৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বড়লেখায় প্রকাশ্যে চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব

June 5, 2016,

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখায় পরিবেশ আইন লংঘন করে পাহাড় টিলা কাটার মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় ‘পাহাড়-টিলা খেকোদের’ যেন আগ্রাসন চলছে। অনেক সময় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের চোখের সামনেই ধ্বংস হচ্ছে পাহাড় টিলা। অভিযোগ রয়েছে মোমিন নামে এক পুলিশ সদস্য থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে মাসোয়ারা আদায় করে উপজেলার কয়েকশ’ অসাধু মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে। অব্যাহত টিলা কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল। আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। অতিবর্ষণে ভুমি ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় বাঘ, হরিণ, বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

Barlekha-05-(4)
প্রতিবছর পরিবেশ দিবস আসলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ঘণ্টার শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে পরিবেশ রক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম। যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো পরিবেশ বিপর্যের ভয়ানক পরিনতির বিষয়ে সচেতনতার সৃষ্টি হয়নি।
সরেজমিনে উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ডিমাই, কেছরিগুল, গঙ্গারজল, কাশেমনগর, হাকাইতি, পূর্ব-হাতলিয়া, বোবারথল, মোহাম্মদনগর, ছোটলেখা, ঘোলসা, চন্ডিনগর, মুড়াউল, অফিসবাজার, বড়াআইল, নান্দুয়া, পূর্ব-বাণীকোনা, শ্রীধরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে পাহাড় টিলা কাটা চলতে দেখা গেছে। এসব পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে ঐ এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসের আসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে। এসব পাহাড়-টিলার মাটি কাটতে নিয়োজিত রয়েছে দেড় শতাধিক ট্রাক/ট্রাক্টর। এদের অধিকাংশেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। ট্রাক্টরের সাহায্যে মাটি বহন করায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও শহরের প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নান্দুয়া এলাকায় গেলে সদ্য কেটে নেয়া পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার বশির আলীর ছেলে কমর উদ্দিন পাহাড় কাটাচ্ছেন। একই ইউনিয়নের বাণীকোনা গ্রামের আব্দুন নূরের বাড়ি থেকে পাহাড় কেটে মাটি নেয়ার দৃশ্য চোঁখে পড়ে। অবৈধ মাটি পরিবহনকারী চালকরা জানান, মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে থানার ক্যাশিয়ার মোমিনের মাসোয়ারার চুক্তি রয়েছে। এজন্য গাড়ীর কাগজপত্র না থাকলেও রাস্তা-ঘাটে কোন ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় না।

Barlekha-05
বড়লেখা-শাহবাজপুর সিঅ্যান্ডবি সড়কের পূর্ব পাশের চন্ডিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলি জমি ভরাট হচ্ছে পাহাড়ি টিলার মাটি দিয়ে। মাটি ভরাটকারী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রবাসী লালা মিয়া। মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুস শুক্কুর বলেন, ‘আমরাতো মজুর মানুষ। মাটিতো অনেক জায়গায় কাটা হচ্ছে। টিলার মাটি কেটে ফসলি জমি ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কারো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার জানা নেই।’
থানার ওসি মোহাম্মদ মনিজ্জামান জানান, থানায় কোন ক্যাশিয়ার নেই। কোন পুলিশ সদস্য (মোমিন) ক্যাশিয়ার পরিচয়ে অবৈধ পাহাড় টিলা কর্তনকারীদের নিকট থেকে মাসোয়ারা আদায় করলে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান ‘পাহাড় টিলা কাটার বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে ১০টি মামলা প্রেরণ করেছেন। প্রশাসনের একার পক্ষে পাহাড় টিলা কাটা রোধ সম্ভব নয়। এজন্য জনগনকে আরো সচেতন হতে হবে। প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসচেতনামূলক কয়েকটি সভা করেছে।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com