বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মনুনদী থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে : হুমকির মুখে এলাকাবাসী

September 19, 2019,

হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলখুড়া ইউনিয়নের আমুয়া, চাঁনপুর, শেওয়াইজুরী ও সুমারাই তীরবর্তী মনুনদী থেকে প্রতিনিয়ত সেলু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি অবগত করলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী চক্র সম্পূর্ণ আইন লঙ্গন করে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

নীতিমালার ৯নং কলামে রয়েছে ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ফেরীঘাট, হাটবাজার, চা-বাগান, নদীরবাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। ১০নং কলামে বলা হয়েছে পাম্প বা ড্রেজিং কিংবা ড্রেজিং কার্যক্রমে বাঙ্কহেড বা প্রচলিত ভলগেট ব্যবহার করা যাবেনা। কিন্তু এগুলো কিছুই মানছেন না ইজারাধাররা। প্রকাশে তারা এগুলো ব্যবহার করেই বালু তোলছেন।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় ইজারাদার এবং তার সহযোগীরা। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ইতি মধ্যে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও জেলা প্রশাসক বরাবর অবেদন করা হয়েছে। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় মঙ্গলবার ফের আমুয়া গ্রামবাসী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। এলাকাবাসী বলেন, এবার বন্ধ না হলে তারা হাই কোর্টে রিট করবেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার আমুয়া গ্রামের দু’পাশে মনুনদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ। নদী তীরবর্তী বাড়ি ঘর সুরক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতি মধ্যে পাথর দিয়ে বাধ নির্মাণ করে। কিন্তু ওই স্থানে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় পুরো এলাকা নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এক টানা বালু উত্তোলন করায় প্রচুর শব্দ দূষণ হয়। বিশেষ করে শব্দ দূষণে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক দুর্ভোগের স্বীকার হতে হচ্ছে। আমুয়ার বেকামুড়া ও পালপুর ঘাট ইজারা নিয়েছেন বেকামুড়া গ্রামের মনাই উল্লাহ। তার সহযোগীতায় রয়েছে এছাআব আলী। উভয়ই ক্ষমতাসীল দলের কর্মী। সুমারাই এলাকা থেকে বাল উত্তোলন করছেন মনসুর।

এদিকে ২১ জুলাই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা জেলা প্রশাসক বরারব একটি আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী সরেজমিন তদন্ত করে দেখেন যে, ওই জায়গা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে যে কোনো সময় মনুনদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম যে কোনো সময় নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে। প্রতিবেদনে তারা বালু উত্তোলন বন্ধের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার পরেও অদৃশ্য কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, ইতি মধ্যে চানপুরের এলেমান মিয়া, হরেকৃঞ্চ, উমর মিয়া, কছয়র মিয়া, দরবেশ মিয়া, আলাই মিয়া, লক্ষণ সরকার, হর কুমার বর্মন, শ্রী কান্ত সরকার, মনাই মিয়া, উপেন্ড, জুতি সরকার, দূর্গা সরকার ও নিরঞ্জণ সরকার সহ প্রায় ৩০/৩৫টি পরিবারর নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ওই পরিবার গুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

সদর উপজেলার আখাইকুড়া ইউপি আ’লীগের সহ-সভাপতি মসুদ খান বলেন, ইজারাদাররা সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছে। ফলে মসজিদ, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ইজারাদার মনাই উল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন, কারো ক্ষতি করে আমি বালু উত্তোলন করিনি। সরকারি নীতিমালা অনুসর করে বালু উত্তোলন করছি।

এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এমন অভিযোগ পেলে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com