হাকালুকি হাওরে মাছের মড়ক : নামমাত্র ঔষধ প্রয়োগ

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ দেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির জলাভুমি হাকালুকি হাওরে গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। মৎস্য বিভাগ বলেছে গরমের কারণে পানিতে একধরণের গ্যাসের সৃষ্ঠি হওয়ায় মাছের মড়ক দেখা দিয়েছে, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যবস্থা স্বরূপ বিশাল হাওরে মাত্র কয়েকশ’ কেজি জিও-প্রাইম ছিটিয়েই মৎস্য বিভাগ দায় সেরেছে বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর আগে ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হাওরের পানি থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন অতিবৃষ্ঠির কারণে উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বোরো ধান তলিয়ে পচে গিয়ে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় মাছের মড়ক ও পানি দুষণের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সব প্রজাতির মাছসহ জলজ উদ্ভিদ মারা যায়।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া ও সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হাকালুকি হাওরটি প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর এলাকায় বি¯তৃত। এ হাওরে ২৬৮টি ছোট-বড় জলমহাল রয়েছে। গত ১১ সেপ্টম্বর হাওরপারের বাসিন্দারা বিলের পানিতে নানা প্রজাতির মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখেন। তারা বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। মৎস্য বিভাগের লোকজন পরদিনই হাওরের কয়েকটি বিল ঘুরে ঘটনার সত্যতা পান। পানির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে গৌড়কুড়ি, চকিয়া, ধলিয়াসহ কয়েকটি বিলে ৬০০ কেজি জিওপ্রাইম ও টিমসেন প্রয়োগ করে মৎস্য বিভাগ।
এদিকে গত বুধবার বড়লেখা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) সুলতান মাহমুদ হাকালুকির বড়লেখা অংশের জল্লাবিল, ফারজল্লা বিল ও মালিজুড়ী বিলে ৬০০ কেজি জিওপ্রাইম ছিটিয়ে দিয়েছেন। এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন ও বিল ইজারাদাররা উপস্থিত ছিলেন।
২১ সেপ্টেম্বর শনিবার সরেজমিনে হাকালুকির বিভিন্ন বিল ঘুরে পানির ওপর রুই, গনিয়া, দেশিয় পুটি, টেংরা ও বাইন জাতীয় মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। হাল্লা ভিসিজি’র সভাপতি সুলেমান আহমদ ও মাইছলা বিলের ইজারাদার বেলাল আহমদ জানান, বালিজুড়ী বিলের আয়তন ১১০০ একর। মৎস্য বিভাগ এধরণের তিনটি বিলে মাত্র ৬০০ কেজি জিওপ্রাইম প্রয়োগ করেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ঔষধ প্রয়োগের পরদিনও তারা এ তিন বিলে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখেছেন। ব্যাপক হারে ঔষধ প্রয়োগ না করলে মাছের মড়ক রোধ করা অসম্ভব বলে তারা মন্তব্য করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, সম্প্রতি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পানির নিচের আগাছা পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরের বিভিন্ন বিলের কিছু কিছু মাছ মরে যায়। তবে তা ব্যাপক নয়। খবর পেয়েই তিনি বিভিন্ন বিলে জিওপ্রাইম প্রয়োগ করেছেন। পানি নেমে গেলে এ সমস্যা থাকবে না। এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। বরাদ্দ না থাকায় পর্যাপ্ত জিওপ্রাইম প্রয়োগ করা যায়নি। এব্যাপারে তিনি বিলের ইজারাদারদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মন্তব্য করুন