৪ জুন জাতীয় চা দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে বাণিজ্য মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

June 3, 2023,

স্টাফ রিপোর্টার॥ জাতীয় চা দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা বোর্ডের টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়াম হলরুমে শনিবার ৩ জুন বিকেল সাড়ে ৫ টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান-শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে রোববার ৪ জুন বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মত ‘জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন এবং দেশে এ বছর প্রথমবারের মতো দেওয়া হচ্ছে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’।

যৌথভাবে এ পুরস্কার প্রদান করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ড। অনুষ্ঠানে চা-শিল্পের চাষাবাদ থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ আটটি ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গত ২২ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপির সভাপতিত্বে জাতীয় চা-পুরস্কার যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় এবারের জাতীয় চা-দিবস উদযাপিত হবে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।

এখানে দেশের চা-বাগানগুলোর মালিক, শ্রমিক ও চা-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে চা-শিল্পে অবদান রাখায় ৮ ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’।

যেসব ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে সেগুলো হলো : একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা-বাগান, সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান, শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী, শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা-বাগান, বৈচিত্রময় চা-পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা-প্রতিষ্ঠান এবং শ্রেষ্ঠ চা-পাতা চয়নকারী (চা-শ্রমিক)।

এসব পুরস্কার চা-শিল্পের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, ‘এবারের জাতীয় চা-দিবস আমাদের জন্য একটি ভিন্ন মাত্রার আয়োজন।

শনিবার ৩ জুন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় রোববার ‘জাতীয় চা-দিবস’ উদযাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ের। ভানুগাছ রোড থেকে নিয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত সড়কে চা দিবসের অনুষ্ঠান সফল হোক সম্বলিত ফেস্টুন। এছাড়া বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পরিচর্যা করার কাজ শেষ পর্যায়ে।

মঞ্চ তৈরিসহ চেয়ার এবং অন্যান্য কাজও শেষ হয়েছে। নানাভাবে সাজানো হয়েছে বিদ্যালয় মাঠ। শনিবার অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিং থেকে জানা যায়, সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করা হয়।

ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চা শিল্প বিকশিত হতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ শাসনাধীন উপমহাদেশের এ অঞ্চলে চা শিল্পের অগ্রগতি মূলত ব্রিটিশদের মাধ্যমেই হয়েছে।

জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চা শিল্পে জাতির পিতার অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর যোগদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে “জাতীয় চা দিবস” ঘোষণা করা হয়।

এ বছর আমরা তৃতীয়বারের মত যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন করছি। এ বছর চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন চা শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে জাতীয় চা দিবসের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত চা দিবসের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি প্রধান ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান, টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মঈনুদ্দিন হাসান ও এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন।

সকাল ১০ টা থেকে আলোচনা সভা শুরু হবে। আলোচনা সভা শেষে সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে দেশের চা শিল্পে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন চা কোম্পানি/ব্যক্তিকে ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে এ বছর প্রথমবারের মত ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের ট্রফি ও সদন তুলে দিবেন। এছাড়া দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে।

দর্শনার্থীদের জন্য দিনব্যাপী চা মেলা উন্মুক্ত থাকবে। বঙ্গবন্ধু পাডেলিয়ন ও শ্রীমলস্থ টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। চা শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী সব উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ও বর্তমান সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশের চা শিল্প টেকসই উন্নয়নে পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের ছায়াতলে দেশের চা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চা উৎপাদনকারী ও বিপণনকারীদের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করছে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অদম্য শ্রমিকগণ। শ্রমঘন এ শিল্পে শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাগান মালিকগণ কাজ করে চলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম এনডিসি পিএসসি, চা বোর্ড পিডিইউ পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক, চা বোর্ডের সদস্য অর্থ ও বাণিজ্য মোহাম্মদ নুরুল্লা নুরী, সদস্য কামরুল আমিন প্রমুখ।

এসময় সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, দুর্যোগ কাটিয়ে দেশের চা শিল্প ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান শুধু সিলেট বিভাগ নয় এখন পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও সহ উত্তরা অঞ্চলে দেশের চাহিদার ১৮ শতাংশ চা উৎপাদিত হচ্ছে।

এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি সোয়াবিন তেল ও পিয়াজের দাম বাড়তি স্বীকার করে জানান, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমাদের টাকা তার মান হারিয়েছে।

যে কারনে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানী নির্ভর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। সোয়াবিন তেল ৯৯ ভাগ ও ৯৮ ভাগ চিনি আমদানী করতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের আমদানীর ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু তারা নিচ্ছেনা। আমদানি হলে পিয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকার ভিতরে চলে আসবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com