দক্ষ শ্রমিকের অভাবে গড়ে উঠছেনা শিল্প প্রতিষ্ঠান : প্রয়োজন কারিগরি প্রশিক্ষণের

May 1, 2018,

হোসাইন আহমদ॥ প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্থানীয় দক্ষ শ্রমিকদের অভাবে শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন ধরনের বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, দু-একটা গড়ে উঠলেও বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিক এনে এখানে খাটাতে হয়। বাহির থেকে আসা শ্রমিকদের বাসস্থান সংকটের অভাবে রাতারাতি স্থান বদলান তারা। ফলে অনেকটাই লোকসানের সম্মুখিন হয় গড়ে উঠা শিল্প কারখানা। এভাবে আলোর মুখ দেখার আগেই মৌলভীবাজারে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বড় অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে মালিক পক্ষকে। অনেকেই এখন ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়ে ঘোরছেন। আবার কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান বন্ধন করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজারের ৯৫ শতাংশেরই বেশি শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। যার কারণে তাদের দিয়ে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজম্যান্ট ও কারিগরি কাজ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও ভাষাগত দক্ষতা ও কারিগরি কাজ না জানার অভাবে ভালো জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ভারত, পাকিস্থানসহ অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা নিজেদের কারিগরি যোগ্যতা দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করছেন এবং তাদের দেশে ভালো রেমিটেন্সও পাঠাতে পারছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে মৌলভীবাজরের বেশির ভাগ শ্রমিকরা তাদের অধিনস্থ হয়ে কাজ করছেন। একারণে তাদের আয়ও হচ্ছে অন্যদেশের শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম।
এবিষয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা সৌদিআরব প্রবাসী কয়ছর আহমেদ বলেন, “ভাষাগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে আমাদের দেশের শ্রমিকরা ভালো বেতন পায়না। অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের অধিনস্থ হয়ে কাজ করতে হয়। অনেকেই আবার কাজ না পেয়ে বেকার থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত প্রবাসী মাওলানা জহির উদ্দিন বলেন, এখানে সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই। যে ভালো কাজ জানে এবং কথা বলতে পারে সেই ভালো চাকুরি পায়। কাতার প্রবাসী মিছবাহ উদ্দিন বলেন, যে দেশে কাজে আসতে চান সেই দেশের ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
বিনিয়োগে ও উৎপাদনের কাঙ্খিত পথে দেশকে এগিয়ে নিতে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে এক সাথে ১০টি ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন করেন। তার মধ্যে
জানা যায়, সিলেট বিভাগের মিলনস্থল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫০ একর জায়গার উপর শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের কাজ চলছে। শুরু হওয়ার পর যেখানে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। যার ফলে স্থানীয়দের বেকারত্ব অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু এজেলায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিকের অভাব থাকায় এ উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হবে এ শংষ্কায় আছেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা।
মৌলভীবাজার জেলা ক্যাবের সভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক মোঃ আবু তাহের বলেন, বিশ্ব শ্রমবাজার মৌলভীবাজার বাসীর জন্য অনেক সম্ভাবনা। কিন্তু এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আগে প্রয়োজন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা এবং স্থানীয় ভাবে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিকের প্রয়োজন।
দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন বলেন, শ্রমিকের পাশাপাশি উদ্যোগতার ও প্রয়োজন। এখানে বড় কোনো শিল্প কারখানা না থাকার কারণে দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠছে না।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ আহসানুর রহমান বলেন, কারিগরি ক্ষেত্রে এজেলার শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ ১৫-১৮ শতাংশ। তারা ইউরোপ যেতে চায় কিন্তু প্রশিক্ষণ না নিয়ে চলে যায়। কারিগরি শিক্ষায় তাদের আগ্রহ কম।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com