মৌলভীবাজারের ডলি কানাডার বিরোধী দলীয় ডেপুটি হুইপ

ইমাদ উদ দীন॥ কানাডার অন্টারিওর প্রাদেশিক সংসদে বিরোধী দলীয় ডেপুটি হুইপ হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) ডলি বেগম। ডলি বেগম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুরমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনা গ্রামের কৃতিসন্তান। তিনি প্রাদেশিক পরিষদে অফিসিয়াল বিরোধী দল এনডিপির ‘আর্লি লানিং অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার ক্রিটিক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তিনি বিরোধী দলীয় ডেপুটি হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কানাডায় এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনৈতিক এই ধরনের দায়িত্ব পেলেন। ডলি বেগমই কানাডার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইতিহাস গড়েছিলেন। কনজারভেটিভ প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ডের গণবিরোধী নানা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে খোলামেলো বক্তব্য রেখে ডলি বেগম অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন। অন্টারিওর পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ডলি বেগম। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী বংশদ্ভোত যিনি কানাডার জনগণের বিপুল ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কানাডার প্রাদেশিক নির্বাচনে এমপিপি (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। ২০১৮ সালের ৭জুন ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। কানাডা প্রবাসী জেলার বড়লেখা উপজেলার আজিমগঞ্জ সালদিঘা বড়বাড়ির বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, মো: আশরফ তানিম ও মো: আরিফ তায়েফ বলেন ডলির বিনয়ী স্বভাব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দল ও কমিউনিটির প্রতি তার উদার আন্তরিকতা তাকে যেমন নির্বাচনে বিজয়ী করেছে। তেমনি সংসদে বিরোধী দলীয় ডেপুটি হুইপ হিসেবে নিয়োগ পেতে সহায়তা করেছে। যা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। তার ধারাবাহিক এমন সফলতায় সে দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। এতে প্রবাসে থাকা নতুন প্রজন্ম সে দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে উৎসাহবোধ করবেন।
আগামীতে কানাডার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের অবস্থান আরো শক্ত হবে। ডলি বেগম কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট নির্বাচনে টরেন্টো এলাকার স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে এমপিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে তিনি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) এর মনোনয়নে নির্বাচন করেন। এর আগে কোনো বাঙালী কানাডার নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের বাজরাকোনা গ্রামের সন্তান ডলি বেগম। তার দাদা মো: সোনা মিয়া। তিনি মনুমুখ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সুজন মিয়ার নাতনী (ভাগ্নার) মেয়ে। ডলির বাবা মো: রাজা মিয়া ৩ ভাইয়ের মধ্যে মেঝ। ডলির বড় চাচা মো: বাদশা মিয়া স্বপরিবারে লন্ডনে থাকেন। আর ছোট চাচা দেশে থাকেন। তার নানা বাড়ি রাজনগর উপজেলার হরিনাচংগ্রামে। ডলি বেগম রাজা মিয়া ও জবা বেগম দম্পত্তির বড় সন্তান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ডলি বেগম বড়। তার ছোট ভাই মহসিন আহমদ। ১৯৯৮ সালে ডলি তার বাবা মার সাথে কানাডায় পাড়ি জমান। অবশ্য তার বাবা এর আগে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ডলি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ উচ্চ বিদ্যালয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়ণরত থাকা অবস্থায় প্রবাস জীবনে চলে যান। সেখানে কানাডার গর্ডন এ ব্রাউন মিডল স্কুল ও ডব্লিউ এ পোর্টার কলিজিয়েট ইনস্টিটিউট কৃত্বিত্তের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো (সেন্ট জর্জ) থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড প্লানিং বিষয়ে মাস্টার্স করেন। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন ডলি। তিনি স্কুল জীবন থেকে নানা বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বলতে গেলে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাই ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণেও নিবেদীত হন। এবং অতি অল্প সময়ে সবার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিকেলে মুঠোফোনে ডলি বেগমের দাদা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুজন মিয়া ও তার চাচা পল্লীবিদ্যুতের ডাইরেক্টর আব্দুস শহীদ জানান তার একের পর এক রাজনৈতিক সফলতায় আমরা আনন্দিত। সে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। ডলির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই তার এই সফলতা যেন অব্যাহত থাকে।
মন্তব্য করুন