ন্যায্য দাবিতে রাজপথে শিক্ষক: সরকারের দায়িত্বশীল ভুমিকা
বশির আহমদ : একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে জাতির আলোকবর্তিকা শিক্ষককে বারবার রাজপথে নেমে ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন করতে হয়, এটা কোনোভাবেই সম্মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
শিক্ষা একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি, আর শিক্ষকরা সেই শিক্ষার মেরুদণ্ড। সুতরাং, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতি গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষকদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা সরকারের একান্ত দায়িত্ব।
দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। বাড়িভাড়া ২০% বৃদ্ধি, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ৭৫% কর্মচারীদের উৎসব ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে তারা বারবার আবেদন জানিয়েছে; কিন্তু তা এখনও পূরণ হয়নি।
বরং ইতিহাস সাক্ষী, ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নামা শিক্ষককে পুলিশের মাধ্যমে অপমান করা হয়েছে, যা একটি সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়।
শিক্ষকরা বিলাসী জীবন চান না, তারা চান মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ন্যূনতম আর্থিক নিরাপত্তা।
শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য যেমন আধুনিক পাঠ্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন শিক্ষকদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক মর্যাদা।
এটা একমাত্র সম্ভব, বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগুলোকে জাতীয়করণের মাধ্যমে। এতে শিক্ষকদের আর্থিক বৈষম্য দূর হবে, শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসবে এবং শিক্ষার্থীরা সমমানের মানসম্পন্ন শিক্ষা পাবে।
বর্তমানে দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় আন্দোলনরত রয়েছেন। সরকারের প্রতি দাবি,শিক্ষকদের ন্যায্য সুবিধা প্রদান করা হোক।
দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সরকারকে দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছেন। তবু সরকার কেন এগিয়ে আসছেন না, তা বোধগম্য নয়।
আজ চার দিন যাবৎ সারা দেশে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
সরকারের দায়িত্ব, অতিসত্বর শিক্ষকদের দাবি মেনে তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কারণ, শিক্ষক যদি প্রেরণা হারান, জাতির মেরুদণ্ডও দুর্বল হয়ে পড়বে; আর মেরুদণ্ডহীন জাতি কখনো উন্নতির পথে এগোতে পারে না।
লেখক : বশির আহমদ, অধ্যক্ষ, উলুয়াইল ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, মৌলভীবাজার।



মন্তব্য করুন