মৌলভীবাজার-২ বহিরাগতদের আগমণে উদ্বিগ্ন ভোটাররা, শঙ্কায় তৃণমূল বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ

January 6, 2024,

মাহফুজ শাকিল॥ রাত পোহালেই মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। কিন্তু বহিরাগতদের আগমণে সাধারণ মানুষসহ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা বেড়েছে। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সন্দিহান প্রকাশ করছেন প্রতিদ্বন্ধি দুই প্রার্থী। এ বিষয়ে জেলা রিটানির্ং অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী এম এম শাহীন পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। যার অনুলিপি সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুলাউড়া, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুলাউড়াকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই অভিযোগের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবরে পাঠান স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান।
এরআগে গত ৪ জানুয়ারি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী এম এম শাহীন।
লিখিত অভিযোগে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী (সোনালী আঁশ) এম এম শাহীন উল্লেখ করেন, দ্বাদশ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কুলাউড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই এর আলামত স্পষ্ট হয়েছে। নৌকার পক্ষে বহিরাগত লোকজন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ী ও হোটেলে শত বহিরাগত লোকেরা অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের দিন এই বহিরাগতরা ভোটের পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। আমার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের সমর্থক উপজেলার বিভিন্নস্থানে সোনালী আঁশ প্রতীকের সমর্থকদের কেটে ফেলা, মেরে ফেলা ও গুম করার হুমকি দিচ্ছে। এতে আমার কর্মী সমর্থকরা আতঙ্কিত। এ ধরণের হুমকিতে ভোটার উপস্থিতি হ্রাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয় বহিরাগতরা প্রকাশ্যে কেন্দ্র দখল করারও হুমকি দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকার, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনের একান্ত চাওয়া-যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করা। কিন্ত কুলাউড়ার আইনশ্ঙ্খৃলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন ও বহিরাগতদের বিতাড়িত করা না হলে মৌলভীবাজার-২ আসনের নির্বাচন দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) একেএম সফি আহমদ সলমান তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের পক্ষে সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় কয়েক হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কুলাউড়ার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, হোটেলে অবস্থান নিয়েছে। তারা কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় আমার ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের প্রাণনাশ ও গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমার কর্মী-সমর্থকরা আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এ ধরণের হুমকিতে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ওই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে কেন্দ্র দখল করার জন্য নানা পায়তারা করছে। সেই লক্ষে তারা ভোটের আগের দিন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র দখল করার পরিকল্পনা করছে। এতে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণের পরিবেশ নষ্ট করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (নৌকা), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন (সোনালী আশঁ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন (কাঁচি), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা)।
কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন।
অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নয়। তবে যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের মোবাইল টিম মাঠে রয়েছে। বহিরাগত কাউকে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, বহিরাগতদের বিষয়ে দুই প্রার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। কয়েকটি এলাকায় অভিযানও চালানোর পরও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে যদি কোন বহিরাগতদের পাওয়া যায় বা তারা ভোটারদের হুমকি ও কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রার্থীদের শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। ৮জন ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশের ১৪টি মোবাইল টিম, আনসারহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com