ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ মানুষের উপর থুথু ছিটান, বলেন কেউ যাতে চিকিৎসা না পায়- অ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, বলেছেন জুলাই বিপ্লবের সময় পাখির মত মানুষ গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের অনেকেই পঙ্গু হাসপাতলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই পঙ্গু হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান। ভেতরে ডুকার সময় সেখানে সমস্ত মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেতরে ডুকে আর্তনাদ,অসুস্থ, পঙ্গু, গুলি বিদ্ধ মানুষের উপর থুথু ছিটানো হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সদের বলা হয়েছে কেউ যাতে চিকিৎসা না পায়। আমরা এমন একটি কালো অধ্যায় পেরিয়েএসেছি। ওখানে যাদের সাথে এরকম আচরণ করেছে তারাসহ কর্তব্যররত ডাক্তার ও নার্সরা সাক্ষি দিতে যায়নি। টেলিফোনে যখন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মরণনাস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা কর। সে রেকর্ড এখন আমাদের হাতে আছে। তার ফরেন্সি রিপোর্টে এসেছে এটি তার কণ্ঠ। আমরা সেই বিচার করতে গিয়ে কলঙ্কের দায়ভার নেব না। নেব না বলেই আমরা বিচার উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রকিয়ায় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সে বিচার প্রক্রিয়ায় যদি কেউ বাঁধা হয়ে দাড়ায় সেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় যদি কেউ গোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। আমরা তাদেকও আইনের আওতায় এনে জনসম্মুখে ন্যায় বিচারের চেষ্টা করবো। এটা আমাদের প্রত্যয় ও অঙ্গীকার।
তিনি সোমবার ৩০ জুন বিকেল ৫টায় মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পুলিশ বাদী হয়ে ৬০ লক্ষ ভূয়া ও মিথ্যা মামলা করেছে। সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে ক্রসফায়ার করেছে। ৭ শত মানুষকে গুম করেছে। আইনের শাসনকে নৎসাৎ করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে স্থায়ী রুপ দেওয়ার স্বপ্ন বুনে তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্ঠা চালানো হয়েছিলো। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে একটি স্বচ্ছ কাটামোর রুপ দেওয়া হয়েছিল। সে স্বপ্ন কে বাংলাদেশের জুডিসেয়ারিকে ইন্টেলেকচুয়্যাল করাপশনের মাধ্যমে তা হত্যা করা হয়েছে। সে হত্যা কান্ডের মহা ভিলেন ছিলেন বাংলাদেশের জুডিশেয়ারির কুলাঙ্গার চিপ জাসস্টিজ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে। মানুষের ভোধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রতি অবিচারের বীজ বপন করা হয়েছে। খুনের রাজনীতি চালু হয়েছে। এই ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের বিপক্ষে জনতা তার রায় প্রদান মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কখনো মানুষের হ্রদয়ের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয় না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের জন্য ১৭ বছর ফ্যাসিষ্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই রায়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হরণের কারণে মানুষকে রাজ পথে নামতে হয়েছে। রাজপথের সেই লড়াই সংগ্রামের পথ ধরে আমরা হারিয়েছি প্রায় ৭ শত সহকর্মীকে। যারা গুমের শিকার হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার সহকর্মী হারিয়েছি। যাদেরকে বলা হয় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য গত ১৭ বছরের প্রায় ৬০ লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে গায়েবি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার অধিকাংশেরই বাদী ছিলো পুলিশ। আমরা জুলাই বিপ্লবের বর্ষ পূর্তিতে গর্বের সাথে জানাতে চাই গত ১১ মাসে বাংলাদেশে একটিও গুম হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে ১টিও মামলা করেনি। জুলাই বিপ্লবে প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়েছে। ৩০ হাজার মানুষ পুঙ্গু হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুগ্ধের লাশের পোষ্টমাটাম না করে কি ভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তার প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরাই এবিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়েরা জজ মোঃ খাদেম উল কায়েস, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ এনায়েত কবির সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এম,কে,এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন,পিপি এডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী, জিপি এডভোকেট মামুনুর রশিদ।
স্পেশাল পিপি এডভোকেট বকশী জুবায়ের আহমদের সঞ্চলানায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, এডভোকেট সুনীল কুমার দাস, এডভোকেট নিয়ামুল হক, এডভোকেট আব্দুল ওয়াহিদ প্রমুখ।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ফলক উম্মোচন করেন।
জেলা ও দায়রা জজ মোঃ খাদেম উল কায়েস বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ এনায়েত কবির সরকার, পুলিশ সুপার, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য বাংলাদেশ বার এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন সহ অন্যন্যরা।
মন্তব্য করুন