‘সফল জননী’ হিসেবে জয়িতা সম্মাননা পাচ্ছেন সেই চা-শ্রমিক মা
জয়নাল আবেদীন॥ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হবে। এবার সেই জাতীয় শ্রেষ্ঠ জটিতার সম্মাননা পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কানিহাটি চা বাগানের চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস।
জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে এই সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। সম্মাননা পাওয়া জয়িতাদের সবাইকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ দেওয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মাননা পেয়েছেন। এবার জাতীয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পাচ্ছেন কমলি রবিদাস।’
আগামীকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আলোচনাসভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুরষ্কার দিবে নেওয়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মাননা খবর জেনে ভীষণ আনন্দিত কমলি রবিদাস। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। হামার খুব আনন্দ লাগছে। প্রধানমন্ত্রীরে চোখে দেখমু। এখন হামার কষ্ট দূর হবেক।’
মায়ের এমন অর্জনের খবরে আনন্দিত ছেলে সন্তোষ রবিদাসও। তিনি বলেন, ‘মা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরস্কৃত করবেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষের। জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার মা কমলি রবিদাস তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা। ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে খেয়ে নাখেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ।
মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে ২০২২ সালে ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ এমন শিরোনামে একটি ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেন তিনি। সেই সূত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে তিনি যোগ দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে। এখন তিনি ব্যাংকটির সিলেট লালদীঘির পাড় শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
মন্তব্য করুন