সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় হচ্ছে সৌদি সরকারের অর্থায়নে ‘জেলা মডেল মসজিদ’
এহসান বিন মুজাহির॥ সৌদি আরবের সরকারের অর্থায়নে দেশে আরও ৯টি আইকনিক মসজিদ নির্মাণ শুরু হচ্ছে। এসব আইকনিক মসজিদের একটি হবে রাজধানীর পূর্বাচলে; বাকি আটটি মসজিদ হচ্ছে বিভাগীয় শহরগুলোয়।
সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র মৌলভীবাজার জেলা সদরের জগন্নাথপুর এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের জন্য মাটি ভরাট শুরু হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জেলা সদরের জগন্নাথপুর এলাকায় মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে।
শনিবার ৩ জুন সকাল ১১টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরতলীর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ৪৫ শতাংশ জমি মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, চারতলা বিশিষ্ট জেলার আইকনিক মসজিদটি সৌদি সরকারের অর্থায়নে হবে।
মসজিদটি ১১০ ফুট প্রশস্ত এবং ১৭০ ফুট দৈর্ঘ্য হবে। এ মসজিেেদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জেলা কার্যালয় থাকবে। জেলাজুড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা, দারুল আরকাম মাদরাসা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ইমাম প্রশিক্ষণসহ সকল কার্যক্রমও পরিচালিত হবে এখান থেকে।
ধর্ম মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ি জেলা মডেল মসজিদগুলো চারতলা বিশিষ্ট হবে। এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য পৃথক জায়গা থাকবে। থাকবে হজ্ব গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য রেজিষ্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক লাইব্রেরি, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, হিফজখানা, দেশি বিদেশি অতিথিদের জন্য থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে শৌচাগারের ব্যবস্থা।
যেকোন মানুষ এই কেন্দ্র থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য যেসকল কাজ দরকার সব করতে পারবেন। এছাড়াও থাকবে বিশাল কার পার্কিং, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জেনারেটর কক্ষ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নামাজের আলাদা কক্ষ, রান্না ঘর, পুরুষ-মহিলাদের পৃথক নামাজের স্থান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিস, অজুখানা। থাকবে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও একটি বিশাল সুউচ্চ মিনার। গণপূর্ত বিভাগের অধিনে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মার্ক বিল্ডার্সের প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, চার তলাবিশিষ্ট জেলা মডেল মসজিদের নকশা চুড়ান্ত করা হয়েছে।
মসজিদটির নির্মাণ কাজ জুন মাসে শুরু হয়ে শেষ হবার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে। সে অনুযায়ী আমাদের প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করছি। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজের শুরুতে প্রথমে মাটি ভরাট শুরু হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের আবাসন, বিদ্যুৎ সংযোগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করা হবে। এসব কাজ সম্পন্ন হলেই শুরু হবে মসজিদ নির্মাণের মূল কাজ। জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আহমদ জানান, এ মসজিদটি আমাদের এলাকায় নির্মাণ করা হবে শুনে এলাকাবাসি ভীষণ খুশি।
মসজিদটি এমন একটি জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে যার আশপাশে কোনো মসজিদ নেই। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন মসজিদটির দক্ষিণ এবং পশ্চিমে বিশাল হাওর তথা পতিত জমি, আর পূর্বদিকে ঘনবসিতপূর্ণ বাড়িঘর।
মসজিদটি মহাসড়কের সাথে হওয়ায় নামাজের সময় পথচারীরাও জামাতে শরীক হতে পারবেন। সবার জন্য যাতায়াতেরও রয়েছে সুবিধা। মসজিদ নির্মাণের ফলে পাল্টে যাবে পুরো এলাকার দৃশ্য। দূরপাল্লার গাড়ি থেকে উপভোগ করা যাবে মসজিদটির অনন্য স্থাপত্য নির্মাণশৈলীর অপরূপ সৌন্দর্য।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল কাদের জানান, সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে শতভাগ নির্মাণকাজ শেষে ২০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের বাইরে সৌদি আরবের বাদশার অর্থায়নে দেশে আরও ৯টি আইকনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
এসব আইকনিক মসজিদের একটি হবে রাজধানীর পূর্বাচলে; বাকি আটটি মসজিদ হবে বিভাগীয় শহরগুলোয়। সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র মৌলভীবাজার জেলার জগন্নাথপুর এলাকায় সেটি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন জেলা মডেল মসজিদটি নির্মাণ হলে সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল কার্যক্রমে আরও গতিশিলতা আসবে। পাশাপাশি জেলাবাসি পাবেন নানা সুযোগ-সুবিধা।
এর ফলে ধর্ম ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হবে আরও গতিশীল। দ্বীনি ও দাওয়াতি কর্মকান্ডেও আসবে ব্যাপক অগ্রগতি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নেওয়া মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি তদারকি করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মসজিদগুলো নির্মাণকারী হিসেবে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এসব মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ সরকার ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা খরচ করবে বলেও জানা যায়। তবে সংশোধনী প্রকল্পে এর ব্যয় আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ এখন পর্যন্ত শুরু করা যায়নি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, বড়লেখা, কুলাউড়া জমি জটিলতা শেষ হয়েছে এবং ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ইফা মৌলভীবাজার ডিডি মো. আনোয়ারুল কাদের। তিনি বলেন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জন্য বর্ষিজোড়া এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু হবে। কুলাউড়া উপজেলার নবীন চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বড়লেখায় উপজেলা কমপ্লেক্সের ভূমিতে মডেল মসজিদের প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন হবার পর বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ উপজেলায় পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চার দফায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। জুড়ী উপজেলার জন্য ভূমি নির্ধারণ করে অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
এখনও ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল কাদির আরো জানান, সরকারের মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নকশা অনুযায়ী মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা মসজিদ হবে।
মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলার মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ অনেকদূর এগিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে রাজনগরের মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার মসজিদ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হতে পারে।
মন্তব্য করুন