বন্যহাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে সরকারের নতুন উদ্যোগ

September 9, 2025,

আব্দুর রব : পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা শেষ ৩টি ‘মা’ হাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য লাঠিটিলা বনে কাজ করতে চায় বন বিভাগ। গাজীপুর সাফারী পার্ক বা দেশের অন্য কোনো স্থান থেকে হাতি স্থানান্তরপূর্বক পুনর্বাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল পরিদর্শন করেছে।

প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয় থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠিত এ কমিটি ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ বনাঞ্চল পরিদর্শন করেছে।

এ সময়ে কমিটির সদস্যরা লাঠিটিলায় হাতি পুনর্বাসনের উপযোগিতা, বনাঞ্চলের অবকাঠামো, খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্ভাবনা যাচাই করেছেন।

বনাঞ্চল পরিদর্শণ ও স্থানীয় জনসাধারনের সাথে মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো: মোখলেছুর রহমান, হাতি বিশেষজ্ঞ ও আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো: আব্দুল  মোতালেব, বন্যপ্রাণি গবেষক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান সমি, আইইউসিএন বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোহাম্মদ সুলতান আহমেদ, বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ঢাকা সানাউল্লাহ পাটুয়ারী, কেন্দ্রীয় অঞ্চল বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আকন্দ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সিলেট বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আবুল কালাম, বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির প্রমুখ।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাঠিটিলা বনবিটের অধীনে ৫ হাজার ৬৩১ হেক্টর বনভূমি রয়েছে।  মৌলভীবাজারের ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিলেট বনবিভাগের জুড়ী ফরেস্ট রেঞ্জের লাঠিটিলা পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ। ২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিমাপ অনুযায়ী বর্তমানে সংরক্ষিত বনের আয়তন ৮০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে লাঠিটিলার আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার।

জুড়ীর লাঠিটিলা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ চার যুগ আগে ভারতের আসাম রাজ্য  থেকে আসা একদল বন্যহাতি বিচরণ করতো পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টে। দুই এক বছর আগেও পাথারিয়া বনে কখনও ৭টি আবার কথনও ৪টি হাতি দল বেঁধে বিচরণ করতো। মাঝে মধ্যে আসা-যাওয়া করতো ভারতের আসাম রাজ্যের কিছু জায়গায়। সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি হাতি ভারতের অংশে মারা যাওয়ায় বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩ টিতে দাঁড়িয়েছে। আর এই ৩ হাতিই মাদি। কোনো পুরুষ হাতি না থাকায় হাতির প্রজননও হচ্ছে না। সরকার বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে হয়তো পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টে হাতির বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব হবে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বন ও পরিবেশ কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এগুলো সবার সম্পদ। দেশের মধ্যে লাঠিটিলা বন একটি সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। আমরা বনটি হাতির জন্য কতটা উপযোগী তা সঠিকভাবে জরিপ করে দেখবো। যদি দেখা যায় হাতির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’

বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক, সানাউল্লাহ পাটুয়ারী বলেন, ‘সিলেটের এই অঞ্চলে হাতির আদিবসতি ছিল। এটি কেউ প্রত্যক্ষ করেছেন, আবার কেউ শোনেছেন। সরকার চায়, এই এলাকায় হাতিকে কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা নিশ্চিত করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাগজপত্র অনুযায়ী হাতির মালিক সিলেটেই সবচেয়ে বেশি, তাই এ অঞ্চলে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব। হাতি বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, যেন মানুষের সঙ্গে হাতির  কোনো সংঘাত না ঘটে এবং ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি এড়ানো যায়। এ বিষয়ে বন বিভাগ সচেতনভাবে পদক্ষেপ নেবে।’

বন্যপ্রািণ বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, হাতির স্বাভাবিক বসবাসের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকা জরুরি। এমন জায়গা না থাকলে হাতিকে বন্দী রাখা সম্ভব নয়। ‘হাতি স্বাভাবিকভাবেই জানে কোন জায়গা তাদের জন্য নিরাপদ। তবে ভারতের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে হাতির ওপর অত্যাচার অনেক কম।’

তিনিও আরও বলেন, ‘সরকার যদি হাতির প্রজনীগুলোকে আনে, তবে সরকারি ভূমিতে একটি বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হবে। সেখানে তাদের চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। মাহুতদের মাধ্যমে হাতির পরিচর্যা করা হবে। বিদেশে হাতিগুলোকে সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয়, কিন্তু আমাদের  দেশে এত বড় এলাকা বা এত হাতি নেই। তাই ছোট উদ্যোগে বন্যহাতির সঙ্গে মিশে কাজ করা হবে। হাতি অত্যন্ত স্মরণশক্তি সম্পন্ন প্রাণি; তারা গন্ধ শুঁকে তাদের বংশ বা গোষ্ঠি চিনতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কার হাতিগুলো একই বংশের।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com