শ্রীমঙ্গলে বিরামহীনসময় পার করছেন সৎকার কমিটি ও ইকরামুল মুসলীম ফাউন্ডেশন

বিকুল চক্রবর্তী॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিরামহীনভাবে দাফন ও সৎকারে ব্যস্ত রয়েছেন উপজেলা সৎকারকমিটি ও করোনা দাফনে নিয়োজিত ইকরামুল মুসলীম ফাউন্ডেশন। এখন পর্যন্ত করেনা ও করেনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন প্রায় ৭০জন। এর মধ্যে করোনায় সনাতন ধর্মালম্বী মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। আর মুসলিমসম্প্রদায়ের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২০ জন। ২৯জুলাই বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে ৩জন সনাতনধর্মালম্বী ও ২ জন মুসলিমধর্মালম্বীসহ ৫ জনমারা গেছেন।
শ্রীমঙ্গল সনাতন ধর্মালম্বী সৎকার কমিটির সদস্য সুদীপ দাশ রিংকু জানান, শুরু থেকে এখনপর্যন্ত তারা করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৫০ জনেরও বেশি নারী পুরুষের সৎকার করেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি মৃত্যুরহার বেড়েছে। মৃত দেহ লাইন ধরে থাকে। একের পর এক সৎকার করতে হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল সৎকার কমিটির অপর সদস্য সঞ্জয় রায় রাজ ুবলেন, বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বাগানের দুইভাই বোন বেনু ভট্টাচার্য্য ও শিলা ভট্টাচার্য্য করোনা প্রজেটিভ হয়ে মারা গেলে তাদের শ্রীমঙ্গল পৌরসভা শ্মশান ঘাটে সৎকার করছেন।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবারসকালে শ্রীমঙ্গল উত্তশূর এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে পারুল রানী সরকার নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। পৌরশ্মশানঘাট থেকে তাদের সৎকার কমিটির একটি অংশ সেখানে গিয়ে সৎকার শুরু করে। তিনি জানান, শুরু থেকেই এ সৎকার কমিটির সদস্য ভানুলাল রায়, ছোটন চৌধুরী, সুদীপ কুমার দাশ রিংকু, কানন দেব,অর্জুন দাশ,সঞ্জু দাশ, শোকদেব কৈরী, পাপন দত্ত, দিবস মজুমদার, ঝলক দেবরায় ও মিঠুন রায় সহ কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টারা রাতে দিনে কাজ করে চলেছেন।
এদিকে উপজেলার মুললিমস ম্প্রদায়ের দাফন কার্যে নিয়োজিত শ্রীমঙ্গল ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন ২৯ জুলাই দুপুর পর্যন্ত করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৬ জনের দাফন সম্পন্ন করেছেন। ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল এর সভাপতি মাওলানা এম এ রহীম নোমানী জানান, বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল সিরাজনগর এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আলবুন বেগম (৫০) করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তারা তাঁর দাফন করছেন। এ সময় শ্রীমঙ্গল ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক মৌলানা জুনায়েদ আহমদ জুনেদ জানান, ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল এর সভাপতি মাওলানা এম এ রহীম নোমানী, নির্বাহী সদস্য ও বিশিষ্টসমাজকর্মী মোঃ সাজ্জাদুর রহমান নওশাদ, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মুহাম্মাদ আহমদ আলী ও তানজিদ আহমদ সাব্বির সহ সকল সদস্যদের নিয়ে প্রতিটি মৃতের গোসল করানো, জানাজা পড়ানো থেকে শুরু করে সকল কাজই তারাকরে আসছেন।
এদিকে শ্রীমঙ্গল বিষামনী এলাকার জলিল খান জানান, তাদের বিষামনি গ্রামের মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪০) করোনা প্রজেটিভ হয়ে সিলেটের একটিহাসপাতালে মারা গেছেন। ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল এর সভাপতি মাওলানা এম এ রহীম নোমানী জানান, হোসনে আরার লাশ শ্রীমঙ্গলে নিয়ে এবং তাদের ডাকলে তারা দাফন করে দিবেন।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারী রেকর্ড অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৯৯ জন এবং বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৮৬ জন। অন্যদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে সনাক্তের হার। বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে নতুন করে করোনা প্রজেটিভ হয়েছেন ১৮জন।
এদিকে সৎকার ও দাফন কমিটির সাথে মুত্যুর সংখ্যায় উপজেলা স্থাস্থ্য বিভাগের বড়ব্যবধান থাকার কারণ হিসেবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সাজ্জাত হোসেন চৌধুরী জানান, অনেকের বাড়ি শ্রীমঙ্গল কিন্তু মারা গেছেন সিলেট সহ অনান্য এলাকায়। তিনি জানান, যিনি যে এলাকায় মারাযান ওই এলাকায় তার রেকর্ড রাখা হয়। তা ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড হাসপাতালের কাছে থাকেনা।
মন্তব্য করুন