কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে নদী তীরবর্তী গ্রাম

August 14, 2021,

শংকর দুলাল দেব॥ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় নদী তীরবর্তী প্রায় ২৫টি গ্রামের বাড়িঘর হুমকির সম্মুখীন। নদীটি সিলেটের বালাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মধ্যবর্তী হওয়ায় প্রশাসনের অভিযান হলেই তারা ড্রেজার সহ ওপারে চলে যায়। ফলে তাদের ধরা সম্ভব হয়না। এ দুই উপজেলার মধ্য দিয়ে চলা কুশিয়ারা নদীর বালু চোর ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে চলছে এমন লোকচুরি খেলা। রাজনগর উপজেলা প্রশাসন গভীর রাতে গিয়েও ধরতে পারছেনা তাদের। এদিকে বালু চোরেরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোহাই দিলেও পাউবো এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ফলে দিনদিন রাজনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার হাজারো বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
জানাযায়, মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের নামে পাউবোর একটি চুক্তি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। দীর্ঘ দিন থেকে পাউবোর একটি চুক্তিকে পূঁজি করে বালু উত্তোলন করলেও পাউবো’র কোন তৎপরতাই দেখা যাচ্ছে না। রাজনগর উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যে ধরতে পারলেও অধিকাংশ সময় বালু উত্তোলনকারীরা নদীর ওপারে বালাগঞ্জ উপজেলার দিকে ড্রেজার সরিয়ে নেয়। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। এতে উভয় উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী প্রায় ২৫টি গ্রামের সহ¯্রাধিক বাড়িঘর কুশিয়ারা নদীতে বিলীন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ারা তীরবর্তী শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ায় ভূমিহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
আরো জানাযায়, শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের মাঠি ভরাটের জন্য মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে পান্নি উন্নয়ন বোর্ডেও একটি চুক্তি ছিল। কিন্তু এই কার্যক্রমের জন্য নিয়মিত তদারকি করতে নাপারায় সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে তা স্থগিত করে পাউবো। এরপর এই চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়। কিন্তু বালু চোর চক্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে ভূয়া পত্র তৈরি করে অবিরাম বালু তুলছে। ১০ আগস্ট বালু তুলার সময় উপজেলা সহকারী কমশিনার (ভূমি) ঊর্মি রায় অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর এলাকার লিটন মিয়াকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর পরদিন থেকে আবারো বালু উত্তোলন শুরু করে সে।
গত ১২ আগষ্ট বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজনগর উপজেলার ইউএনও প্রিয়াংকা পাল ও এসিল্যান্ড ঊর্মি রায় রাজনগর থানার পুলিশ ফোর্স নিয়ে অভিযান চালান। খবর পেয়ে বালু চোরচক্র ড্রেজার নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলার দিকে সরে যায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, বালু চোরেরা বিভিন্ন বাজার ও পয়েন্টে তাদের লোক বসিয়ে রাখে। উপজেলা প্রশাসন যে সময়ই অভিযান চালাক না কেন- দ্রুত খবরটি তাদের কাছে পৌছে যায়। ফলে দ্রুত তারা ড্রেজার মেশিনটি সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তারা বলেন, রাজনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সমন্বয় করে অভিযান না চালালে এরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লিটন মিয়ার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দীন আহমদ বলেন, আমি এর সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমি এ বিষয়ে সদর থানায় জিডি করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান অবৈধ বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে বলেন, কুশিয়ারা নদী থেকে বালু তুলা হচ্ছে বলে আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে আমাদের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। শর্ত নামানায় মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের সাথে পাউবো’র চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, ৪ দিন আগে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আবারো বালু তুলার খবর পেয়ে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু আমরা যাওয়ার আগেই বালু চোরেরা খবর পেয়ে ড্রেজার সহ বালাগঞ্জ উপজেরার অংশে চলে যায়। তবে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com