ময়লা ফেলা নিষেধ, প্রস্রাব করা নিষেধ
সাদেক আহমেদ :
[প্রথম দৃশ্য: সময়: রাতের প্রথম প্রহর]
[একটি গলির মাথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে আকাশ ও পথিক। ওদের বিপরীতে এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা- আর্বজনা। দেয়ালে একটি ছোট বোর্ড লাগানো আছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ’প্রস্রাব করা নিষেধ] পথিক]
অথচ ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার গত ১৬ বছরের দুঃশাসনে সীমালংঘন, ওভারটেইক হয়েছে বেশি এ নিয়ে কোন সাংবাবিক (সাংঘাতিক), মাসোয়ারা সাংবাবিক সত্য কে চেপে মিথ্যা দিয়ে চেপে বলত টিকটিকির মত সব আছে ঠিক, কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক ছিল না। ভারতের ‘র’ বাংলাদেশের কপালে কথিত আমেরিকার সায় আছে বলে লাগিয়ে ছিল আমেরিকার টিকা রাতে কেটেকুটে সব নষ্ট করত ইঁদুর আর চিকা, বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়াকালীন দেখতাম দেয়ালে লিখত যারা তাদের দেখে আমরা বলতাম ধর চিকা মার চিকা চিকার দাম পাঁচচিকা।
আকাশ: প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। চল এখান থেকে।
পথিক: আরে যাবি কোথায়? এখানেই দাঁড়া।
আকাশ: দেখছিস না কতো ময়লা, কত প্রস্রাবের দুর্গন্ধ। চল অন্য কোথাও গিয়ে দাঁড়াই।
পথিক: যেখানেই যাবি সেখানেই তুই দুর্গন্ধ পাবি। ঢাকা শহরটাই একটা ডাস্টবিন, দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। তুই এতো চিন্তা করছিস কেন দোস্ত? দুর্গন্ধ তো আমাদের সয়ে গেছে।
আকাশ: হ্যাঁ তা তুই ঠিকই বলেছিস কিন্তু দেখেছিস এখানে লেখা আছে ‘ময়লা ফেলা নিষেধ’। অথচ তা দেখে যেন মানুষ আরো বেশি উৎসাহ পাচ্ছে।
পথিক: আর মহোৎসবে আরো বেশি ময়লা ফেলছে।
আকাশ: আসলে মানুষকে যা না করতে বলা হয় তাই তারা বেশি করে আর যা করতে বলা হয় তা মোটেই করতে চায় না।
পথিক: ঠিক। নিষিদ্ধ ও নেগেটিভ কাজের প্রতি মানুষের উৎসাহ বেশি।
আকাশ: তবে তা যখন অতিরঞ্জিত হয় তখন একটা ভয় থেকেই যায়।
পথিক: কীসের ভয়?
আকাশ: শাস্তির। সীমালংঘন করলে প্রকৃতি যেমন শাস্তি দেয় তেমনি অতিউৎসাহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
পথিক: কিন্তু দৃষ্টান্ত থেকে মানুষ কমই ধিক্ষা নেয়।
আকাশ: ইতিহাস থেকেও তাই।
পথিক: দেখ ময়লাগুলো কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
[পলিথিনের ব্যাগে সদাইসহ এক মধ্যবয়সী নারীর প্রবেশ]
নারী: আর বলো না বাবা। মানুষ যে কেমন করে এতো নোংরা হতে পারে।
আকাশ: কেমন করে আন্টি!
নারী: নিষেধ করা সত্ত্বেও দেখো এখানে ময়লা ফেলছে। এমন অবস্থা করেছে যে দেখে মনে হয় আমরা ময়লার উপর বাস করছি। তাই কি করছি না?
আকাশ: হ্যাঁ তাই তো করছেন।
নারী: তাহলে এবার বলো-যদি ময়লার উপরই বাস করছি তবে নোংরা হওয়ার কি কিছু বাকি আছে?
আকাশ: না নেই।
পথিক: (ময়লা সংলগ্ন বাড়িটির দিকে আঙুলের ইশারা করে) আন্টি কি এ বাড়িতেই থাকেন।
নারী: হ্যাঁ।
পথিক: তবে আপনিই বা কেমন দায়িত্ব পালন করছেন? ময়লাতো আপনার পাশের বাড়ির লোকেরাই ফেলে।
নারী: না, না। এখানে ময়লা ফেলে দূরের লোকেরা। ময়লার পোটলা হাতে করে নিয়ে এমনভাবে হেঁটে যায় যেন বাজার নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুরোটাই ওদের বাহানা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখবে কেউ আছে কিনা। তারপর পোটলাটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ওদের যে কি ভানরে বাপু। তা যদি তোমরা দেখতে।
আকাশ:আন্টি, আমরা দেখেছি আশেপাশের বাড়িগুলো থেকেও এখানে ময়লা ফেলে।
নারী: কী আর করা যাবেরে বাপু। মানুষ মানুষের ভালো চায় না।(প্রস্থান)
দ্বিতীয় দৃশ্য
[আকাশ ও পথিক যে বিল্ডিংয়ের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশের বাড়ি থেকে টাক মাথাওয়ালা এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন। তার হাতে ময়লার ঝুড়ি। আকাশ ও রাশেদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে ঝুড়ি থেকে ময়লা ঢাললেন। লোকটি চলে যেতে উদ্যত হল, এ অবস্থায় আকাশ ডাকল]
আকাশ: এই যে আংকেল। (লোকটি অপ্রস্তুত হয়ে আকাশ ও পথিকের দিকে তাকালো) কাজটা কি ঠিক হলো?
লোক: মানে?
আকাশ: এই যে আপনি এখানে ময়লা ফেললেন তাও আপনার বাড়ির সামনে। প্রস্রাব করলেন। এটা কি কলিকাতার গড়ের মাঠ পেয়েছেন
লোক: তাতে কী হয়েছে?
পথিক: কী হয়েছে মানে। এ ময়লা বাতাস দূষিত করছে এবং প্রস্রাব এর দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। আর তা আপনারা যারা আশেপাশে বসবাস করছেন সকলেরই ক্ষতি করছে।
আকাশ: আর সাইনবোর্ডে কী লেখা আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছেন।
লোক: হয়েছে হয়েছে। তোমরা কারা? যাও এখান থেকে। জ্ঞান দিতে এসেছে! (হাঁটতে থাকবে)
পথিক: আমরা এলাকার ছেলে আংকেল। আপনার ভাতিজা। (না শোনার ভান করে প্রস্থান)
আকাশ: দেখলি একেই বলে ‘সত্য তিক্ত’।
পথিক: হ্যাঁ আমি তো দেখলাম। তবে এ দৃশ্যটা এ বাড়ির আন্টির দেখার প্রয়োজন ছিল।
আকাশ: উনি দূরের লোকদের দোষটা দেখতে পেয়েছেন কিন্তু কাছের লোকদের মনোভাব অনুভবও করেননি।
[একজন যুবক ময়লার স্তৃপের পাশেই দেয়ালে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল। তা দেখে পথিক মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো]
আকাশ: কী রে হাসছিস কেন?
পথিক: ঐ দেখ। (যুবকের প্রস্থান)
আকাশ: ব্যাপারটি এদিক দিয়ে দুঃখের যে এতবড় মানুষ কীভাবে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে।
[আরেকটি যুবকের প্রবেশ। সেও দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলো]
আকাশ: দোস্ত জানিস কুকুর কখন সাবালক হয়?
পথিক: নাহ। জানি না তো। কখন হয়রে?
আকাশ : যখন থেকে সে এক পা তুলে প্রস্রাব করতে পারে। কখনো দেয়ালে, কখনো গাছের গোড়ায়।
আকাশ ও পথিক: (একসঙ্গে) হা হা হা…
[ফরমাল ড্রেসে একজন মধ্যবয়স্ক লোকের প্রবেশ। তিনিও প্রস্রাব করলেন তবে বসে। প্রস্থান]
পথিক: আমার মনে হচ্ছে এটা একটা প্রস্রাবখানা হয়ে গেছে। এখানে একটা সাইনর্বোর্ড টানিয়ে দিলে ভালো হতো। লেখা থাকবে ‘গণপ্রস্রাবখানা’। বিনা টাকায় ১ নম্বর সারুন।
আকাশ: মন্দ বলিসনি। কিন্তু যেখানে মানুষ ময়লা ফেলতে দ্বিধা করে না সেখানে প্রস্রাব করাটা দোষের কিছু নয়
পথিক: আর এখন গলির রাস্তাগুলোতে ড্রেনও নেই। পথচারীদের এছাড়া আর কীইবা করার আছে।
আকাশ: অবশ্য এ বাড়ির বাড়িওয়ালা ইচ্ছা করলে আরেকটি সাইনর্বোড টানাতে পারেন। ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’।
পথিক: যাতে করে মানুষ এ কর্মটি করার জন্য আরো বেশি উৎসাহ পায়।
[হাসতে হাসতে দুজনেরই প্রস্থান]
তৃতীয় দৃশ্য !! রাত !! আন্টির বাসা !!
[আন্টি, আকাশ ও পথিকের প্রবেশ]
আন্টি: (এক পোটলা ময়লা পথিকের হাতে দিতে চাইল পথিক নিলনা) এই নে। ময়লাটা পাশের বিল্ডিংয়ের সামনে ফেলে দিস।
পথিক: কেন আন্টি! আপনারা গাঁড়িতে ময়লা দেন না?
আন্টি: দেই। ময়লার গাড়ি আসে দুই তিনদিন পরপর পরশুদিন আসবে। ততক্ষণে পুরোঘর দুর্গন্ধে ভরে যাবে। এগুলো মাছের উচ্ছিষ্ট।
আকাশ: এখানে তো ময়লা ফেলা নিষেধ। সমস্যা নেই আন্টি। আমরা ভূঁইয়াঝিলের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসবো।
আন্টি: আরে না। তোরা হেঁটে যেতে থাকবি। হঠাৎ পোটলাটা
দেয়ালের পাশে ছুঁড়ে দিবি।
আকাশ: ঐদিন ঐ বাড়ির বাড়িওয়ালির সাথে আলাপ হলো। উনি তার বাড়ির সামনে ময়লা ফেলা নিয়ে ভীষণ বিরক্ত।
আন্টি: আরে ও একটা ঝগরাটে মহিলা। ওর কথা কখনো কানে নিবিনা। এত রাত্রে চারতলা থেকে নিচে নামতে হবে বলে তোদেরকে বললাম। আমার শরীরটাও তেমন ভালো যাচ্ছে না।
পথিক: আহ্ আন্টি কী যে বলেন! এই যে আমরা গেলাম। চল আকাশ।
আকাশ: হ্যাঁ, চল-চল।
[সকলের প্রস্থান]
চতুর্থ দৃশ্য
[‘ময়লা ফেলা নিষেধ’ সাইনর্বোডটির পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে
আকাশ ও পথিক]
আকাশ: এটা তুই কী করলি? এখানেই ময়লাটা ফেলে দিলি?
পথিক: না ফেলে করবো কী। এত রাতে এ ময়লার পোটলা নিয়ে ভূঁইয়া ঝিল যাব?
আকাশ: আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমরাই কি নিয়ম ভঙ্গ করলাম না?
পথিক: করলাম। সবাই করে। শুধু তুই আর আমি ঠিক হলে কিছুই হবে না। এসব নিয়ম বেশির ভাগ মানুষই মানে না।
আকাশ: দোস্ত, শ্লোগান আছে না ‘বদলে যান, বদলে দিন’ আগে নিজেকে বদলাতে হবে। আর কাউকে না কাউকে তো শুরুটা করতেই হবে। আমরাই না হয় শুরু করলাম।
পথিক: ঠিক আছে। এখন থেকে আর এ ভুল করবো না। প্রমিজ!
আকাশ : আয় হাতে হাত রেখে শপথ করি।
[দুজন একসাথে গেয়ে উঠবে]
বদলে যাবো বদলে দেবো
মেঘের দিকে হাত বাড়াবো
বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে দেবো
সকল অনিয়ম
আয়রে তরুণ আয়রে কিশোর, আয়রে জুলাই ছাত্র যোদ্ধারা নিয়ে নতুন দম। ভারত আর বলতে পারবেনা, খেলতে পারবেনা দম মার দম। তাই আর বন্ধ করতে পারবেনা বাংলাদেশের দম, “ইনশাআল্লাহ”



মন্তব্য করুন