১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি চুনারুঘাটে মুড়ারবন্দ দরবার শরীফে ৩ দিন ব্যাপী ৭০৩ তম বার্ষিক ওরস

January 10, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ঐতিহ্য বাহী মুড়ারবন্দ ১২০ আউলিয়া দরবার শরীফে ১৪,  ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি ৩ দিন ব্যাপী ৭০৩ তম বার্ষিক পবিত্র ওরস অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে এবার মুড়ারবন্দ দরবার শরীফের কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে থাকবেন পুলিশ প্রশাসন, মোতাওয়াল্লী ,  মাজার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক  ও খাদেমদের নিয়োগকৃত স্থানীয় অসংখ্য সেচ্ছাসেবক কর্মী। ১৪ জানুয়ারি থেকে পবিত্র ওরস শুরু। ওরস কর্মসূচি মধ্যে রয়েছে, প্রথম দিন ভোর সকালে হযরত (মাদনী)  সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ) সিপাহসালার পূর্ব-পশ্চিম রওজা সহ ১২০ আউলিয়ার মাজার শরীফ গিলাফ চড়ানো।

১৬ জানুয়ারি রাত  ১টায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র ওরস সমাপ্তি হবে । আশেকান ভক্ত বৃন্দরা ঐতিহাসিক মুড়ার বন্দ দরবার শরীফে পবিত্র ওরস শরীফে কারো কোনো কিছু দান করার ইচ্ছুক থাকলে, তবে কারো কাছে দান না করে সরাসরি দরবার শরীফে মোতাওয়াল্লীর ০১৭১৬১৩৭৯৬১ যোগাযোগ করে দান করুন বা সরাসরি এসে যোগাযোগ করুন। উক্ত ৩ দিন পবিত্র ওরস সফলের লক্ষ্যে সারাদেশের দরবার শরীফের আশেকান ভক্ত বৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দরবার শরীফের মোতাওয়াল্লী শাহ সূফী পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ সফিক আহমদ সফি চিশতী।

উল্লেখ্য, সিলেটে চিরন্দ্রিায় শায়িত রয়েছেন হযরত শাহ জালাল (রহঃ) ইয়ামিন ভাগনা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় প্রধান সেনাপতি তরফ রাজ্য বিজয়ী মহান ইসলামী বীরপুরুষ সিপাহ সালার হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ ) মদীনা শরীফে জন্ম গ্রহন করেন এবং  তিনি বাগদাদ শরীফে বসবাস করতেন। প্রাচীন ইতিহাসের আলোকে তিনির জন্ম আনুমানিক ১২৫০ খ্রীষ্টাব্দে । বাগদাদ থেকে তিনি ভারতের দিল্লীতে এসে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির অধীনে ফৌজদারি বিভাগে যোগদান করেন। দিল্লীর সম্রাট তার কামলিয়াতের পরিচয় পেয়ে শাহী সৈন্য বাহিনীর নেতৃত্বে গ্রহন ক্রমে সিলেট বিভাগকে বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

সিলেট বিভাগকে বিজয়ী হযরত শাহ জালাল (রহঃ) সাথে পথিমধ্যে মোলাকাত হয় এবং মুসলমানদের উপর গৌড় গোবিন্দদের অত্যাচারে এই সংবাদ ব্যথিত হয়ে শাহী সৈন্যদের সঙ্গে যোগদান করতে সম্মতি প্রকাশ করেন। আল্লাহর রহমতে ৭০৩ হিজরি ১৩০৩ খ্রীষ্টাব্দে সিলেট বিভাগকে বিজয়ী করেন। পরে অত্যাচারী রাজা আচক নারায়ণ সমুচিত উপযুক্ত শিক্ষা দিতে একদল মুজাহিদ বাহিনী সহ শাহী সৈন্যদের নেতৃত্ব দান করেন বাংলা আসামের বিভিন্ন ময়মনসিংহ জেলার আংশিক, কিশোরগঞ্জ জেলার আংশিক, বি-বাড়িয়া জেলা আংশিক, সুনামগঞ্জ জেলার আংশিক, মৌলভীবাজার আংশিক ও হবিগঞ্জ জেলা এলাকা নিয়ে প্রাচীন তরফের মুল রাজধানী হবিগঞ্জ জেলায় ।

তরফের মুল রাজধানী হবিগঞ্জের পাঁচটি মুসলমান পরিবার বংশধর মর্যাদায় অত্য অত্যন্ত গৌরবান্বিত, যাহা হবিগঞ্জ সদর উপজেলা লস্করপুর হাবেলী, সুলতানশী হাবেলী, পৈল হাবেলি, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা দাউদ নগর (বড়, মধ্যম ও ছোট) হাবেলি, চুনারুঘাট উপজেলা  নরপতি-মুড়ার বন্দ হাবেলী। এই ৫টি হাবেলী থেকে পরবর্তী কালে বিশাল তরফ রাজ্য ভাগবাটোয়ারা হয়ে পরগণা সৃষ্টি হয়। এর পরে মোগল সম্রাট আমলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা লস্করপুর হাবেলী ও বাহুবল উপজেলা কোর্ট আন্দর হাবেলীতে তরফের রাজধানী দেওয়ানী ভার অর্পিত হয় । এ সময় তরফ এলাকা হতে ১২ টি পরগনা খারিজ হয়ে যায়। অতপর সিপাহ সালার হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ) তরফ রাজ্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে রাজধানীর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় মুড়ার বন্দ ১২০ আউলিয়ার দরবার শরীফ স্থান হিসেবে সমগ্র দেশ ও বিদেশে সুপরিচিত।

আর এই মুড়ার বন্দে পবিত্র স্হানে চিরনিদ্রায় পূর্ব-পশ্চিমে শায়িত রয়েছেন প্রধান সেনাপতি তরফ রাজ্য বিজয়ী সিপাহসালার (মাদিনী) হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ), হযরত সৈয়দ শাহ ইসরাইল ওরফে শাহ বন্দেগী (রহঃ), হযরত সৈয়দ শাহ ইলিয়াছ ওরফে কুতুবুল আউলিয়া (রহঃ), বন্দেগী সৈয়দ শাহ দাউদ (রহঃ) গং ১২০ জন ওলি-আউলিয়াগণের চিল্লা স্থাপন করেন। সিপাহসালার হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ) তিনির জীবনে কোনো দিন ফজরের নামাজ কাযা হয়নি। তিনি গৌড় গোবিন্দদের লৌহ ধনুতে ছিলা সংযোগ করেছিলেন , তার মৃত্যুর পর মুসলমানদের কাফনের নিয়ম অনুযায়ী উওর দক্ষিণে না দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে দেয়ার জন্য ওয়াদা বদ্ধ করেন। কিন্তু তৎকালীন স্থানীয় ওলামায়ে কেরামগণের নির্দেশে উত্তর-দক্ষিণে মৃতদেহ দাফন করেন।

অথচ দেখা গেল কাফনের পর কবর স্থান থেকে ৪০ কদম দূরে স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও মুসল্লীরা জানাজা নামাজ শেষে সিপাহ সালার হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ) কথা মত মাজার বিকট এক শব্দের পর পূর্ব-পশ্চিমে হয়ে যায়। তাই সিপাহ সালার হযরত সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন (রহঃ) এর মাজার শরীফ মুড়ারবন্দ পর্ব-পশ্চিম বিদ্যমান রয়েছে। তাই এই মাজারে অতি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা পাঁচ শতাধিক জামগাছের সুশীতল ছায়ায় শায়িত আছেন ওলি-আউলিয়াগণ।

আগামী ১৪ জানুয়ারি সকালে মাজার কমিটির মোতাওয়াল্লী শাহসুফী আলহাজ্ব সৈয়দ সফিক আহমদ সফি চিশতি প্রথমে মাজার শরীফে গিলাফ ছড়ানো মধ্য দিয়ে পবিত্র ওরসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ১৬ জানুয়ারি সকালে রওজা গোসল শেষে রাত ১ টায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র ওরসের সমাপ্তি হবে। আশেকান ভক্তবৃন্দ মুড়ারবন্দ দরবার শরীফে পবিত্র ওরসে কোনো কিছু দান করলে, কাহারো কাছে না দিয়ে সরাসরি দরবার শরীফে মোতাওয়াল্লী কাছে ০১৭১৬- ১৩৭৯৬১ যোগাযোগ করে দিবেন। উক্ত ৩ দিনের বাৎসরিক পবিত্র ওরসে সফলের লক্ষ্যে সারা দেশের আশেকান ভক্তবৃন্দদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com