‘৮৫ টাকাতে পরিবার চলে না’

February 25, 2017,

ইমাদ উদ দীন॥ এই টাকায় আর সংসার চলে না। সারা দিন শক্ত খাটুনীর পর দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চতা থাকেনা। পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচি কি করে ? দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বাড়লেও বাড়ছেনা আমাদের মজুরী। যে টাকা দৈনিক মজুরী পাই তা দিয়ে একজনেরও চলা দায় তার উপর আবার সংসার। তাই অসুখ বিসুখ আর চাওয়া না পাওয়ার মধ্যেই চলে আমাদের জীবন সংগ্রাম।এ ভাবেই নিজেদের দু:খের কথা গুলো বল্লেন চা শ্রমিক মনজ কৈরী (৫৫),পনিম গোয়ালা(৪৫),সীতেশ পাচী (৪৮),কেশব পাচী (৫০),দীনেম পান্ডে(৫২),নীপেন নাইডু (৩৮)সহ অনেকেই।তারা জানালেন চায়ের সবুজ দুনিয়া কি ভাবে গিলে খায় তাদের জীবন। চা বাগানের এমন সজীবতার অন্তরালের এই মানুষগুলোর দু:খী জীবনের খবর কেউ রাখেনা এমন অভিযোগ তাদের। জানাগেল চা শ্রমিক পরিবারে একজন শ্রমিকের আয় রোজগারের উপর পুরো পরিবারই নির্ভরশীল।মজুরী হিসেবে পাওয়া ওই টাকা দিয়ে মানবেতর ভাবে দিন যাপন করছেন তারা। ৩ বেলা পেট পুরো খাওয়া কিংবা স্বাস্থ্য সমেত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়াতে তারা নানা রোগে রোগাকান্ত। তারপরও মাতৃ¯েœহে জীর্ণশীর্ণ শরীরে প্রতিদিনই চলে চা শিল্পকে বাঁচানোর সংগ্রাম। প্রতিনিয়ত তাদেরএমন প্রচেষ্ঠায় চা শিল্প এগিয়ে চললেও নিজেদের জীবন জীবীকায় পিছিয়ে রয়েছেন তারা। অবহেলীত চা শ্রমিকরা জোর দাবী জানালেন চা শিল্পকে উন্নত করতে হলে তাদের জীবন মানের কথা বিবেচনায় নেওয়ার। তারা বললেন চা শ্রমিক না বাচঁলে চা শিল্প বাঁচবে কি ভাবে ? এখন বাগান মালিকদের এবিষয়টি নজর দেওয়া প্রয়োজন। জানা যায় চা শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি (উৎপাদনের দিক দিয়ে) এ ক্লাস বাগানে দৈনিক ৮৫ টাকা, বি ক্লাস বাগানে দৈনিক ৮৩ টাকা,সি ক্লাস বাগানে দৈনিক ৮২ টাকা।

‘দিনভর চা শ্রমিকদের হাড়ভাঙা খাঁটুনির পর দৈনিক সর্বোচ্চ মজুরি ৮৫ টাকা।বর্তমান উর্ধ্বগতির বাজার মূল্যে ওই টাকা দিয়ে এখন তাদের সংসার চালানো কঠিন। অথচ চায়ের উৎপাদন আর দাম বাড়লেও বাড়েনি শ্রমিকদের মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা। চা শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে গেল মৌসুমে চায়ের উৎপাদনে ইতিহাস সৃষ্টি হলেও চা শ্রমিকদের নেই প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। জেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে আলাপে এমনটিই জানালেন তারা। দেশের ১৬৬ টি চা বাগানের মধ্যে শুধু মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি। জানাগেল হাতে গুনা কয়েকটি বাগান ছাড়া অনান্য বাগান গুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন চা শ্রমিকরা। চা বাগান গুলোতে অধিকাংশ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকদের দিন কাটে সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলায়। গেল মৌসুমে চা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। চা শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে ওই বছরই সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হয়।চা শিল্প এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সিক বাগান গুলোও উৎপাদনে চলে আসছে। নানা সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও অধিকাংশ বাগান মালিকরা উৎপাদন বাড়াতে এখন নতুন ভাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। বাগান গুলোতে যদি উৎপাদন বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকে তা হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আগের মতোই চা রপ্তানি সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৫ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় ৬ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার কেজি। কিন্তু ২০০৬ সালে উৎপাদন ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। পরবর্তী বছর থেকে উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। ২০০৭ সালে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার কেজি, ২০০৮ সালে ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার। ২০০৯ সালে ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার। ২০১০ সালে ৬ কোটি ৪ লাখ। ২০১২ সালে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। তবে ২০১৪ সালে উৎপাদন কিছুটা কমে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার কেজি হলেও ২০১৫ সালে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ২০১৫ সালে দেশের বাগানগুলোয় ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়,যা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে।গেল মৌসুমে চায়ের বাজার দরও ছিল অন্য বছরের তুলনায় ভালো।আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ আর সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্ঠা থাকলে উৎপাদনে রেকর্ড ভঙ্গের এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।তবে যাদের কারণে চায়ের উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য আসছে এই শিল্পের শ্রমিকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তাদের তরফে অভিযোগ উঠেছে। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমনটি দাবী করে চা শ্রমিকরা বলেন আমাদের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মালিক পক্ষ আমাদের প্রতি সদয় হবেন। আর যা-ই হউক আমরা যেন আমাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্তত ৩ বেলা পেঠ পুরো ভাত খেতে পারি। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর যেন এই নিশ্চয়তা পাই। গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর মালিকপক্ষের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়নের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন চুক্তিতে বাস্তবসম্মত মজুরি নির্ধারণসহ শ্রমিকদের নায্য সুযোগ-সুবিধার পথ প্রশস্ত হবে বলে শ্রমিকরা আশা করছেন।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী এবিষয়ে বলেন, চা শ্রমিকরা তাদের নায্য মজুরী ও উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর আগের চুক্তি শেষ হওয়ায় নতুন করে মজুরী নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমাদের দাবী ২৩০টাকা। আর উৎসব ভাতা ২মাসের মজুরী সমমানের টাকা।আশা করি মার্চের দিকে নতুন চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। চা শিল্পের উন্নতির লক্ষে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের জীবন জীবীকারও মান উন্নয়নের প্রয়োজন। আমরা সবসময় এমন দাবী করে আসছি। মালিক পক্ষ এমনটি আমলে না নিলে ব্যহত হবে বিকাশমান এ শিল্পের অগ্রযাত্রা।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com