শ্রীমঙ্গলে রাস্তার পাশে সহস্র মানুষের সহস্র বৃক্ষরোপন
বিকুল চক্রবর্তী॥ দুই দিকে সবুজ চা বাগান তার বুক চিরে চলে গেছে পাকা সড়ক। মাঝে মাঝে রয়েছে রাবার, লেবু ও আনারস বাগান। এর পর লাউয়াছড়া বন। এই রাস্তাটিই শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকদের প্রাথমিক প্রশান্তি।
পর্যটকদের এ প্রশান্তির পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে এই চির সবুজের বুকে লাল, হলুদ বেগুনী রং এর ছোঁয়া দিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন শনিবার একহাজার মানুষকে নিয়ে একযোগে রোপন করলেরন ১ হাজার বৃক্ষ চারা।
রাস্তার দুই পাশে প্রাথমিক পদক্ষেপে রোপন করা এই বৃক্ষের মধ্যে ছিল কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালো ও জারুল গাছ।
আর এই ১ হাজার গাছের মধ্যে ৮শত মালিকানা দিলেন ৮ শত শিক্ষার্থীকে। আরও ২ শত গাছের মালিকানা দিলেন রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, প্রাশাসনিক কর্মকর্তা ও সূধীজনদের।
শনিবার ২৪ জুন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৮ শত শিক্ষার্থীর সাথে এ বৃক্ষ রোপনে অংশনেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি। প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান।
গাছ লাগাতে এসে ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, আজকে একটি নান্দনিক বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী আমরা উদযাপন করলাম। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা একেকজনে একেকটি গাছ লাগিয়েছে তাদের নামে।
এই গাছের মালিক তারা। গাছের মালিক হিসেবে তারা বার বার তাদের এই গাছের কাছে আসবে। এতে বৃক্ষের প্রতি তাদের ভালোবাসা জন্ম নেবে।
এই উদ্যোগটি চমৎকার নি:সন্দেহে প্রসংশা পাওয়ার দাবি রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন।
তিনি বলেন, এই জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী বৃক্ষ রোপন করে প্রত্যেককে তিনটা গাছ লাগাতে অনুরোধ করেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ বাস্তবায়নেরও অংশ।
বৃক্ষ রোপন করতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, ৮শত শিক্ষার্থী একযোগে ৮শত বৃক্ষের মালিক হয়ে ৮শত বৃক্ষ রোপন করল।
সুধীজন করলেন আরো ২শত। এটি একটি বড় আনন্দ যাত্রা। আর এই আনন্দ যাত্রার অভিযাত্রী হলাম আমি নিজেও।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সহজ উপায় বৃক্ষ রোপন করা। আজকের এই বৃক্ষ রোপন থেকে অনেকেই উৎসাহিত হবেন।
আমি নিজেও একটি বৃক্ষের মালিক হলাম। আমার এই গাছটির রক্ষনাবেক্ষনে আমিও নজর রাখবো। তিনি বলেন, এটিকে অনুকরনীয় হিসেবে সারাদেশেই এমন কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
এ বৃক্ষরোপনে আরও অংশগ্রহন করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) জগৎজ্যেতি ধর শুভ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমুদ রঞ্জন দেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন ছমরু, শিক্ষক অয়ন চৌধুরী।
জেরিন চা বাগানের জিএম সেলিম রেজা, ফিনলে টি কোম্পানীর ভাড়াউা চা বাগানের জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলী, চা বোর্ডের পরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, শিক্ষক জহর তরফদার, অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, গীতিকার চামেলী সিনহা চারু, প্রথম আলো শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি শিমুল তরফদার, বণ চক্রবর্তী প্রমূখ।
এই উদ্যোগের আয়োজক শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, শ্রীমঙ্গল একটি পর্যটন নগরী। এর সুন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে আসেন।
পর্যটকদের কথা চিন্তা করে শ্রীমঙ্গলের পর্যটকরা চলা ফেরা করেন এমন রাস্তাগুলোর দুই পাশে দৃষ্টি নন্দন বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্যোগ নেন।
তিনি বলেন, এই গাছগুলো যাতে ভবিষতে টিকে থাকে তাই একেকজনকে দিয়ে একেকটি গাছ রোপন করার উদ্যোগ নেন। প্রত্যেকে গাছের সামনে প্রত্যেকের নামে নেম প্লেট টাঙ্গিয়ে রাখবেন বলে জানান তিনি। তারা যেন বড় হয়ে বলতে পারে আমি এই গাছ লগিয়েছি।
এ সময় শ্রীমঙ্গল উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তমা দেব পূজা জানান, ৮শত শিক্ষার্থীদের সাথে সেও বৃক্ষরোপনে অংশনেয়।
এই গাছটি দেখার জন্য সে নিয়মিত আসবে। তাদের পরিবারে কেউ বেড়াতে আসলে তাদেরি এনে দেখাবে এটি তার লাগানো গাছ। এই গাছের মালিক সে ।
মন্তব্য করুন