শ্রীমঙ্গলে নকল শিশুখাদ্য প্রসাদনীর কারখানার সন্ধান

বিকুল চক্রবর্তী॥ শ্রীমঙ্গলে নকল শিশুখাদ্য ও প্রসাধনী তৈরীর ২টি কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল ভানুগাছরোডের একটি বাসার দুইটি অংশে পৃথক পৃথক দুটি ভেজাল কারাখানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বিপুল পরিমান শিশু খাদ্য জুস, চকলেট, ওর স্যালাইন, আগর বাতি, গোলাপজল,প্যারাসুট বেলিফু তেল, শরিষা তেলসহ প্রায় ৩০ প্রকারের প্রায় দুই টাক ভেজার মাল উদ্ধার করা হয়। যা মানবে দেহের জন্য খুবেই ক্ষতিকর বলে জানান শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।
শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)মো: হুমায়ন জানান, শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোডের একটি বাসায় কারখানা স্থাপন করে দীর্ঘ দিন ধরে নকল ও ভেজাল পন্য সামগ্রী তৈরী করে বিক্রি করে আসছিলো একটি চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে ওই বাসায় দুটি নকলপন্যের কারখানা পান তারা। সারা রাত অভিযান করে ওই বাস থেকে প্রায় ৩০ প্রকারের হাজার হাজার পিস নকলপন্য উদ্ধার করেন। যার অধিকাংশ প্রসাদনী ও খাদ্য দ্রব্য।
তিনি জানান, এ সময় একটি কারখানার মালিক চাঁদপুর জেলার হাবিবকে তারা আটক করেন। অপরটিতে মালিক পালিয়ে গেলেও সেখানে দুইজন নারী শ্রমিককে পাওয়া যায়। এর মধ্যে হাবিব একই অপরাধে এর আগেও পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল। বাসা বদল করে সে আবারও শুরু করে তার অবৈধ ব্যবসা।
শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) নয়ন কারকুন, জানান, এ অভিযানে নকল প্রসাদনী ও শিশু খাদ্য ছাড়াও পাওয়াযায় গৃহস্থলিতে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নকল সামগ্রী। উদ্ধার হয় অনেক কেমিকেল। যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্কিন রোগের বাহক।
অভিযান পরিচালনায় থাকা এ এস আই জীবন বাগচী জানান, মানুষ মারা যাওয়ার পর কিংবা পূজা পার্বনে আমরা যে আতর, গোলাপজল ও ধুপকাটি ব্যবহার করি তা দেশী বেদেশী দামী কোম্পানীর প্যাকেটে ভরে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্রি করে আসছে এ চক্র। তিনি জানান, এতো মালামাল এর সিজার লিস্ট করতে তাদের সারা রাত লেগেছে। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য ক্যামিক্যাল যুক্ত আইসক্রীম, লিচু, মেঙ্গ জুস, ললিপপ, প্যারাসুট বেলিফুল নারিকেল তেল, শরিষা তেল, ওর স্যালাইন, টেংক, নকল ভাল্ব, মমো জর্দা, আতর, গোলাপ জল, বিভিন্ন বড়বড় কোম্পানীর নামীয় আগর বাতি, এমনকি তার কাছে পাওয়া যায় করোনাকালীণ সময়ের জন্য সেবকৃত হোমিওপ্যাতি ঔষধও। এ ছাড়াও সুপারগ্লো, বাসন মাজনীসহ আরো বহু রকমের নকলপন্য পাওয়া যায় তার কারখানায়।
পুলিশের হাতে আটক হাবিব জানায়, অন্য কোম্পানীর সিল নকল করে ভেজাল তেল বিক্রি করার দায়ে এর আগেও সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। দীর্ঘ দিন জেল কেটে বের হয়ে জীবিকার তাগিদে আবারও সে এ পেশায় নিয়োজিত হয়।
এদিকে বাসার পাশের অংশে পাওয়া যায় আরো একটি ভেজাল আগর বাতি, গোলাপ জল ও আতরের কারখানা। সেখানে শ্রীমঙ্গল সাতগাও এলাকার দুই নারী শ্রমিক কাজ করেন। ওই দুই নারী শ্রমিকের একজন সাফিয়া আক্তার জানান, তিনি দেড় বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। এর জন্য তিনি ৬/৭ হাজার টাকা পান। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আব্দুল মালেক। তার মুল বাড়ি চাঁদপুরে বর্তমানে শ্রীমঙ্গল মুসলিমবাগ এলাকায় বসবাস করছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছালিক জানান, ভেজাল পন্য ও প্রসাদনী উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
মন্তব্য করুন