ত করব।
মন্তব্য করুন