বড়হাটে নিহত ‘জঙ্গি নাজমুল, বাড়ি নোয়াখালী’ নাসিরপুরের ৭ নিহতের বাড়ি দিনাজপুরে : কোন পরিবার লাশ নেয়নি

এস এম উমেদ আলী॥ মৌলভীবাজারের পৌর এলাকার বড়হাটে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় নিহত তিন ‘জঙ্গি’র একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী একজনের লাশ শনাক্ত করে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি তাঁর ছেলে। নিহতের নাম আশরাফুল আলম নাজিম।
মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল দুপুর ১২টায় মনোয়ারা বেগম মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে তাঁর ছেলে নাজিমের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার কুমারঘড়িয়া থেকে হাসপাতালে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় দেউটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোতাহার হোসেন ও মোতাহার হোসেনের স্ত্রী পান্না বেগম।
তারা নাজিমকে শনাক্ত করেন। তবে বাকি দুজনের লাশ শনাক্ত করা হয়নি। ওই দুজনকে তাঁরা চিনেন না বলে জানান।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম লাশ তিনটি দেখে একটি শনাক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সেটা তাঁর ছেলে। তাঁর নাম আশরাফুল আলম নাজিম। কিন্তু বাকি দুটি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য ও তাঁর স্ত্রী এসেছিলেন। তাঁরাও জানিয়েছেন বাকিদের চেনেন না। তাঁরা ওই এলাকার বাসিন্দাও না। তাঁর মা লাশ গ্রহণে আপত্তি জানান। তিনি জানান, সে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। এমন ব্যক্তির লাশ তিনি গ্রহণ করবেন না।’
পরে মৌলভীবাজার মডেল থানায় নাজিমের মা মনোয়ারা বেগম জানান, তার ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে নাজিম ছোট। প্রায় ১২ বছর আগে নাজিমের বাবা সুলতান আহমদ মারা যান। ৭/৮ মাস পূর্বে নাজিম তার মাকে ফোনে কথা বলে ও জানায় ঢাকার একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে, সে ভাল আছে। মনোয়ারা বেগম আরো জানান তার মেয়ে নাজমা আক্তারকে বিয়ে দেয়া হয়। পর তার স্বামীর সাথে ডিফোজ হয়। গত এক মাস থেকে নাজমা নিখোঁজ রয়েছে।
জেলা পুলিশ কার্যালয়ে দূপুর সাড়ে ১২ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত এক প্রেস বিফিংএ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান মনোয়ারা বেগম তার ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। তবে তিনি তার লাশ গ্রহন করবেননা বলে জানান।
অপরদিকে দিনাজপুরের আবু বক্কর সিদ্দিক জানান গতবুধবার রাত ১২টার পর অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে, আমি রিভিস করলাম। তার নাতিন আমেনা কথাবলে ও পরে তার মেয়ে শিরিনা তার সাথে কথা বলে ক্ষমা চায়। পরে একই ফোনে তার মেয়ে শিরিনা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে এটি আমার তোমাদের সাথে শেষ কথা। আর দেখা বা কথা হবেনা। এটাই আমার শেষ কথা। আর দেখা হবে কিয়ামতে। মৌলভীবাজার মডেল থানায় সাংবাদিকদের কাছে একথাগুলো বলেন জঙ্গি শিরিনা আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক।
তিনি আরো জানান, লাশ দেখে তিনি চিনতে পারেননি। নাসিরপুরের বাড়িতে পাওয়া একটা গ্রুপ ছবি পুলিশ দেখালে মেয়ে-মেয়ের জামাই ও নাতিনদের তিনি সনাক্ত করেন।
আবু বক্কর জানান আগে থেকে ভাল-মন্ধ বুঝে ২০০২ সালে মেয়ে বিয়ে দেই লোকমানের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘর সংসার করে আসছে। আমার মেয়ের ঘড়ে ৫ জন নাতিন হয়েছে। হঠাৎ করে এমন অবস্থায় কেন গেল আমি বুজে উঠতে পারিনি। ২ মাস পূর্বে ১৪-১৫ বছর বয়সের আমার বড় নাতিন আমের বিয়ে হয় ঐ রাতে ফোনে জানায়।
আবু বক্কর সিদ্দিককে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকরা অনুরোধ জানান সাত জনের মধ্যে শিশুদের লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে নেয়ার জন্য। আবু বক্কর বলেন এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এ শত্রুর নেবার ইচ্ছা নয়, আমি ঘৃণা করি। আর এ লাশ নেয়া আমার জন্য লজ্জা হবে। আর এগুলো নিলে সেখানে কেউ গ্রহনও করবেনা।
আবু বক্কর সিদ্দিকের দেওয়া তথ্য মতে, তাঁর বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ শিরিনা আক্তার, তাঁর স্বামী লোকমান হোসেন, তাদের বড় মেয়ে আমেনা খাতুন, সুমাইয়া, মরিয়ম, ফাতেমা, খাতিজা। লোকমানের বাবা নুরুল আলম এবং দিনাজপুরের ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা নূর হোসেন।
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার নাসিরপুরের ‘জঙ্গি আস্তানা’ সাত নিহতের লাশ সনাক্ত করেছেন জঙ্গি শিরিনা আক্তারের বাবা ও লোকমান হোসেনের শশুর আবু বক্কর সিদ্দিক সোমবার ৩ এপ্রিল দূপূর সাড়ে ১২টায়।
সকাল পৌনে ১১টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পৌছান আবু বক্কর সিদ্দিক। তার সাথে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ও জঙ্গি লোকমানের ভায়েরা ভাই সানোয়ার হোসেন। দূপূর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে লাশ সনাক্তের পর কেঁদেকেঁদে বের হতে দেখা যায় আবু বক্কর সিদ্দিককে।
জেলা পুলিশ কার্যালয়ে ৩ এপ্রিল দূপুর ২ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত এক প্রেস বিফিংএ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান নিহতরা সবাই একই পরিবারের। লাশ সনাক্ত করেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে আসা নিহত শিরিনা আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। তবে তারা এ লাশ নিয়ে কলঙ্কের গ্লানি বহনকরতে চাননা বলে জানান।
পুলিশ সুপার নিহত ৭জনের মধ্যে ৪ শিশু রয়েছে, সে লাশ গুলো গ্রহনের জন্য পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ জানালে সে লাশ গুলো নিতে অপারগতা জানান।
সোয়টের ‘অপারেশন হিটব্যাক’ ও ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ অভিযান চলাকালে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্থানায় পাঁচ শিশু, এক নারী এক যুবক মারা যায়। অপর দিকে বড়হাটের জঙ্গি আস্থানায় এক নারী ও দুই যুবক মারা যায়। নাসির নগরের ৭ জনের লাশ পরিবার গ্রহন না করায় মঙ্গলবার রাতে পৌর এলাকার টিকরবাড়িতে দাফন করা হয়। বাড়ি দুটির মালিক লন্ডন প্রবাসি সাইফুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন