রাজনগরে নিরীহ দুটি পরিবারকে ফাঁসাতে মরিয়া প্রতিপক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের রাজনগরে নিরীহ দুটি পরিবারকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এক দাদন ব্যবসায়ী মহিলা। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এক শিশুর দাফন-কাফন সম্পন্ন করে নিরীহ ওই পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোঠা অঙ্কের টাকা দাবী করে ওই শিশুর মা শামিমা বেগম। পানিতে ডুবে মরে যাবার ঘটনাটি ছিল ১২/০৬/২০১৮ ইং তারিখ (মঙ্গলবার) ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭ মাসে আগে উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের হান্নান মিয়া ও শামীমা বেগম এর সাড়ে ৫ বছর বয়সী পুত্র সোহান আহমদ ইমাদ প্রতিদিনের মত খেলার সাথীর সাথে পুকুর পাড়ের নিকটবর্তী একটি নালার উপর নৌকাতে জাম খেতে খেতে উঠে। তাৎক্ষনিক নৌকায় নড়া-চড়া শুরু হলে সে নৌকা থেকে পড়ে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা খুজাখুজি করে ওই নালা থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এসময় খালের পাড়ে তার পায়ের জুতাও পাওয়া যায়। তাৎক্ষনিক পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। ওই দিন নিহতের বাবা আব্দুল হান্নান,মাতা শামিমা বেগম ও স¦জনরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিদুজ্জামান ছালিক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবিরকে জানিয়ে লাশ দাফন করেন।
বাড়ির নিকট আতœীয়রা জানিয়েছেন, লাশ দাফনের পরদিন শামীমা ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে একই উপজেলার ফতেপুর ইউপির শাহাপুর গ্রামে বাপের বাড়ি চলে যায়। সেখানে গিয়ে ভাই-বোনের প্ররোচনায় রাজনগর থানায় মিথ্যা মামলা করতে গেলে থানা ঘটনার সত্যতা না পেয়ে মামলা গ্রহন করেনি।
পরবর্তীতে শামীমা ১৮/০৬/২০১৮ ইং তারিখে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমল আদালতে একই বাড়ির আব্দুল মালিকসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে দুই পরিবারের মোট ৫জনকে আসামী করে একটি পিটিশন মোকদ্দমা দায়ের করে (মামলা নং-১৭৫)।
স্থানীয়রা জানান, শামীমা একজন দাদন ব্যবসায়ী ও টাকা লোভি মহিলা। তার বাপের বাড়ির তরফ থেকে বিবাদীদের ওই সময়ে জানানো হয়েছে মোটা অংকের টাকা দিলে বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়াবেনা। এদিকে মৌলভীবাজার আদালতের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, মোকদ্দমা লেখার সময় তিনি দেখেছেন তার চোখ থেকে একফুটো জল পর্যন্ত বেরিয়ে আসেনি।
মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজনগর থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম আদালতের আদেশে প্রথমে তদন্তে নামেন। এসময় তিনি ওই বাড়ির লোকজনসহ পুরো গ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তদন্ত করে ওই শিশুটি পানিতে পড়ে মারা গেছে বলে নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ময়না তদন্ত করে হাসপাতালের পক্ষ থেকে রিপোর্ট দেয়া হয়। রিপোর্টে বলা হয় “গলিত লাশ থাকার কারণে কোন মতামত দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা”। পরবর্তীতে এসআই জিয়াউল মৌলভীবাজার মডেল থানায় বদলি হওয়ায় থানার এসআই বিনয় ভূষন চক্রবর্তী বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করতে সরেজমিনে বের হন। এসআই বিনয় একাধিকবার সরেজমিনে তদন্ত করে পানিতে মরে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হন।
তদন্তকালে তিনি বাদীর মানিত স্বাক্ষীসহ ওই বাড়ির সবার জবানবন্দি নিয়ে পানিতে মরে যাবার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন তৈরিসহ হাসপাতালের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন। প্রতিবেদনে ওই শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে মর্মে উল্যেখ করেন। পরবর্তীতে গত ০৯/০১/২০১৯ ইং তারিখে বাদীনীর নারাজীর প্রেক্ষিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৪নং আমলী আদালত এফআইআর রুজু সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণের জন্য রাজনগর থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে ওই মামলার আসামী আব্দুল মালিক গংরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছেন। আব্দুল মালিক জানান, পানিতে পড়ে মারা যাওয়া শিশু নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে শামিমা বেগম দুই পরিবারের বৃদ্ধ মহিলাসহ ৫জন মানুষকে অহেতুক কষ্ট ও হয়রানীতে ফেলে দিছেন। লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বাদীনীর স্বাক্ষীসহ অন্যান্য স্বাক্ষীর জবানবন্দিতে ওই শিশুটি পানি পড়ে মারা গেছে বলা হয়েছে।






মন্তব্য করুন