শ্রীমঙ্গলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষের উপস্থিতিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত

August 24, 2023,

এহসান বিন মুজাহির॥ শ্রীমঙ্গলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, বিসিএসইউ, নারী চা শ্রমিক ও কিশোরী এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ২৪ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার রোডস্থ গ্র্যান্ড তাজ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারে এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র উদ্যোগে লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস (লিডার) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র উপ-পরিচালক জনাব ড. মোঃ তারেকুজ্জামান।

প্রকল্প কো-অডির্নেটর পারভেজ কৈরী’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব ভানু লাল রায়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের সহকারি মহাপরিদর্শক পপি রানী দে, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের

ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক সাহেদা আক্তার, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক, সুর্দশন শীল, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, নিপেন পাল, সাধারণ সম্পাদক পংকজ কন্দ।

অনুষ্ঠানে লিডার প্রকল্পের অগ্রগতি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র সিলেট বিভাগী সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী ।

তিনি বলেন, প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধে চা বাগানের নারী শ্রমিক ও কিশোরী মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো এবং দায়িত্ব বাহককে জবাবদিহি করা।

এবং উদ্দেশ্যে হলো নারী শ্রমিক ও কিশোরী মেয়েদের জন্য মতামত প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্মিলিতভাবে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য মতামত প্রদান করতে পারে; ২. চাবাগনের নারী শ্রমিক এবং কিশোরীদের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধিও মাধ্যমে নেতৃত্বেও বিকাশ ঘটবে এবং নিজেদের উন্নয়নে প্রয়োগ করতে পারবে; চাবাগানের নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত নেতৃত্বেও দক্ষতা অর্জন করে বিভিন্ন স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগহ্রণ করতে পারবে।

শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর এবং কমলগঞ্জ উপজেলার ছয়টি চা বাগানের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে চা বাগানে উক্ত সমস্যাগুলোর সমাধানের সাথে সম্পর্কিত  সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়।

সংলাপে সবার পক্ষকে থেকে উঠে আসা বিষয়গুলোর সুপারিশ আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়।

সাতগাওঁ, মির্জাপুর, হোসনাবাদ, এমআরখান, রাজঘাট, মৌলভী  চা বাগানের ভিতরে/চা সেকশনে নারীদের জন্য সৌচাগার ও টিউবওয়েল এর ব্যবস্থা করা।

চা বাগানে ডে-কেয়ার (ক্যারেজ ঘর) স্থাপন করা/ব্রেস্ট ফিডিং ফিডিং কর্ণার তৈরি করা, চা বাগানে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে বাগান কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করা, চা বাগানে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবাগুলো যাতে বাগানের গরিব এবং সঠিক মানুষরা পায় তার জন্য সঠিক বাছাই এর ব্যবস্থা করা।

চা বাগানের হাসপাতালগুলোতে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সম্ভব হলে দুটি চা বাগান মিলে একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, চা বাগানে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনমূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করা।

চা বাগানগুলোতে পুষ্টির অভাবের ফলে বিশেষ করে নারী ও কিশোরীরা স্বাস্থ্য ঝুকিঁতে আছে তাই পুষ্টি প্রোগ্রামগুলো জোরদার করা দাবি, চা বাগানে নিরাপদ পানীয় জলের অভাব এখনো আছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের মাধ্যমে চা বাগানগুলোতে ডিপ/টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা।

চা বাগানের যারা ঝুকিপূর্ন কাজে নিযুক্ত আছে তাদের কে যথাযথভাবে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করার ব্যবস্থা করা, চা বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকদের জন্য ছাউনি ঘরের ব্যবস্থা করা এবং নারী চা শ্রমিকদের পাতা তুলার জন্য রেইন কোট/বড় ছাতালের ব্যবস্থা করা।

চা বাগানগুলোকে অধিক গতিশীল করার লক্ষ্যে দক্ষ নারী চা শ্রমিক গড়ে তুলার জন্য দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।

শিশু শ্রমবন্ধ করে চা গানগুলোর শিশুদের বিদ্যালয় মুখি করা। চা বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে উপবৃত্তি দেওয়া হয় তার পরিমান বাড়ানো যাতে করে বেশিসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা এর সুবিধা পায়।

চা বাগানের শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ও কলেজগুলোতে ভর্তির বিশেষ ব্যবস্থা/ কোটা চালু করা, চা বাগানের শিক্ষার্থীদেরকে কলেজগুলোতে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে অবৈতনিক ব্যবস্থা চালু করা এবং যাতায়াতের জন্য একটি বাস এর ব্যবস্থা করা, চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া রোধ করতে বিশেষ মিনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।

চা বাগানগুলো থেকে চুলাই মদ ব্যবস্থা/পাট্টা তুলে দেয়ার জন্য মালিকপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার, চা বাগানগুলোতে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রদানকৃত এককালিন পাচঁ হাজার টাকা/ভাতা প্রদানের সঠিক সুবিধাভোগী নির্বাচনে চা বাগানের নারী শ্রমিক ও কিশোরী দলের মতামত প্রদানের সুযোগসৃষ্টি,  চা বাগান গুলোতে সরকারিসেবা এবং ভাতা সম্পর্কিত তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সাহেদা আক্তার, দৈনিক যুগান্তর জেলা প্রতিনিধি হোসাইন আহমেদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: সুয়েব হোসেন চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ইসহাক মিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকত অসীম কুমার কর, শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজী, শ্রীমঙ্গল মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিশলু আহমদ চৌধুরী, সাতগাঁও সহকারী ব্যবস্থাপক চা বাগান মতিন আহমেদ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ কাউসার ইকবাল, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি ভানু লাল রায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ও অক্সফ্যামকে এবং ইউরোপিয়ান ইউনয়নকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।

তিনি বলেন, এখানে আজ যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা করা দরকার। অনুষ্ঠানে উপজেলার সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং বিটিএস কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com