শ্রীমঙ্গলে কৃষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

June 6, 2016,

বিশেষ প্রতিনিধি॥ সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২০-২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বীজ আলুর সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ৬০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নিত করবে। ৫ জুন রোববার শ্রীমঙ্গলে বিএডিসির আলুবীজ হিমাগারে এক কৃষক কর্মশালয়া এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি) এর আলুবীজ বিভাগ , ঢাকা এর বিএডিসি হিমাগার এবং শ্রীমঙ্গল আলু বীজ হিমাগারের আয়োজনে জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি বীজ উন্নয়ন, বর্ধিতকরণ, মাননিরূপণ ও প্রযুক্তি বিস্তার প্রকল্পের আওতায় এক কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষক, সুধী সমাজ ও মিডিয়ার কর্মী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আলুর বিভিন্ন জাতের পরিচিতি ও ফলন নিয়ে খোলা আলোচনা হয়। কর্মশালায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা অঞ্চলের বিএডিসি আলু বীজ বিভাগের উপ পরিচালক (মাননিয়ন্ত্রন) এ এস এম খায়রুল হাসান, শ্রীমঙ্গল আলু বীজ হিমাগারের উপ পরিচালক (টিসি) খলিলুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক সেলিনা বেগম। কর্মশালায় সিলেট বিভাগের মাধবপুর, চুনারুঘাট, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১০০ আলু কৃষক উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, আলু বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ফসল। অনেক দেশে আলু প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ দেশে আলু জনপ্রিয় সবজি ও বিভিন্ন খাবার/ কনফেকশনারি সামগ্রীর প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে শিল্পে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার যেমন-ফ্লেক্স, চিপস ও ক্রিপস, ফ্রেন্স ফ্রাই ইত্যাদি উৎপাদন শুরুƒ হয়েছে। আলু এমন একটি সম্ভাবনাময় খাদ্য ফসল যা কেবল লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্য সরবরাহ করবে তাই নয় বরং এ দেশের খাদ্য ঘাটতি ও মানুষের পুষ্টিহীনতা থেকেও রক্ষা করবে। এভাবে আলু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এ ছাড়াও আলু রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় বর্তমানে এটি অর্থকরি ফসল হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। প্রতিনিয়ত দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে এবং আবাদযোগ্য জমি কমছে। এ অবস্থায় হোরাইজোনটালি ফলন বৃদ্ধি সম্ভব নয় বরং ভার্টিকালি ফলন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আলু ফসলের দ্বারা হোরাইজোনটালি ফলন বৃদ্ধি সম্ভব। কারণ একক আয়তনে আলুর ফলন ধান ও গমের চেয়ে ৪ গুণ বেশি।
আলুর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র রোগমুক্ত মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করে প্রায় ২৫% ফলন বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশের বীজ আলুর শ্রেণীবিন্যাস হতে লক্ষ্য করা যায় যে, ব্রিডার বীজ আলু বীজ বর্ধনের জন্য মূল উৎস। এ উৎস বীজ সুস্থ ও মান সম্পন্ন হলে তা থেকে পরবর্তী জেনারেশনে মানসম্পন্ন ভিত্তি ও প্রত্যায়িত/টিএলএস উৎপাদন করা সম্ভব।মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ভাইরাস। ইতোমধ্যে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাইরাসমুক্ত বীজ আলু উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দেশে গড় ফলন ১৫ মেট্রিক টন হতে ১৯.৫০ মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৪.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে এবং প্রায় ৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দেশে প্রতি বছর বীজ আলুর চাহিদা ছয়-সাত লক্ষ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদার তুলনায় মানসম্পন্ন বীজ আলুর সরবরাহের পরিমাণ খুবই কম।
বর্তমানে বিএডিসির ২২ টি হিমাগারে বীজ আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ সকল হিমাগারে বীজআলু ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার মেট্রিক টন। অপরদিকে ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ ৮টি হিমাগার নির্মাণাধীন রয়েছে। উক্ত বীজআলু হিমাগার নির্মাণ সম্পন্ন হলে ১৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর প্রেক্ষিতে বিএডিসির হিমাগার সমূহের ধারণ ক্ষমতা দাড়াবে মোট ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২০-২১ সালের মধ্যে বিএডিসির বীজ আলুর সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ৬০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নিত করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com