দুই দশক পর মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
ইমাদ উদ দীন॥ দীর্ঘ ২০ বছর পর সম্মেলন শেষে ২৭ সদস্যের মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। নতুন ওই জেলা কমিটির অনুমোদনে উৎফুল্ল জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা।
জানা যায় ২৩ এপ্রিল মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন সম্পন্ন হয়। শহরের পৌর জনমিলন কেন্দ্রের ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান রনির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনির সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য মির্জা আজম, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যন আজিজুর রহমান,জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ,সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ। দীর্ঘ দিন পরে হওয়া ওই সম্মেলনে উজ্জ্বীবিত ছিলেন নেতাকর্মীরা। ২৪ এপ্রিল সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুকে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদিত দলীয় প্যাডে কেন্দ্রীয় সভাপতি এস আর সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত নতুন জেলা কমিটি ভাইরাল হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা হওয়ার তারা কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। আর এরই সাথে নতুন জেলা কমিটিকেও অভিনন্দনও জানাচ্ছেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা রাখছেন ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম সম্মেলন শেষে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা আনন্দিত। কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদীত এক বছর মেয়াদী ওই নতুন কমিটির সভাপতি হলেন আমিরুল হোসেন চৌধুরী। রয়েছেন ১৩জন সহ-সভাপতি। এরা হলেন শেখ সামাদ, আখতার উদ্দিন, হাসান আহমেদ তারেক, মো: তানভীর আহমেদ শিপু, মাজহারুল ইসলাম রাব্বী, ফয়ছল মনসুর, অমিত রায়, সাইদুর রহমান মনি, জাকির হোসেন পান্না, সিদ্দিকুর রহমান ফজলে নূর, হুমায়ুন রশিদ রাজী, শেখ মো: মোর্শেদ জাহান মাসুম, সুমন আহমেদ। সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সুজল, মেহের হোসাইন জাকির, টিকলু চন্দ্র কর, আব্দুল্লাহ আল শাম্মু। সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন মো: রাসেল আহমদ, তানভীর চৌধুরী রবিন, আব্দুর রউফ, সাকিবুল হাসান রাজিব, তুষার মোনায়েম। প্রচার সম্পাদক মো: বেলাল হোসেন। উপ-প্রচার সম্পাদক মেহদী হাসান কবির ও রিফাত আহমদ। জানা যায়, অভ্যরীণ কোন্দলে ১৯৯৮ সাল থেকে ২২ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়নি। এ দীর্ঘ সময়ে কেন্দ্র কমিটির মনোনীতরাই কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেও ব্যর্থ হয়েছেন। এতে করে ছাত্রলীগ থেকে এ জেলায় মেধাবী নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছিলনা। সম্মেলন না হওয়াতে পদ-পদবি প্রত্যাশী সংগঠনের ত্যাগি ও মেধাবী নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। জানা যায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে উপরোক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত ছাত্রনেতাদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের ব্যবস্থা করবে। এ আলোকে বিগত ২০ বছরে মৌলভীবাজারে ২০টি জেলা কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৩টি। এ দীর্ঘ সময়ে অনেক মেধাবীরা সংগঠন থেকে ঝরে পড়েছেন। এনিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। জানা যায় ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে আসাদুজ্জামান রনিকে সভাপতি এবং সাইফুর রহমান রনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অপর চারজন হলেন সহ-সভাপতি সৈয়দা সাবরিনা শারমিন ও সাজ্জাদুর রহমান রাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকের আহম্মেদ অপু ও সৌদ আল সুফিয়ান সাগর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই শেষে হয় এই কমিটির মেয়াদ। কিন্তু বরা বরের মত ওই কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়। জেলা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে মবশ্বির আলীকে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের একটি কমিটি অনুমোদন দেন। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটিতে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। এরপর মো. জাকারিয়াকে সভাপতি, হোসেন ওয়াহিদ সৈকতকে সাধারণ সম্পাদক ও জুবায়ের আহমদ তপুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের একটি কমিটি অনুমোদন দেয়। তখন এই কমিটি মেনে না নিয়ে বাতিলের জন্য একটি গ্রুপ জেলা সদরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তিন সদস্যের কমিটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি অনুমোদন দিলেও ছাত্রলীগের কার্যক্রম গতিশীল হয়নি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি চলমান কমিটির কার্যক্রম বাতিল করে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিকসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। জেলা আওয়ামী লীগের তিন বলয়ের সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয় করে এ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলেও তারাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়। তবে নতুন ওই কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর উৎফুল্ল নেতাকর্মীরা। সাবেক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন নতুন কমিটি অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ধীরে ধীরে পূরণ করবে। এখন থেকে যেন সম্মেলনের এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে এমনটিই কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবী তাদের।



মন্তব্য করুন