শ্রীমঙ্গলে ভুয়া কাজী সীল ও স্বাক্ষর করে ৫টি বাল্য বিয়েসহ ৭০টি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন
এহসান বিন মুজাহির॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার না হয়েও ভুয়া কাজী পরিচয়ে ৫টি বাল্য বিয়েসহ ৭০টি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যক্তি। শুধু চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নে ওই ব্যক্তি ভুয়া কাজী সেজে নকল বালাম তৈরির মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। নোটারি পাবলিক মৌলভীবাজার এর মাধ্যমে ভুল স্বীকারোক্তির এভিডেফিট এর কপি প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এতে উল্লেখ রয়েছে, আমি মোঃ জয়নাল আবেদিন, পিতা মোঃ আফিল উদ্দীন, মাতা খাতুন, গ্রাম বিহারীবন্তী, পাহারপুর, ডাকঃ সিক্কা, উপজেলা শ্রীমঙ্গল, জেলাঃ মৌলভীবাজার, পেশা চাকুরী, ধর্ম ইসলাম, জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি এই মর্মে হলফ পূর্বক ঘোষনা করিতেছি যে-
১. আমি বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা এবং হলফনামা সম্পাদনের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক লোক বটে। ২. আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত বিবাহ নিবন্ধক নয়। তা সত্ত্বেও বেশ কিছুদিন যাবৎ নিকাহনামার একটি অবৈধ বালাম বহি ও ফরম আমার এক বন্ধুর নিকট থেকে সংগ্রহ করে কাজী পরিচয় দিয়ে উক্ত অবৈধ বালাম বহিতে ৭০টি বিবাহ লিপিবদ্ধ করি, এর মধ্যে ০৫টি বাল্য বিবাহ আমি নিজে সম্পাদন করি এবং কাজী পরিচয় দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত শ্রীমঙ্গল ৪নং সিন্দুরখান ইউপির বিবাহ নিবন্ধক কাজী মোঃ আব্দুল মালেক সাহেবের অগোচরে তার নামে নকল সীল বানিয়ে ও তার স্বাক্ষর নকল করে নিকাহনামার কপি পক্ষদেরকে প্রদান করি।
অভিযুক্ত জয়নাল আবেদিন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বাহরিল উলুম
ডুবাগাঁও দাখিল মাদরাসার কেরানি পদে কর্মরত রয়েছেন বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়। এবিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জয়নাল আবেদিন নিজেই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমার ভুল হয়েছে, আমি ভুল স্বীকার করি এবং শ্রীমঙ্গল কাজী সমিতি ও ক্বারী সোসাইটি সমিতি বসে এটি সমাধান করে দিয়েছেন, বিষয়টি বাদ দেন, কোন কিছু লেখার দরকার নেই।
এবিষয়ে জানতে চাই সরকার নিয়োগপ্রাপ্ত
সিন্দুরখান ইউনিয়নের কাজী আব্দুল মালেক বলেন, জয়নাল আবেদিন আমার অগোচরে অবৈধ বালাম বহি সংগ্রহ করে নকল সীল বানিয়ে ও আমার স্বাক্ষর নকল করে ৭০টি নিকাহনামা লিপিবদ্ধ করেছেন, এরমধ্যে ৫টি বাল্য বিবাহ রয়েছে। এতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আপনি এবিষয়ে কোনো মামলা বা প্রশাসনকে অবগত করেছেন কিনা জানতে চাইলে কাজী আব্দুল মালেক বলেন, অভিযুক্ত জয়নাল আমার কাছে ভুল স্বীকার করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করেছে, আর কাজী নাসির উদ্দিনসহ কাজী সমিতি এবিষয়টি দেখছেন, বর্তমানে কাজী নাসির উদ্দিনের কাছে অবৈধ বালাম বহি ও বাল্য বিবাহের তথ্য সম্বলিত বহিটি রয়েছে। আমি কালকে ইউএনও সাহেবের কাছে যাবো। কাজী আব্দুল মালেক শ্রীমঙ্গল শহরের উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক পদে কর্মরত।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, জয়নালের বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম, সে যা করেছে তা বোআইনি। এফিডেভিট যে হয়েছে তা আমি জানি না, তবে অবৈধ বালাম বহিটি কাজী আব্দুল মালেকের এবং সেটা আমানত হিসেবে আমার কাছে রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন তিনি। ঘটনার এক প্রায় দুই সপ্তাহ গত হলো এখনও কোনো মামলা হলো কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন এটার মামলা তো আমি করতে পারি না, করলে কাজী আব্দুল মালেক করবেন, কারণ তার ইউনিয়নে এ ঘটনা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন বলেন, জয়নাল আবেদিন শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান ইউনিয়নের ডুবাগাঁও দাখিল মাদরাসার এমপিওভুক্ত কেরানী পদে কর্মরত। যেহেতু অভিযোগ এসেছে আমি তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। শিক্ষা অফিসার বলেন, শ্রীমঙ্গলে যেসব কাজী এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত পদে কর্মরত তাদের বিরুদ্ধে এমপিও বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালা ও এমপিও কাঠামো ২০২০ সালের সংশোধিত বিধিতে বলা আছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা একইসঙ্গে একাধিক পদে চাকরিতে কিংবা কোনো আর্থিক লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে এমপিও বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা রেজিস্ট্রার এসএম সোহেল রানা মিলন বলেন, ঘটনাটি আমি আপনার মাধ্যমে জানলাম, আমি খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন ঘটনা শুনেছি আপনার মাধ্যমে, কাজী আব্দুল মালেক এখনও কোনো অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসেননি বা এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। তবে ভুয়া কাজীসহ যে বা যারা বাল্য বিয়েসহ বেআইনি কাজে জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন