প্রতিনিয়ত বে-দেখল হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বড়লেখায় বনাঞ্চল রক্ষায় উদাসীনতা মাধবকু- ইকোপার্কে পদায়ন হয়নি স্টাফ

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখায় বনাঞ্চল রক্ষায় উদাসীন বনবিভাগ। ১০ হাজার একরের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান ভুমি ও বনজ সম্পদ দেখভাল করছেন মাত্র ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী ! জনবল সংকটে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল উজাড় ও বে-দখল হচ্ছে বনভুমি। মাধবকু-কে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোপার্ক ঘোষণা করার ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও বনবিভাগ সেখানে আজও পদায়ন করেনি কোন লোকবল। ফলে ইকোপার্কের ভুমি দখল করে প্রভাবশালীরা বাড়ি-ঘর তৈরী ও বাণিজ্যিকভাবে ফলফলাদির বাগান করেছে। এসব দখলদারদের উচ্ছেদে বনবিভাগের নেই কোন তৎপরতা।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বড়লেখা রেঞ্জের আওতায় উপজেলায় তিনটি বনবিট রয়েছে। নিউ সমনবাগ বনবিটের মোট এরিয়া ১৮০০ একর। এখানে একজন ফরেস্টার, ৩ জন ফরেস্ট গার্ড ও ১ জন বাগান মালি থাকার কথা। কিন্তু এ বনবিটে নেই কোন ফরেস্টার। কর্মরত ৩ ফরেস্ট গার্ডের মধ্যে গত ৩ মাস ধরে ১ জন বিট কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। নেই কোন বাগান মালি। ফলে প্রায়ই চোরকারবারীরা সেগুন বাগানে হানা দিয়ে নিয়ে যায় লাখ লাখ টাকার সেগুন গাছ। উজাড় হচ্ছে অন্যান্য প্রজাতির গাছ ও বাঁশ।
বড়লেখা (কেছরীগুল) বনবিটের মোট এরিয়া ৪৪৯০ একর। এ বনবিটে ১ জন ফরেস্টার, ৩ জন ফরেস্ট গার্ড ও ২ জন বাগান মালি থাকার কথা। কিন্তু দেড় বছর ধরে বিশাল বনজ সম্পদ রক্ষায় মাত্র ১ জন ফরেস্ট গার্ড। তিনিই ফরেস্টার, ফরেস্ট গার্ড ও বাগান মালি। এ বনবিটে চোরাকারবারী মোকাবেলায় নেই কোন অস্ত্র। এ বিটের বনভুমি দখল করে শতাধিক ব্যক্তি বসবাস করছে। নিত্য নতুন কৌশলে গাছচোররা উজাড় করছে সেগুনসহ অন্যান্য প্রজাতির গাছপালা। বনে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ।
মাধবছড়া বনবিটের মোট এরিয়া ৩২০০ একর। এ বনবিটে কর্মরত ৩ জন ফরেস্ট গার্ড, ১ জন বাগান মালি ও ১ জন বাংলোর চৌকিদার। এ বিটে নেই কোন ফরেস্টার। সদর রেঞ্জের সহযোগী কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বিট অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০১ সালের ২২ এপ্রিল তৎকালিন বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাজেদা চৌধুরী মাধবকু-ের সংরক্ষিত ও একোয়ার্ড ফরেস্টের ৫০০ একর ভুমি নিয়ে ইকোপার্কের ঘোষণা দেন। প্রায় ১৯ বছর আগে মাধবকু-কে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হলেও চলিত বছর মাধবকু- ইকোপার্কের সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি হয়। মাধবকু- ইকোপার্ক থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করলেও বনবিভাগ আজও সেখানে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী পদায়ন করেনি। ফলে বনজ সম্পদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষন ছাড়াও প্রায়ই নানা অব্যবস্থাপনায় দুরদুরান্তের পর্যটকরা বিড়ম্বনার শিকার হন। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ইকোপার্কের ভুমি দখল করে তৈরী করেছে বাড়িঘর ও বাণিজ্যিক ফলফলাদির বাগান।
সদর রেঞ্জে সাড়ে ৩ বছর ধরে শূন্য রয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা, আদলতের মামলা পরিচালনাকারী কর্মকর্তা ও ৪ জন বনপ্রহরীর পদ। জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক বড়লেখায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মাত্র দুইজন কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে চলছে বড়লেখা রেঞ্জ কার্যালয়ের তাবদ কাজকর্ম।
উপজেলা এসএফপিসি নার্সারীতের নেই কোন ফরেস্টার। একজন বাগান মালি দিয়েই চলছে নার্সারীর যাবতীয় কার্যক্রম।
বড়লেখা রেঞ্জ অফিসের সহযোগী কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস জানান, মাধবকু- ইকোপার্কে জনবল পদায়ন করা না হলেও সংলগ্ন মাধবছড়া বিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। অবৈধ ভুমি দখলদারদের তালিকা উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়।
মন্তব্য করুন