সরকার স্বীকৃত কওমি শিক্ষা বোর্ডের দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার ফলাফলে মৌলভীবাজার পিছিয়ে

December 20, 2020,

স্টাফ রিপোর্টার॥ সরকার স্বীকৃত বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমুহের শিক্ষা বোর্ড ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে কওমি মাদরাসাসমুহের দাওরায়ে হাদিসের (মাস্টার্স সমমান) এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফলে অন্যান্য বছরের মতো এবারও পিছিয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা।

তবে জেলায় শীর্ষে রয়েছে বরেণ্য মনিষী, কুতুবে দাওরান শায়খ মাওলানা লুৎফুর রহমান বর্ণভীর (রাহ.) হাতেগড়া বহুমুখী প্রতিষ্ঠান জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর, বরুণা টাইটেল মাদরাসা এবং জেলার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান জামেয়া ইসলামিয়া রায়পুর, মামরকপুর  টাইটেল মাদরাসা। বরুণা মাদরাসার  মো  মোবারক হোসাইন ও ইসমাইল হোসেন এবং রায়পুর মাদরাসা নুর হোসাইন দুলাল ও মো. আবুল হাছান মোমতাজ (এ প্লাস) পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হামিদনগর বরুণায় অবস্থিত ‘জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা টাইটেল মাদরাসা’ থেকে ২০২০ সালের তাকমিল ফিল হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ২৫ জন। তন্মধ্যে মোমতাজ (এ প্লাস) পেয়েছেন ২ জন, জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়েছেন ১০ জন , জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ১২ জন এবং রাসিব (অকৃতকার্য) হয়েছেন ১ জন। মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ‘জামেয়া ইসলামিয়া রায়পুর, টাইটেল  মাদরাসা’ থেকে ১৪৪১ হিজরি সনের দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ১৬ জন। তন্মধ্যে মোমতাজ (এ প্লাস) পেয়েছেন ২ জন, জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়েছেন ৪ জন, জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ৬ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি জন ৪ জন। মৌলভীবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্রাচীনতম মাদরাসা ‘আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম টাইটেল মাদরাসা’ থেকে এ বছর তাকমিল ফিল হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ১৭জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৪ জন। তন্মধ্যে জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়েছেন ৪, জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ৮ জন, রাসিব (অকৃতকার্য) হয়েছেন ২ জন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ৩ জন। জেলা শহরের প্রাচীনতম আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া দ্বীনিয়া টাইটেল মাদরাসা’  থেকে এবার তাকমিল ফিল হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৩ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২ জন। তন্মধ্যে জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ২ জন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ১ জন। মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল রোডে (কুদালীপুল) অবস্থিত ‘জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া টাইটেল মাদরাসায়’ এ বছর দাওরায়ে হাদিস জামাতে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থ ছিলেন। তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়ে পাশ করেছেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান রোডে অবস্থিত ‘জামেয়া ইসলামিয়া টাইটেল মাদরাসায়  মাদরাসা’ থেকে ২০২০ সালের দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৩২ জন। তন্মধ্যে জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়েছেন ৩ জন, জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ৮ জন, মাকবুল (তৃতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ১৩ জন, রাসিব (অকৃতকার্য) হয়েছেন ৬ জন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ৩ জন।  মৌলভীবাজার সদরে অবস্থিত ‘আনোয়ারা বেগম মহিলা টাইটেল মাদরাসা’ থেকে ১৪৪১ হিজরি সনের দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৮ জন। তন্মধ্যে জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) পেয়েছেন ১ জন, জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ২ জন, মাকবুল (তৃতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ৩ জন, রাসিব (অকৃতকার্য) হয়েছেন ১ জন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ১ জন। মৌলভীবাজার জগন্নাথপুরে অবস্থিত ‘খাতুনে জান্নাত মহিলা টাইটেল মাদরাসা’ থেকে ২০২০ সালের দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ২৪ জন। তন্মধ্যে জায়্যিদ (দ্বিতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ৮ জন, মাকবুল (তৃতীয় বিভাগ) পেয়েছেন ১০ জন, রাসিব (অকৃতকার্য) হয়েছেন ৩ জন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি ২ জন।

এছাড়া মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, রাজনগর, জুড়ি, কুলাউড়া এবং কমলগঞ্জ উপজেলার টাইটেল মাদরাসাগুলো পাশের হারসহ সার্বিক ফলাফলের দিক দিয়ে এবারও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার ফলাফলে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার টাইটেল মাদরাসাগুলোর ধ্বস নেমেছে। অন্যান্য বছরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কাম্য মানের ফলাফল করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

ফলাফলে পিছিয়ে থাকার কারণ ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরব ভার্চুয়াল মাধ্যম। মৌলভীবাজার শহরের জামেয়া আরাবিয়ার তরুণ শিক্ষক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মিসবাহ ফেসবুকে এক মন্তব্যে লিখেন-সবাই নিজেরদের চিন্তায় বিভোর। নেই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা এক জাগায় কাফিয়া, অন্য জাগায় মিশকাত শরিফ, কে দেখবে এসব! কওমি মাদরাসা পড়ুয়া জামিল নামের এক তরুণ মন্তব্যে বলেন-অমাদের  মৌলভীবাজারে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, কে দাওরা পর্যন্ত মাদরাাসার পরিচালক হতে পারে।আর এই কারনে মেধাবী ছাত্রদের যথাযথ মেধা কাজে না লাগায় তারা ঢাকা বা অন্যান্য মাদরাসায় যেতে বাধ্য। তরুণ আলেম ও সমাজচিন্তক মুফতি জিয়াউর রহমান মন্তব্যে লিখেন-আমি মৌলভীবাজার দুইবছর শিক্ষকতা করে বুঝতে পেরেছি এখানে কওমি মাদরাসাগুলোর সীমাবদ্ধতা, মাসলাকি দুর্বলতার অনেক কারণ নিহিত রয়েছে। মৌলভীবাজার দারুল উলুম টাইটেল মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস,সিলেটের রেঙ্গা মাদরাসার মুহাদ্দিস, মাওলানা আহমদ কবির খলীল মন্তব্যে লিখেন-এ কারণেই মৌলভীবাজার ছেড়ে আসা ভালো হয়েছে।

মদীনা ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত, জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগ ঢাকা থেকে তাকমিল সম্পন্নকারী আলেম, মৌলভীবাজারের মাওলানা মাহফুজ আহমদ তার ফেসবুকে লিখেন-বিগত বৎসরগুলোতেও ফলাফলে মৌলভীবাজার জেলা পিছিয়ে ছিল। সবসময় পিছিয়ে থাকা যেনো এক রোগ হয়ে আছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে,-একটি জরিপ চালিয়ে দেখা গছে বেশ কিছু মাদরাসা পরিচালিত হচ্ছে জি কমিটি এবং অদক্ষ, অযোগ্য মুহতামিম দ্বারা। এছাড়াও যোগ্যদের অবমুল্যায়ন বড় একটি কারণ। জানান-আরো আবাক হবেন  মৌলভীবাজার জেলার একটি দাওরায়ে হাদিস মাদরাসায় প্রাইমারী লেভেল পড়ুয়া একজন সাধারণ পাবলিক মুঈনে মুহতামিমের পদ দখল করে আছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে কাম্য মানের ফলাফলের আশা করা যায় কেমনে? সদ্যপ্রয়াত বরুণার পীর আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান হামিদীর (রাহ.) বড়পুত্র, বরুণা টাইটেল মাদরাসার সদরে নায়েবে মুহতামিম মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী ফেসুকে লিখেন-মৌলভীবাজার জেলার মেধাবীরা ঢাকামুখি। ছাত্র থেকে টাইটেল ক্লাস বেশি। এছাড়া রয়েছে আরও অনেক সীমাবদ্ধতা।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com