চা বাগানে চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা উৎপাদন : যক্ষ্মাসহ নানা রোগ জীবানু সংক্রমিত হওয়ার আশংকা

September 14, 2019,

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের সরকারী চা বাগান নিউ সমনবাগ ও দেওরাছড়া চা বাগানেই চলছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে চা উৎপাদন। নতুন চায়ের সাথে মেশানো হয় বর্জ্য চা। এতে চায়ের মাধ্যমে যক্ষ্মাসহ নানা কঠিন রোগের জীবানু সংক্রমিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যেকোন সময় জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কারখানায় নেই বাংলাদেশ চা বোর্ড ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন নজরদারী।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি চা বাগান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বড়লেখার নিউ সমনবাগ, পাথারিয়া ও কমলগঞ্জের দেওরাছড়া চা বাগান। এরমধ্যে পাথারিয়া চা বাগানের কারখানায় আধুনিক  মেশিনারিজের মাধ্যমে চা উৎপাদিত হলেও সেখানেও পুরোপুরি স্বাস্থ্য সম্মত পদ্ধতিতে চা উৎপাদন হতে দেখা যায়নি। এসব চা বাগানের কারখানায় মার্চের প্রথম থেকে জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চা উৎপাদনের কাজ চলে। একেকটি কারখানায় প্রতিদিন ২ থেকে ৫ মে. টন পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়ে থাকে। বড়লেখার নিউ সমনবাগ ও কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া চা বাগানের কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে এবং বর্জ্য চা মিশিয়ে চা উৎপাদন হচ্ছে।

সরেজমিনে নিউ সমনবাগ চা বাগানের চা কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, চা ম্যানুফেকচারীং কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা গ্লাবস, এপ্রোন ও মাথায় ক্যাপ ছাড়াই নগ্ন পায়ে ও খালি হাতে কাজ করছে। অপরিচ্ছন্ন ফ্লোরে উৎপাদিত চা ফেলে রাখা হয়েছে। পাশেই রয়েছে বর্জ্য চা। যা অনেক আগেই বিনষ্ট করার কথা। এর উপর দেদারছে খালি পায়ে শ্রমিক ও স্টাফরা চলাফেরা করছে। এতে পায়ে লেগে থাকা ময়লা এবং শরীর ঝরে পড়া ঘাম উৎপাদিত চায়ের সাথে মিশছে। প্রাকৃতিক কাজকর্ম সেরে পুণরায় চা উৎপাদন কাজেও লেগে যাচ্ছে।  

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘চা’ খাবার দ্রব্যের মধ্যেই পড়ে। এ পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের অবশ্যই  মেডিকেল ফিটনেস থাকতে হবে। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে চা উৎপাদন করলে চায়ের মাধ্যমে নানা সংক্রামক রোগ ব্যাধি ছড়াতে পারে। যা ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁিকর কারণ হতে পারে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহজাহান কবীর জানান, চা পাতা বয়েল্ড করে খাওয়ায় সাধারণত জীবানুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও পুরোপুরি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশেই তা উৎপাদন করতে হবে। শ্রমিকদের ফিজিক্যাল ফিটনেস ও সে যক্ষাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগব্যাধী মুক্ত এবং উৎপাদিত পন্য স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ কি না তা বাগান কর্র্র্তৃপক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে।

নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী খান জানান, এ চা কারখানাটি একশ বছরের পুরনো। এটি আধুনিক কোন ফ্যাক্টরী নয় তাই বাস্তবতা ও নিয়ম কানুন ভিন্ন। ফ্যাক্টরী শ্রমিকদের জুতা, গ্লাস, ক্যাপ ও এপ্রোন সবই আছে কিন্তু তারা গরমে তা পরতে চায় না। এজন্য এভাবেই চা উৎপাদন কাজ চলে আসছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com