মুজিববর্ষে ১১০ ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার কুলাউড়ায় গৃহনির্মাণ কাজ ঘুরে দেখলেন জেলা প্রশাসক

December 29, 2020,

মাহফুজ শাকিল॥ মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিসহ ঘর পাবেন এমন স্বপ্ন দেখছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১১০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মানুষ। আগামী জানুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবে প্রতিফলিত হবে।

“আশ্রয়নের অগ্রাধিকার শেখ হাসিনার উপহার” মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারকে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের মাধ্যমে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গৃহনির্মাণ কর্মকান্ড মঙ্গলবার ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে ঘুরে দেখলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এসময় তিনি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দপুরে নির্মিত ১২টি ঘরের কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি ইউএনও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপকারভোগীদের সাথে কথা বলেন।

এসময় জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সাথে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজরাতুন নাঈম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী, রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামালসহ স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ।

উপজেলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তালিকাভুক্ত ৪৪০ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ১১০ ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার। উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে ৪টি, জয়চন্ডীতে ৫টি, রাউৎগাঁওয়ে ১২টি, টিলাগাঁওয়ে ১৫টি, পৃথিমপাশায় ৩৫টি, শরীফপুরে ৩০টি ও হাজিপুরে ৯টি ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছে এই ঘর। এর আগে কুলাউড়ায় ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপকারভোগী নির্বাচন, গৃহনির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে গত ১২ নভেম্বর উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যদের সাথে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

সরেজমিন ঘরের কাজ দেখতে গেলে কথা হয় কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে। জহির আলী (৭০)। তাঁর বাড়ি উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে। সহায় সম্বলহীন জহির আলী কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর বাজারে ডিম বিক্রি করে পরিবার চালান। ঘরবাড়ি না থাকায় তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। একই গ্রামের শ্রমিক ধীরেন্দ্র মালাকার (৬৫)। ৪০ বছর থেকে তিনি স্থানীয় রসেন্দ্র মালাকারের বাড়িতে বসবাস করছেন। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে সীমা মল্লিক (২৫) কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে এনজিও সংস্থা সূচনা প্রকল্পে কাজ করছে আরেক মেয়ে পূর্ণিমা রাণী মল্লিক (১৯) কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। খাতেবুন বেগম (৫০) নামের আরেক মহিলা প্রায় ৩০ বছর থেকে স্থানীয় চেরাগ আলীর বাড়িতে ১ মেয়েকে নিয়ে দুঃখে-কষ্টে বসবাস করছেন। কিন্তুু মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাদের সকলের ভাগ্যে বদল হয়েছে। সবাই পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে একটি পরিপূর্ণ পাকা ঘর। সেই ঘরে তারা সকলেই আগামী জানুয়ারী মাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উঠবেন সেই স্বপ্নে এখন বিভোর তারা। স্বপ্নের নতুন ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শেখের বেটি (শেখ হাসিনা) কারণে আমরা নতুন ঘর পাচ্ছি। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি একটি পাকা ঘর পাবো। কিন্তুু শেখের বেটির কারণে আমাদের সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলাম এখন আমরা নিজেদের বাড়িতে উঠবো। সেটা আমাদের কাছে একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। শেখের বেটির কারণে এখন মরার আগেও কিছুদিন শান্তিতে বাঁচতে পারবো।

এদিকে রাউৎগাঁওয়ে গৃহনির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক বেণু মল্লিক ও রজব উল্লাহ বলেন, করোনায় কোন কাজ না থাকায় আমরা বেকার হয়ে পড়ি। কিন্তুু প্রধানমন্ত্রীর জন্য গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়ায় আমরা কাজের সুযোগ পেয়েছি। আমাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা উপকৃত হয়েছি।

পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এই প্রতিবেদককে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গিকারের ভিত্তিতে মৌলভীবাজারে যাদের ঘর নেই জমিও নেই এরকম ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জন্য ১১২৬ টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। তারমধ্যে কুলাউড়ায় ১১০টি ঘর রয়েছে। কাজের মান ও কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিন এসেছি। উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করা, সর্বোচ্চ পেশাদ্বারিত্ব ও আন্তরিকতা দিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। স্থানীয় উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জেনেছি তাঁরা এই ঘর পেয়ে খুবই সন্তোষ্ট ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কুলাউড়ায় প্রাথমিকভাবে ১১০ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উপকারভোগীদের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com